সার্ভে পার্ক থানার পুলিশকর্মীদের সঙ্গে অক্ষিতা সিংহরায়। মঙ্গলবার। নিজস্ব চিত্র
রাষ্ট্রীয় শোকের ছায়া। তবু জন্মদিন বলে কথা! তাই দশম শ্রেণির ছাত্রী অক্ষিতা সিংহরায়ের অনুরোধ ফেলতে পারেনি সার্ভে পার্ক থানার পুলিশ।
মঙ্গলবার এ শহরে পুলিশ দিবসের অনুষ্ঠান কার্যত বাতিল হলেও সদ্য কিশোরীর আবদারটুকু রাখতেই হল পুলিশকর্তাদের। কয়েক দিন আগে জন্মদিনে দাদু-দিদিমার কাছ থেকে টাকা পেয়ে গাঙ্গুলিবাগানের অক্ষিতা ভেবেছিল, তা দিয়ে কী করা যায়। ওই কিশোরীর কথায়, ‘‘এ বার তো বন্ধুদের ডাকাডাকি বন্ধ, বাইরে ঘুরতে গিয়ে মজা করাটাও হচ্ছে খুব সাবধানে। তখনই ভাবছিলাম, এই কোভিডের সময়ে সমাজের সেবায় যাঁরা কাজ করে যাচ্ছেন, তাঁদের জন্য কিছু করা যায় কি না!’’ ভাবতে ভাবতেই পুলিশের কথা মনে পড়ে অক্ষিতার। ওই কিশোরীর কথায়, ‘‘আমি তো রাস্তায় সার্জেন্টদের দেখতাম। টিভিতেও দেখেছি, কোনও গোলমালে সকলে ঘরে চলে গেলেও পুলিশই ভরসা। পুলিশকাকুরা রোদে-জলে ডিউটি করছেন।’’ এই ভাবনা থেকেই পুলিশকাকুদের উপহার দেওয়ার ভাবনা মাথায় আসে তার।
নিজের জন্মদিন চলে গিয়েছে কয়েক দিন আগেই। তাতে কী! পুলিশ দিবসের দিনেই পুলিশকাকুদের সঙ্গে জন্মদিনের আনন্দ ভাগ করে নিতে চেয়েছিল অক্ষিতা। আর তার এমন খেয়ালে মদত দিয়েছিলেন বাবা-মা সন্দীপ ও বহ্নি সিংহরায়ও। পশুপ্রেমী অক্ষিতার নামে দেশ-বিদেশের একাধিক চিড়িয়াখানায় মোট ১৪টি পশুপাখি দত্তক নেওয়া আছে। লকডাউনের সময়ে মেয়ের তাড়নায় ভিক্টোরিয়ার মাঠের কাছে ঘোড়ার গাড়ির অভুক্ত ঘোড়াদের খাবার জোগানোর কাজ করেছিলেন সন্দীপবাবুরা। এ বার তাই তাঁরা ঠিক করেন, তাঁদের পুরনো বাড়ি এলাকার সার্ভে পার্ক থানার পুলিশকর্মীদের সঙ্গেই মেয়ের জন্মদিনের আনন্দ ভাগ করে নেওয়া হোক।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ১ সেপ্টেম্বর দিনটিকে পুলিশ দিবস হিসেবে উদ্যাপনের জন্য বেছে নিয়েছিলেন। এই দিনেই অক্ষিতার আবদারে সাড়া দেন পুলিশ আধিকারিকেরা। ঘটনাচক্রে ২০১১ সালের এই দিনেই পথ চলা শুরু হয়েছিল সার্ভে পার্ক থানারও। তবে প্রাক্তন রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের প্রয়াণে পুলিশের সব অনুষ্ঠানই রাষ্ট্রীয় শোকের জন্য স্থগিত। সার্ভে পার্কের ওসি তীর্থঙ্কর দে বলছেন, ‘‘অক্ষিতার মতো একটা বাচ্চা মেয়ে যাতে কষ্ট না পায়, সেই খেয়াল আমরা রেখেছি। মেয়েটি এবং ওর মা-বাবা থানার সব কর্মীর জন্য খাবারের প্যাকেট তৈরি করিয়েছিলেন। তাতেই আমাদের টিফিন হয়েছে। আর মেয়েটি থানায় এলে ওকে আমরাও ছোটখাটো একটা উপহার দিয়েছি।’’
সব কিছু নিচু তারে বাঁধা থাকলেও পুলিশের সঙ্গে আগামীর প্রজন্মের সংযোগের উত্তাপটুকু গাঢ় হয়েই থাকল।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy