Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪
Hospital

কিশোরীকে সুস্থ করে নিজের পায়ে দাঁড় করাল এসএসকেএম

ভিন্ রাজ্যে ছুটেও সমস্যার সমাধান না হওয়ায় ভেঙে পড়েছিলেন চট্টোপাধ্যায় দম্পতি।

ইছাপুরের বাড়িতে সৃজিতা চট্টোপাধ্যায়।

ইছাপুরের বাড়িতে সৃজিতা চট্টোপাধ্যায়। নিজস্ব চিত্র

শান্তনু ঘোষ
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৯ জুন ২০২১ ০৬:৫৭
Share: Save:

হঠাৎ এক দিন লাল হতে শুরু করল দু’পায়ের আঙুল। ফুলে গেল পায়ের পাতার তলা। মাটিতে দাঁড়াতে গেলেই তীব্র যন্ত্রণা হত। কার্যত হাঁটাচলা বন্ধই হয়ে গিয়েছিল মাধ্যমিকে চতুর্দশ স্থানাধিকারী কিশোরীর।

একাদশ শ্রেণির পড়ুয়া সৃজিতা চট্টোপাধ্যায়ের পড়াশোনা প্রায় বন্ধই হতে বসেছিল। একমাত্র মেয়ের আচমকা এমন অবস্থায় বেজায় চিন্তায় পড়েছিলেন উত্তর ২৪ পরগনার ইছাপুরের বাসিন্দা, দেবকুমার চট্টোপাধ্যায় ও সুদীপ্তা চট্টোপাধ্যায়। মনে সংশয় ছিল, আবার হাঁটতে পারবে তো মেয়েটা!

ভিন্ রাজ্যে ছুটেও সমস্যার সমাধান না হওয়ায় ভেঙে পড়েছিলেন চট্টোপাধ্যায় দম্পতি। অবশেষে সৃজিতাকে ফের নিজের পায়ে দাঁড় করিয়ে হাঁটাচলায় সক্ষম করে তুলল এসএসকেএম হাসপাতাল। সুদীপ্তাদেবী জানালেন, ঘটনার সূত্রপাত ২০২০-র অক্টোবরে। মেয়ের দুই হাঁটু থেকে পায়ের পাতার নীচ পর্যন্ত যন্ত্রণা ও ফোলা ভাব না কমায় শহরের বেশ কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালে গিয়েছিলেন তাঁরা। স্নায়ুরোগ চিকিৎসকের কাছেও যান। কিন্তু সুরাহা না-হওয়ায় এ বছর সৃজিতাকে তাঁরা নিয়ে যান চেন্নাইয়ে। সেখানকার চিকিৎসকেরা জানিয়েছিলেন, ‘কমপ্লেক্স রিজিয়োনাল পেন সিন্ড্রোম’-এ আক্রান্ত ওই কিশোরী। লক্ষাধিক টাকা খরচ করে সেখানে অস্ত্রোপচারও হয়। সৃজিতার কথায়, ‘‘চেন্নাই থেকে ফিরে কুড়ি দিন মতো ভাল ছিলাম। তার পরে ফের একই রকম কষ্ট শুরু হল। তখন পিজি-তে যাই।’’

এসএসকেএমের ‘ফিজ়িক্যাল মেডিসিন অ্যান্ড রিহ্যাবিলিটেশন’ বিভাগের প্রধান চিকিৎসক রাজেশ প্রামাণিক জানাচ্ছেন, ওই কিশোরীকে পরীক্ষা করে বোঝা যায়, সে ‘টার্সাল টানেল সিন্ড্রোম’-এ আক্রান্ত। চিকিৎসকেরা জানান, গোড়ালির কিছুটা নীচে টানেলের মতো একটি অংশ থাকে। তার মধ্যে দিয়ে স্নায়ু, শিরা ও ধমনী যায়। ওই স্নায়ু পায়ের পাতার একেবারে নীচ দিয়ে গিয়ে আঙুলের কিছুটা উপরের দিকে যুক্ত হয়। আল্ট্রাসোনোগ্রাফিতে দেখা যায়, সৃজিতার টার্সাল টানেলের ভিতরে স্নায়ু ফুলে রয়েছে। সেই কারণেই হাঁটাচলায় বা মাটিতে পা ফেলতে সমস্যা হচ্ছে। প্রথমে সৃজিতার পায়ের ওই অংশে পরীক্ষামূলক ভাবে ‘ডায়াগনস্টিক ব্লক’ দেওয়া হয়। ৪৮ ঘণ্টা পরে ফের যন্ত্রণা শুরু হয়। চিকিৎসকেরা বলছেন, ‘‘ওই ব্লক ৪৮ ঘণ্টাই কাজ করবে। তার পরে যন্ত্রণা ফিরে আসে। তাতেই প্রমাণিত হয়, সমস্যাটি টার্সাল টানেলের।’’ এর পরে আল্ট্রাসোনোগ্রাফির মাধ্যমে সৃজিতার দুই টার্সাল টানেলে ফের ‘ব্লক’ দেওয়া হলেও পরে আর একটি অস্ত্রোপচারের পরামর্শ দেওয়া হয়।

রাজেশবাবু বলেন, ‘‘ভবিষ্যতেও যাতে সমস্যা না হয়, তার জন্য টার্সাল টানেলের উপরের কভার রেটিনাকুলাম-এ কিছু ফুটো করা হয়। তাতে ওই টানেলে আর চাপ পড়বে না। ফলে যন্ত্রণাও হবে না।’’ সেই অস্ত্রোপচারের পরে এখন সুস্থ ১৭ বছরের সৃজিতা। ছোট থেকে ভরতনাট্যম শিখলেও এখন তা বন্ধ রাখতে বলেছেন চিকিৎসকেরা। কেন?

রাজেশবাবু জানাচ্ছেন, ভরতনাট্যমে পায়ের ভঙ্গিমা রয়েছে। সেটি দীর্ঘদিন ধরে করার ফলেই সৃজিতার ওই সমস্যা দেখা দিয়েছিল। সময়ের সঙ্গে তা বেড়ে যায়। তাঁর কথায়, ‘‘সব খেলা যেমন সকলের জন্য নয়, সব রকম নাচও সকলের উপযুক্ত নয়। শারীরিক গঠনের উপরেই সব কিছু নির্ভর করে।’’

তবে নাচ বন্ধ হলেও শরীরের যন্ত্রণাকে জয় করে সৃজিতা এখন গাইছে, ‘আমার মুক্তি আলোয় আলোয় এই আকাশে’।

অন্য বিষয়গুলি:

Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy