Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
City of Joy

‘সিটি অব জয়’ ফের লেখা হলেও প্রতিরোধ হত

পরে লাপিয়ের এ দেশে পদ্মভূষণ খেতাব পেয়েছেন। দক্ষিণবঙ্গে গ্রামীণ স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেছেন তাঁর গড়ে তোলা সাদার্ন হেলথ ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটির (শিস) মাধ্যমে।

সুহৃদ: সদ্য প্রয়াত দমিনিক লাপিয়েরের (বাঁ দিকে) সঙ্গে ব্রাদার গাস্তঁ। ছবি সংগৃহীত

সুহৃদ: সদ্য প্রয়াত দমিনিক লাপিয়েরের (বাঁ দিকে) সঙ্গে ব্রাদার গাস্তঁ। ছবি সংগৃহীত

ঋজু বসু
শেষ আপডেট: ০৬ ডিসেম্বর ২০২২ ০৬:৪২
Share: Save:

সম্পর্কটা স্রষ্টা এবং সৃষ্টির ঠিকই। তবে একতরফা নয়। ‘সিটি অব জয়’-এর লেখক দমিনিক লাপিয়েরও যেন ধাপে ধাপে তাঁর হাতেই গড়ে উঠেছেন। লাপিয়েরের উপন্যাসে বস্তির নিরন্ন, সব-হারাদের মাঝে পোলিশ ধর্মযাজক স্তেফান কোভালস্কির চরিত্রটা কল্পনার নয়। হাওড়ার পিলখানা বস্তিতে বাস্তবের সুইস ব্রাদার গাস্তঁ গাঁজোঁ দয়ানন্দের হুবহু আদলেই লাপিয়ের কোভালস্কিকে সৃষ্টি করেছিলেন। তবে তাঁর কাহিনির চরিত্রও লেখককে পাল্টায়, নতুন করে তৈরি করে— এটাই বিশ্বাস করেন ব্রাদার গাস্তঁ।

দুনিয়ার বুভুক্ষ দরিদ্রতমদের মাঝে অন্নপান গ্রহণ করে বাঁচাই তাঁর জীবনের আদর্শ ধরে উত্তাল ১৯৭১-এ সুইৎজ়ারল্যান্ড থেকে কলকাতায় আসেন ব্রাদার। ১৯৮০-তে পরিচয় লাপিয়েরের সঙ্গে। সেই অধ্যায় অটুট থেকেছে চার দশকেরও পারে। সপ্তাহে সপ্তাহে নিয়মিত কথা হয়েছে দু’জনের। তাঁর ‘স্রষ্টা’ লাপিয়ের শুক্রবার রাতে (২ ডিসেম্বর) মারা গিয়েছেন বলেই লেখকের স্ত্রীর কাছে গাস্তঁ জানতে পেরেছেন। সোমবার বিকেলে গাস্তঁ বলছিলেন, “আমার এবং দমিনিকের গোড়ার আলাপ-পর্ব অবশ্য তত মিঠে নয়। ফরাসিটা কী মতলবে পিলখানার গরিবদের সঙ্গে মেলামেশার চেষ্টা করছে, তা নিয়ে সন্দেহই ছিল আমার। ও লিখতে চায় বললেও কোথাকার বিদেশিকে আমি আমল দিতে চাইনি। নিজে ইউরোপে জন্মালেও ইউরোপীয় লোকটা গরিবের ভাল করতে চাইছে, সেটা পুরোটা বিশ্বাস হচ্ছিল না।’’

বয়সে লাপিয়েরের থেকে বছর ছয়েকের ছোট গাস্তঁ এখন হাওড়ার শ্যামপুরে একটি অনাথ আশ্রম চালান। বহু দিনের ভারতীয় নাগরিকের উচ্চারণে ফরাসি টান। কিন্তু অনর্গল বাংলা বলেন। জিশুর পায়ে জীবন সমর্পিত, ৮৬ বছরের হুইলচেয়ার-বন্দি বৃদ্ধ হাসেন, “এখন বুঝতে পারি, খুব বেশি কেউই লাপিয়েরের মতো নয়। ১৯৮৫ থেকেই উনি ভারতের জন্য কাজ করার চেষ্টা করছিলেন। বছর বছর কয়েক মিলিয়ন ডলার বিভিন্ন সমিতিকে দিয়েছেন। লোকে উল্টে ওঁকে নিয়ে হাসাহাসি করেছে, বলেছে ভারত কখনও পাল্টাবে না। কিন্তু লাপিয়ের আমৃত্যু ভারতের উন্নতিতে বিশ্বাস রেখেছিলেন।’’ কলকাতার পরিচয় হিসাবে আনন্দনগরী তকমাটা সেঁটে গেলেও ‘সিটি অব জয়’ নিয়ে বিতর্ক কম হয়নি। গাস্তঁর কথায়, “অনেকে বলেন, বিদেশিরা কেন গরিবদের নিয়ে লিখবেন? কিন্তু লিখবেন না-ই বা কেন, গরিবরা কি মানুষ নন!”

পরে লাপিয়ের এ দেশে পদ্মভূষণ খেতাব পেয়েছেন। দক্ষিণবঙ্গে গ্রামীণ স্বাস্থ্য নিয়ে কাজ করেছেন তাঁর গড়ে তোলা সাদার্ন হেলথ ইমপ্রুভমেন্ট সোসাইটির (শিস) মাধ্যমে। অনেকের ভালবাসার ‘দমিনিক দাদা’ও হয়ে ওঠেন তিনি। কিন্তু আজকের ভারত নিয়েও আক্ষেপ মিশে আছে সেই ‘সিটি অব জয়’-এর ফাদার কোভালস্কি তথা গাস্তঁর স্বরে। তাঁর কথায়, “ভারত আগের থেকে শক্তিশালী, ধনী, সুন্দর হলেও পিলখানা বস্তির এক-তৃতীয়াংশ তখনকার মতোই হয়ে আছে। তা ছাড়া হিন্দু, মুসলিম, খ্রিস্টান, বৌদ্ধের সম্পর্ক আগের মতো নেই। কে কী খাবে, পরবে, তাতেও খবরদারি। দু’দশক আগের ভারতও এমন ছিল না।’’ গাস্তঁ বলেন, “আমি ‘সিটি অব জয়’ লিখতে পারলে দুটো ভারতের কথা লিখতাম। ধনী, শক্তিশালী ভারত আর কমজোর ভারত। দ্বিতীয়টিতে মুসলিম, আদিবাসী, দলিতদের কথা। আমি জানি, তাতে এখনও প্রতিরোধের মুখে পড়তে হবে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

City of Joy Dominique Lapierre Pilkhana
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE