নিরুপায়: (বাঁ দিকে) করোনা-বিধির তোয়াক্কা না করে ভিড় বাসে কোনওক্রমে উঠতে চাওয়া এক প্রৌঢ়াকে নামিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছেন কন্ডাক্টর। বাগুইআটিতে। (ডান দিকে) উল্টোডাঙা মোড়ে ট্যাক্সি ধরার চেষ্টায় যাত্রীরা। বৃহস্পতিবার। ছবি: সুমন বল্লভ, বিশ্বনাথ বণিক
আশঙ্কাই সত্যি হল। ভাড়া নিয়ে টালবাহানা না কাটায় বৃহস্পতিবার পথে নামল হাতে গোনা বেসরকারি বাস। তেলের দামের কথা মাথায় রেখে বুঝে চলতে হল সরকারি বাসকেও। আর এর জেরে এক-একটি বাসেই হুড়মুড়িয়ে উঠলেন বহু যাত্রী। বহু জায়গায় মানা গেল না ৫০ শতাংশ যাত্রী নিয়ে বাস চালানোর বিধি। বিকল্প গণপরিবহণেও কমল না ভোগান্তি। অভিযোগ, সুযোগ বুঝে যথেচ্ছ ভাড়া হাঁকলেন অটো-ট্যাক্সির চালকেরা। অনেকের আবার দাবি, এ দিন তবু সরকারি ছুটি ছিল। দ্রুত সমাধানসূত্র না বেরোলে শুক্রবার থেকে পূর্ণ কাজের দিনে ভোগান্তি আরও বাড়তে পারে।
এ দিন সকালে যাত্রীর ভিড় ছিল ডানলপ, চিড়িয়ামোড়, উল্টোডাঙা, শ্যামবাজার, গড়িয়া, যাদবপুর, টালিগঞ্জ মেট্রো স্টেশন, ধর্মতলা মোড়, শিয়ালদহের মতো বেশ কিছু এলাকায়। তবে পথে বেসরকারি বাস ছিল নামমাত্র। বাসমালিক সংগঠনগুলির দাবি, অন্য সময়ে তিন-পাঁচ হাজার বেসরকারি বাসের বদলে এ দিন পথে নামা বাসের সংখ্যা ছিল একশোর আশপাশে। বহু রুটেই সকালে বাস নামলেও বেলায় তা তুলে নিতে হয়েছে। ‘ওয়েস্ট বেঙ্গল বাস-মিনিবাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন’-এর সাধারণ সম্পাদক প্রদীপনারায়ণ বসু বলেন, “ভাড়ার বিষয়ে নিষ্পত্তি না হওয়া পর্যন্ত বাস চালানো মুশকিল। যাঁরা বাস নামিয়েছেন, তাঁরা অনেকেই বেশি ভাড়া নিয়েছেন। পরে বাস তুলেও নিতে হয়েছে।” সূত্রের খবর, খিদিরপুর-হাওড়া মিনিবাসে ন্যূনতম ১২-১৫ টাকা ভাড়া নেওয়া হয়েছে। ৯৩ নম্বর, এল২৩৮ রুটেও ন্যূনতম ১৫ টাকা করে ভাড়া নেওয়া হয়েছে। এক বাস কন্ডাক্টরের দাবি, “সকালে আমাদের রুটে ১৪টা বাস চলছিল, বেলায় সেটাই কমে দাঁড়ায় তিনে। বেশি ভাড়া চাইলেই লোকে কলার টেনে ধরছে।” এর মধ্যেই বাস চালিয়ে পরিস্থিতি সামাল দেওয়ার চেষ্টা করেছে সরকারি পরিবহণ নিগমগুলি।
এ দিন উল্টোডাঙায় ধাক্কাধাক্কি করে একটি বেসরকারি বাসে উঠলেন অনেকে, অনেকে আবার দাঁড়িয়ে রইলেন পাদানিতেই। ধর্মতলা থেকে শিয়ালদহগামী একটি বাসের গাদাগাদি ভিড়ে অনেকেরই মাস্ক ঠিক নেই বলে দেখা গেল। এক যাত্রী বললেন, “ফাঁকা বাসের অপেক্ষায় দাঁড়ালে চাকরি থাকবে না। বাসের সংখ্যা না বাড়লে কোনও ভাবেই ৫০ শতাংশ যাত্রী নেওয়ার নিয়ম মানা যাবে না।”
এরই মধ্যে অটো-ট্যাক্সি এবং অ্যাপ-ক্যাবের বাড়তি ভাড়া চাওয়া মানুষের ভোগান্তি আরও কয়েক গুণ বাড়িয়েছে বলে অভিযোগ। এ দিন সকালে অটোর জন্য লম্বা লাইন দেখা গেল শোভাবাজারে। উল্টোডাঙা-শোভাবাজার রুটের অটোয় গত বছর লকডাউনের পরেই ভাড়া বেড়েছিল চার টাকা। এ বার আরও দু’টাকা বেশি চাওয়া হচ্ছে বলে অভিযোগ। বিকেলে বৃষ্টির পরে সেই ভাড়াই গিয়ে দাঁড়ায় ৩০-৩৫ টাকা। গিরিশ পার্ক থেকে কাঁকুড়গাছি বা বেলেঘাটার একাধিক রুটেও এ দিন চার-পাঁচ টাকা করে বেশি ভাড়া হাঁকা হয় বলে অভিযোগ। রুবি, বাঘা যতীন, গোলপার্ক এলাকার কয়েকটি রুটে কম যাত্রী নিয়ে দ্বিগুণ ভাড়া চাওয়া হয় বলে দাবি। গড়িয়া-বারুইপুর, গড়িয়া-সোনারপুর এবং টালিগঞ্জ-বেহালার একাধিক রুটে যাত্রী সংখ্যার উপরে ভিত্তি করে ভাড়া ওঠানামা করেছে বলে খবর। দমদম এক নম্বর গেট থেকে উল্টোডাঙা যাওয়ার ট্যাক্সিতে ওঠা সফটওয়্যার সংস্থার কর্মী নিখিল গুপ্ত বলছেন, “চালকদের বিবাদে এ দিন দমদম এক নম্বর থেকে বাগুইআটিগামী অটো সকালে বন্ধ ছিল। বহু ক্ষণ দাঁড়িয়েও বাস পেলাম না। তিনটে ট্যাক্সি যা ভাড়া হাঁকল, মাথা ঘুরে যাওয়ার জন্য যথেষ্ট। অ্যাপ-ক্যাব উল্টোডাঙা যেতে ভাড়া দেখাল ৪৫০ টাকা! শেষে ৩৫০ টাকা ভাড়ায় হলুদ ট্যাক্সি নিতে হল!”
এমন যাত্রী ভোগান্তি মিটবে কবে? পরিবহণমন্ত্রী ফিরহাদ হাকিমকে বার বার যোগাযোগ করার চেষ্টা হলেও তিনি ফোন ধরেননি, টেক্সট মেসেজেরও উত্তর দেননি। পরিবহণ দফতরের এক শীর্ষ কর্তা শুধু বলেছেন, “বাস ভাড়ার বিষয়ে ভাবনা-চিন্তা চলছে। কিন্তু অন্য কোনও গণপরিবহণে অনৈতিক ভাবে ভাড়া চাওয়া হলে ভুক্তভোগীরা অভিযোগ করতে পারেন। আমাদের নজরদারি দলও ঘুরছে।” কিন্তু তাতে সুরাহা হচ্ছে কি? এ দিনের বাস্তব অভিজ্ঞতা অবশ্য অন্য কথাই বলেছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy