গার্ডেনরিচের দুর্ঘটনার দু’দিন পার। এখনও খোঁজ মেলেনি আবদুল রউফ নিজ়ামি ওরফে শেরু চাচার (মাঝখানে)। —নিজস্ব চিত্র।
ক্রমশ ক্ষীণ হয়ে আসছে আশা। শেষ বার বাড়ির লোকের সঙ্গে কথা হয়েছিল দুর্ঘটনার কিছু পরেই ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকেই। তার পর থেকে কোনও সাড়া নেই। যোগাযোগ করা যাচ্ছে না ফোনেও। দুর্ঘটনার ৪৮ ঘণ্টা পরেও কংক্রিটের ধ্বংসস্তূপের নীচে এখনও কি বেঁচে আছেন ‘শেরু চাচা’? মঙ্গলবার আরও এক নিথর দেহের খোঁজ পাওয়ার পর এই প্রশ্নই এখন ঘুরছে পরিজনদের মনে।
রবিবার রাত তখন ১২টা। গার্ডেনরিচের ব্যানার্জিপাড়া এলাকায় আচমকা প্রচণ্ড শব্দ করে ভেঙে আশপাশের কয়েকটি ঝুপড়ির উপর ধসে পড়ে পাঁচ তলার নির্মীয়মাণ এক বহুতল। ঘটনাস্থল থেকে ঢিল ছোড়া দূরত্বেই বাড়ি আবদুল রউফ নিজ়ামি ওরফে শেরু নিজ়ামের। এলাকায় তিনি পরিচিত ‘শেরু চাচা’ নামেই। স্থানীয়দের আশঙ্কা, ধ্বংসস্তূপের নীচে চাপা পড়েন তিনি। শেরুর দাদা সফি আখতার আনন্দবাজার অনলাইনকে বলেন, “কালকে (সোমবার) পর্যন্ত ভাবছিলাম ভাইকে খুঁজে পাওয়া যাবে। বেঁচে ফিরতে পারবে সে। কিন্তু সেই আশা প্রায় নেই।” মঙ্গলবার রাতে আরও এক নিথর দেহ ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকে উদ্ধার করেন উদ্ধারকারীরা। এর পরেই শেরুর পরিবার আরও আশঙ্কায়।
স্থানীয়দের দাবি, শেরু ওই বহুতলের প্রোমোটিংয়ের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। যদিও পরিবারের লোকেরা দাবি করেছেন, শেরু ওই বহুতলটিতে বিদ্যুতের কাজের সঙ্গে যুক্ত ছিলেন। স্থানীয়েরা জানিয়েছেন, প্রায় প্রতি দিন রাতেই ওই নির্মীয়মাণ বহুতলের কাছে যেতেন তিনি। আড্ডা দিতেন। পরে আবার বাড়ি ফিরে আসতেন। রবিবার রাতেও ওই নির্মীয়মাণ বহুতলের কাছে গিয়েছিলেন শেরু। দুর্ঘটনার পর খোঁজ-খোঁজ রব উঠলে শেরুর মোবাইলে ফোন করেন স্থানীয়দের কেউ কেউ। ফোন ধরে জবাবও দেন তিনি। ধ্বংসস্তূপের নীচ থেকেই শেরু ফোনে বলেছিলেন, ‘‘আমি বেঁচে আছি। আমার সঙ্গে আরও কয়েক জন আটকে। তাড়াতাড়ি বার করো।’’ এর পরেই ফোন বন্ধ হয়ে যায় তাঁর। শেরুর পরিবারে রয়েছেন তাঁর স্ত্রী, ছেলে এবং চার মেয়ে। ছেলে কলেজ পড়ুয়া। মেয়েদের দু’এক জনের বিয়ে হয়ে গিয়েছে। সকলেই ক্ষীণ আশা নিয়ে রয়েছেন অপেক্ষায়। যদি অলৌকিক কিছু ঘটে।
রবিবার রাত ১২টা নাগাদ গার্ডেনরিচের ১৩৪ নম্বর ওয়ার্ডের নির্মীয়মাণ বহুতল ভেঙে পড়ে পাশের ঝুপড়ির উপর। বেশ কয়েকটি টালির চালের বাড়ি গুঁড়িয়ে যায়। অনেকে চাপা পড়েন। সেই ঘটনায় মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত ১০ জনের মৃত্যু হয়েছে। আহতও হয়েছেন অনেকে। ওই রাতেই ঘটনাস্থলে যান কলকাতা পুরসভার মেয়র তথা এলাকার বিধায়ক ফিরহাদ হাকিম, দমকলমন্ত্রী সুজিত বসু। পরের দিন যান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বহুতলটি যে বেআইনি তা মেনে নিয়েছেন মেয়র। এই ঘটনার যাঁরা দায়ী তাঁদের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ করার কথাও জানিয়েছিলেন মেয়র। এই ঘটনায় প্রোমোটার-সহ অন্য জড়িতদের বিরুদ্ধে স্বতঃপ্রণোদিত মামলা দায়ের করা হয়েছে। লালবাজার সূত্রে খবর, তাঁদের বিরুদ্ধে খুন, খুনের চেষ্টা-সহ একাধিক ধারায় মামলা রুজু হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করছেন কলকাতা পুলিশের ডিডি হোমিসাইড। এখনও পর্যন্ত ওই বহুতলটির প্রোমোটার এবং জমির মালিককে গ্রেফতার করা হয়েছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy