আক্রান্ত: নিজেদের বাড়িতেই এই বৃদ্ধা, তাঁর মেয়ে ও নাতনির উপরে ভাড়াটে পরিবার চড়াও হয় বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র
মাটিতে পড়ে ‘হেল্প হেল্প’ চিৎকার করছেন এক মহিলা। তাঁর উপরে চেপে বসে চুলের মুঠি ধরে কিল, চড়, ঘুষি মারছেন অন্য এক মহিলা। পাশেই দাঁড়ানো বছর আশির এক বৃদ্ধা হাতজোড় করে বলে চলেছেন, ‘‘দয়া করে আমার মেয়েকে তোমরা মেরো না। থানায় যাও। যা বলার থানায় গিয়ে বলো। দয়া করে মেরো না।’’ কালীঘাট থানা এলাকার শম্ভুনাথ পণ্ডিত স্ট্রিটের একটি বাড়ির এমনই ভিডিয়ো ফুটেজ ছড়িয়ে পড়েছে সোশ্যাল মিডিয়ায়। অভিযোগ, শনিবার ওই বাড়ির মালিকের স্ত্রী এবং তাঁর বছর সতেরোর মেয়েকে ফেলে বেধড়ক মারধর করেছেন এক ভাড়াটের পরিবারের লোকজন। পোশাক ছিঁড়ে বাড়ি থেকে বার করে দেওয়ার পাশাপাশি ফিরে এলে ধর্ষণ করিয়ে দেওয়ার হুমকিও দেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। ওই অবস্থাতেই কালীঘাট থানায় গিয়ে লিখিত অভিযোগ করেন আক্রান্ত মহিলা এবং তাঁর মেয়ে। তাঁদের সঙ্গে থানায় যান নারী অধিকার রক্ষা আন্দোলনের কয়েক জন কর্মীও। কিন্তু পুলিশ অভিযোগ নিলেও রবিবার রাত পর্যন্ত কোনও ব্যবস্থাই নেওয়া হয়নি বলে দাবি।
অভিযোগকারিণী জানান, স্বামীর ওই তেতলা পৈতৃক বাড়ির একেবারে উপরের তলায় তাঁরা থাকেন। দোতলায় এক ভাড়াটে পরিবারের বাস। একতলায় যিনি ভাড়া থাকতেন তিনি বেশ কয়েক বছর হল বাড়িছাড়া। তিনি সেই জায়গায় এক আত্মীয়কে বসিয়ে রেখে গিয়েছেন বলে বাড়ির মালিকের দাবি। শনিবারের ঝামেলা তাঁদের সঙ্গেই। অভিযোগকারিণীর কথায়, ‘‘বাড়ির যে জায়গা সকলের জন্য বরাদ্দ, সেখানে পুর অনুমোদন ছাড়াই নির্মাণ কাজ করছেন একতলার ওই বাসিন্দারা। নিষেধ করলে গালিগালাজ, মারধরের হুমকি লেগেই থাকত। জলের রিজার্ভার যে জায়গায়, সম্প্রতি সেখানকার দরজায় তালা ঝুলিয়ে দিয়েছেন ওঁরা। এটা কেন করা হয়েছে, বলতে যাওয়ায় সেপ্টেম্বরের ২ তারিখেও আমাদের ধাক্কা দেওয়া হয়েছিল। সে দিনই থানায় গিয়ে অভিযোগ করি। কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হয়নি।’’
ঝামেলা মেটাতে এর পরে পুলিশের তরফেই ১৪৪ ধারা জারি করার আবেদন করতে বলা হয় বলে ওই মহিলার দাবি। গত ২১ তারিখ সেই মতো ১৪৪ ধারা জারি করা হয় ওই বাড়িতে। শনিবার তার পরেও নীচে নির্মাণকাজ চালিয়ে যাওয়ার শব্দ শুনে তাঁরা বারণ করতে গিয়েছিলেন বলে অভিযোগকারিণীদের দাবি।যাঁদের বিরুদ্ধে অভিযোগ, একতলার ওই বাসিন্দারা জানান, ৪৯ বছর ধরে তাঁরা ওই বাড়িতে রয়েছেন। তাঁদের তুলে দেওয়ার জন্যই পরিকল্পনা করে বদনাম করা হচ্ছে। পুলিশের কাছে তাঁরা সমস্ত নথিপত্রও জমা করেছেন বলে দাবি। ওই পরিবারের অভিযুক্ত মহিলা রবিবার বলেন, ‘‘আমাদের উঠে যাওয়ার জন্য প্রথমে তিন লক্ষ টাকা দিতে চাওয়া হয়। কিন্তু যাওয়ার কোনও জায়গা নেই জানানোর পরে বাড়িতে একঘরে করে রাখা হয়েছে। ঘরের ছাদের অংশ খসে পড়লেও কোনও সংস্কার করতে দেওয়া হচ্ছে না। শনিবার আর মাথা ঠান্ডা রাখা যায়নি।’’
কালীঘাট থানার পুলিশ অবশ্য জানিয়েছে, অভিযুক্তদের থানায় ডেকে পাঠিয়ে কথা বলা হয়েছে। দু’পক্ষকেই বাড়ি সংক্রান্ত সমস্ত কাগজপত্র জমা করতে বলা হয়েছে। যদিও নারী অধিকার রক্ষা আন্দোলনের যে কর্মীরা থানায় গিয়েছিলেন তাঁদেরই এক জন, অধীশা সরকার বলেন, ‘‘বাড়ি নিয়ে বিবাদ তো অন্য প্রশ্ন, দুই মহিলাকে এ ভাবে মারধরের ভিডিয়ো দেখেও এখনও পর্যন্ত পুলিশ কিছু করল না কেন?’’ কালীঘাট থানার আধিকারিকের দাবি, যা করার আইন মেনেই করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy