—ফাইল চিত্র।
রবিবার থেকে টালা ব্রিজে নিষিদ্ধ করা হল বাস চলাচল। কেবল মাত্র ছোট গাড়ি এবং ছোট পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল করতে পারবে। শুক্রবার পরিবহণ দফতর, পূর্ত দফতর এবং রাইটস-এর বিশেষজ্ঞদের নিয়ে বৈঠক করেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়।
সেই বৈঠকের পরই বাস বন্ধের সিদ্ধান্ত জানান মেয়র এবং নগরোন্নয়ন মন্ত্রী ফিরহাদ হাকিম। এ দিন পরিবহন সচিব বলেন, টালা সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে বিশেষজ্ঞরা লিখিত সুপারিশ করেছিলেন যে তিন টনের বেশি ওজনের কোনও যান যেন ওই সেতু দিয়ে না চলাচল করে। সেই সিদ্ধান্ত মেনেই ছোট গাড়ি এবং ছোট পণ্যবাহী গাড়ি চলবে সেতুর উপর দিয়ে। বাস চলবে না।
পরিবহণ সচিব এ এদিন বলেন, তাঁর দফতর পুলিশের সঙ্গে বৈঠক করে পরিবর্তিত এবং বিকল্প রুট তৈরি করছে। শনিবার সম্পূর্ণ হবে বিকল্প রুটের পরিকল্পনা। তিনি জানান, রেল এবং মেট্রো কর্তৃপক্ষকে তাঁরা আবেদন করেছেন, সেতু বন্ধ থাকাকালীন সাধারণ মানুষের সুবিধার জন্য যাতে ট্রেনের সংখ্যা বাড়ানো হয় এবং মেট্রো বেশি পরিমাণে নোয়াপাড়া অবধি ট্রেন চালায়।
প্রাথমিক ভাবে এই তিনটি রাস্তাকেই বিকল্প পথ হিসাবে ভাবা হচ্ছে। গ্রাফিক: শৌভিক দেবনাথ।
আরও পড়ুন: টালা সেতু ‘অতি দুর্বল’, পুজোর আগেই বাস চলাচল বন্ধের সুপারিশ, কাল সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রী
আগেই, পণ্যবাহী ভারি গাড়ি এবং বাস চলাচল বন্ধ করার সুপারিশ করেছিলেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে ৫৭ বছরের পুরনো ওই সেতুর হাল এতটাই খারাপ, যে কোনও দিন ঘটতে পারে মাঝেরহাট সেতু দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি।
টালা সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে রীতিমতো আশঙ্কিত রাজ্যের সেতু পরামর্শদাতা কমিটির বিশেষজ্ঞরা। ১৯৬২ সালে উদ্বোধন করা হয়েছিল রেল সেতুর উপর ওই সেতুর। ৬২৫ মিটার লম্বা সেতুর ১৮২ মিটার অংশ রেল লাইনের উপর। সেই অংশটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রেলের। বাকিটা রাজ্য পূর্ত দফতরের।
গত সপ্তাহে সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে গিয়ে চমকে গিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ররা। এক বিশেষজ্ঞ বলেন,‘‘ মাঝেরহাট সেতু যে প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয়েছিল, টালা সেতুও সেই একই প্রযুক্তিতে তৈরি। সোজা ভাষায় স্তম্ভের উপর ইস্পাতের জাল। তার উপর কংক্রিটের চাদর।” বিশেষজ্ঞদের মতে সেতুর ওই লোহার জাল, দীর্ঘদিন ধরে ভার বহন করতে করতে নীচের দিকে নেমে আসছে। ফলে সেতুর মূল কাঠামোতে ক্ষতি হয়েছে।
আরও পড়ুন: শিশুমৃত্যু-কাণ্ডে ‘নির্দোষ’ কাফিল খান, যোগী সরকারকে ক্ষমা চাইতে বললেন চিকিৎসক
কলকাতা শহরে যে পরিমাণ পণ্যবাহী গাড়ি ঢোকে, তার প্রায় অর্ধেকই চলাচল করে টালা সেতুর উপর দিয়ে। ফলে প্রতি দিন ব্যপক ভার বহন করতে হয় ওই সেতুকে। সেই কারণেই আশঙ্কা আরও বেশি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। এক ইঞ্জিনিয়র বলেন, গোটা সেতুতে জায়গায় জায়গায় কংক্রিটের চাদর খসে পড়েছে। উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছে ভিতরের ইস্পাত। সেই ইস্পাতেও ক্ষয় শুরু হয়েছে। তিনি বলেন,‘‘ এ সবই হল কংক্রিটের ভার বহন ক্ষমতা শেষ হয়ে আসার লক্ষণ।” তার সঙ্গে অন্য সেতুর মতো একের পর এক বিটুমিনের প্রলেপ ব্রিজের স্থায়ী ভার আরও বৃদ্ধি করেছে, যা সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেতুকে অক্ষম এবং ন্যুব্জ করে তুলেছে।
অন্যদিকে ওই বৈঠকে সেতুর তলায় বাস করা প্রায় ২০০ মানুষের অবিলম্বে অন্যত্র সরানোর কথা বলেন। এক বিশেষজ্ঞ বলেন,‘‘সেতুর কংক্রিটের যা অবস্থা তাতে যে কোনও সময় বড় চাঙড় খসে পড়ে প্রাণহানি হতে পারে।” ওই ২০০ জনকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে সেই বিকল্প জায়গা নিয়েও আলোচনা হয় এ দিন। ফিরহাদ হাকিম বলেন, ‘‘ ওই দু’শো জনকে ইতিমধ্যেই সরানোর কাজ শুরু হয়েছে। আজকেই তাঁদের সবাইকে রেলওয়ে সাইডিংয়ের কাছে বিকল্প জায়গায় স্থানান্তরিত করা সম্ভব হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy