ছবি সংগৃহীত।
অতিমারিতে সংক্রমিতদের চিকিৎসায় দিশা দেখাচ্ছে গার্ডেনরিচের দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সদর হাসপাতাল। গত এক মাসে রেলকর্মী ও তাঁদের পরিবারের সদস্যদের মধ্যে সংক্রমণের হার ক্রমশ বাড়ছে। কিন্তু তার মধ্যেও সতর্ক হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালের উপরে যাতে অতিরিক্ত চাপ পড়ে পরিকাঠামো ভেঙে না যায়, তাই রোগীদের অসুস্থতা দ্রুত নির্ণয় করে তাঁরা চিকিৎসার ব্যবস্থা করছেন তাঁরা।
উপসর্গ নিয়ে যে সব রোগী আসছেন, তাঁদের দ্রুত রোগ নির্ণয়েই সব চেয়ে বেশি জোর দেওয়া হয়েছে এই হাসপাতালে। আর তাতেই অনেকটা পরিস্থিতি সামলানো যাচ্ছে বলে জানিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। যেমন, করোনার পজ়িটিভ রিপোর্ট পেতে দেরি হওয়ার কারণে বহু রোগীর সময়ে চিকিৎসা শুরু হতে অহেতুক বিলম্ব হয়। অনেক ক্ষেত্রে পরীক্ষার রিপোর্টের জন্য ৩-৪ দিন অপেক্ষা করতে গিয়ে রোগীর শারীরিক অবস্থা অবনতি হয়। তখন বাড়িতে তাঁকে রেখে চিকিৎসা করা প্রায় অসম্ভব হয়ে পড়ছে। অথচ শয্যার সঙ্কট সর্বত্র। এই জায়গাতেই তাঁরা রোগীকে আসতে দিতে চাইছেন না। তাই সামান্য উপসর্গ থাকা রোগীদের ক্ষেত্রে সর্বোচ্চ এক দিন এবং গুরুতর অসুস্থ রোগীদের ক্ষেত্রে কয়েক ঘণ্টার মধ্যে আরটি পিসিআর রিপোর্ট পাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ।
কী ভাবে তা সম্ভব হচ্ছে ? গার্ডেনরিচের ওই হাসপাতালে একত্রে র্যাপিড অ্যান্টিজেন টেস্ট, আরটি পিসিআর ছাড়াও সিবিন্যাট (সিবিএনএএটি) পরীক্ষার ব্যবস্থা রয়েছে। র্যাপিড অ্যান্টিজেন পরীক্ষায় করোনা নির্ণয় না করা গেলে আরটি পিসিআর পরীক্ষা করা হচ্ছে। রোগীর অবস্থা গুরুতর হলে সিবিন্যাট পরীক্ষা করে কয়েক ঘণ্টায় ফলাফল নিশ্চিত করা হচ্ছে।
যে সব রোগীর উপসর্গ তুলনামূলক ভাবে কম, তাঁদের বাড়িতে রেখে চিকিৎসার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। তবে একই সঙ্গে তাঁদের জন্য পালস্ অক্সিমিটারের ব্যবস্থা করছেন কর্তৃপক্ষ। হাসপাতালে থাকলে তা সঙ্গে সঙ্গে রোগীকে দেওয়া হচ্ছে। না থাকলে বাজার থেকে কেনার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। কী ভাবে শরীরে অক্সিজেনের মাত্রা পরীক্ষা করতে হবে, তা-ও রোগী বা তাঁর পরিবারের লোকজনদের হাতেকলমে দেখিয়ে দিচ্ছেন কর্তব্যরত চিকিৎসকেরা।
ওই হাসপাতালের মেডিক্যাল ডিরেক্টর অশ্বিনীকুমার মলহোত্র বলেন, “আমরা রোগীদের জন্য দু’ধরনের হেল্পলাইন নম্বরের ব্যবস্থা করেছি। একটি ফোনে তুলনায় কম অসুস্থ রোগীদের স্বাস্থ্য এবং তাঁদের ওষুধ-পথ্য সম্পর্কে পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। অন্য হেল্পলাইন নম্বরে ফোন করে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রোগীদের শারীরিক অবস্থা সম্পর্কে জানতে পারছেন আত্মীয় পরিজনেরা।”
দক্ষিণ-পূর্ব রেল সূত্রের খবর, হাসপাতালের সর্বোচ্চ চতুর্থ তলে করোনা আক্রান্তদের চিকিৎসার পরিকাঠামো গড়ে তোলা হয়েছে। মোট ৩০৩ শয্যার হাসপাতালে ১৫২টি কোভিড রোগীর জন্য বরাদ্দ। যার মধ্যে ২৫টি শয্যা নিয়ে এখানে সেফ হোম তৈরি করা হয়েছে। এ ছাড়াও ১০টি আইসিসিইউ শয্যা রয়েছে। জরুরি ভিত্তিতে আরও ১০টি আইসিসিইউ শয্যা তৈরির কাজ চলছে। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ আশা করছেন, আগামী দু’-এক দিনের মধ্যেই ওই ব্যবস্থা চালু করা সম্ভব হবে।
দক্ষিণ-পূর্ব রেলের সদর এই হাসপাতালের অধীনে একাধিক ডিভিশনের হাসপাতাল রয়েছে। ওই সব হাসপাতালেও একই নীতি অনুসরণ করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। রোগীদের কারও শারীরিক অবস্থার অবনতির আশঙ্কা দেখলে, তাঁকে সময় থাকতেই সদর হাসপাতালে পাঠানোর কথা বলা হচ্ছে।
করোনা যুদ্ধ সামলাতে জরুরি ভিত্তিতে হাসপাতালে ১০০ জনকে নিয়োগ করা হয়েছে। যার মধ্যে ২২ জন চিকিৎসক, ৩১ জন নার্স, এবং পঞ্চাশের বেশি চিকিৎসা সহায়ক বা অ্যাটেনডেন্ট। বিশেষ পরিস্থিতিতে রোগীদের সামলাতে ক্রিটিক্যাল কেয়ার স্টাফ হিসেবে নেওয়া হয়েছে চার জনকে।
এই হাসপাতালে সব রোগীর জন্য অক্সিজেনের ব্যবস্থা রয়েছে। তবুও সম্প্রতি রেল বোর্ড খরচের ক্ষেত্রে কিছু নিয়ম নীতি শিথিল করায় অক্সিজেন প্লান্ট বসানোর কাজও শুরু হয়েছে। কর্তৃপক্ষের দাবি, গুরুতর অসুস্থ ও কোমর্বিডিটি নিয়ে ভর্তি কিছু রোগীর মৃত্যু হলেও বেশির ভাগই সুস্থ হচ্ছেন। আর চিকিৎসকেরা বলছেন, “পরিকাঠামোকে চাপমুক্ত রাখতে পারার ফর্মুলা হল দ্রুত রোগ নির্ণয়।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy