রেলশহরের ‘চাচা’ আর নেই।
প্রয়াত হলেন কংগ্রেসের প্রাক্তন বিধায়ক তথা রেলশহরের ‘চাচা’ জ্ঞানসিংহ সোহন পাল। মঙ্গলবার কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে বিকেল ৪টায় তাঁর মৃত্যু হয়েছে।
গুরুতর অসুস্থ হয়ে পড়ায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের নির্দেশে সোমবার দুপুরে তাঁকে কলকাতার এসএসকেএম হাসপাতালে ভর্তি করানো হয়। গত এক সপ্তাহ ধরে বার্ধক্যজনিত অসুস্থতায় ভুগছিলেন ৯৩ বছরের চাচা। খড়্গপুরে চিকিৎসার সুবন্দোবস্ত না হওয়ায় উত্তরোত্তর তাঁর শারীরিক অবস্থার অবনতি হচ্ছিল। স্থানীয় তৃণমূল নেতৃত্বের মাধ্যমে সে কথা জেনে তৎপর হন মুখ্যমন্ত্রী। এ দিন তাঁর নির্দেশেই ‘চাচা’কে কলকাতায় নিয়ে আসা হয়। চাচার সঙ্গে কলকাতায় এসেছিলেন তাঁর বড় নাতি হরমিত সিংহ ও খড়্গপুরের পুরপ্রধান তৃণমূলের প্রদীপ সরকারও। মুখ্যমন্ত্রীর এই উদ্যোগকে সাধুবাদ জানিয়েছেন কংগ্রেসের খড়্গপুর শহর সভাপতি অমল দাস।
আরও পড়ুন- বাজারে কেন ৫০০-র দুই নোট চালু, উত্তাল রাজ্যসভা
আরও পড়ুন- রামজন্মভূমির একটু দূরে হোক মসজিদ, সুপ্রিম কোর্টে শিয়া বোর্ড
রেলশহরে চাচার জনপ্রিয়তা প্রশ্নাতীত। ইন্দিরা গাঁধীর স্নেহভাজন হিসেবে ১৯৬২ সালে প্রথম তিনি খড়্গপুর কেন্দ্র থেকে জিতে বিধায়ক হয়েছিলেন। তার পরে ১৯৬৭ সালে হারলেও ফের ১৯৭১-এ জয়ী হন। সে বার তিনি কারামন্ত্রী হয়েছিলেন। ১৯৭২ সালে পরিবহণ দফতরের বাড়তি দায়িত্বও বর্তায় তাঁর ঘাড়ে। ১৯৭৭ সালে বাম প্রার্থীর কাছে ফের হেরে যান তিনি। কিন্তু ১৯৮২ থেকে ২০১১ পর্যন্ত চাচা জয় কেউ আটকাতে পারেননি। এই সময়ের মধ্যে ২০০১, ২০০৬ ও ২০১১ সালে প্রোটেম স্পিকারের দায়িত্ব সামলেছেন তিনি। গত বিধানসভা নির্বাচনে ৯২ বছর বয়সেও দশবারের এই বিধায়ককেই প্রার্থী করেছিল কংগ্রেস। কিন্তু বিজেপির দিলীপ ঘোষের কাছে তাঁকে হার মানতে হয়। তবে জেতার পরে চাচাকে প্রণাম করে গিয়েছিলেন বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপবাবু।
আরও পড়ুন- ‘বিদেশেও নিরাপত্তারক্ষী নেন না, কী লুকাতে চান!’
অসুস্থতার জন্য অবশ্য সম্প্রতি চাচার রাজনৈতিক সক্রিয়তা কমে এসেছিল। গোলবাজারে নিজের দলীয় কার্যালয়ে যাওয়াও ছেড়ে দিয়েছিলেন তিনি। গত কয়েকদিনে তাঁর অসুস্থতা বেড়েছিল। পারিবারিক সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রস্টেটের সমস্যায় ভুগছিলেন চাচা। কয়েক বছর আগে অস্ত্রোপচারও হয়েছিল। কিন্তু দিন কয়েক ধরে পেটে ব্যথা, কোমর-পা ফুলে যাওয়ার মতো উপসর্গ দেখা দিয়েছিল। তৃণমূলের পুরপ্রধান প্রদীপবাবু বলেন, “আমি গত শনিবার চাচার সঙ্গে দেখা করি। তারপর মুখ্যমন্ত্রীর আপ্তসহায়ক ও জেলা পুলিশ সুপারকে সব জানাই জানিয়েছিলাম। তার পরেই মুখ্যমন্ত্রী দ্রুত চাচাকে কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার নির্দেশ দেন।” কংগ্রেসের খড়্গপুর শহর সভাপতি অমলবাবুও বলেন, “এখানকার তৃণমূল নেতাদের মাধ্যমে মুখ্যমন্ত্রীর কাছে চাচা অসুস্থ বলে খবর গিয়েছিল। তাই মুখ্যমন্ত্রী চাচাকে কলকাতায় পাঠানোর নির্দেশ দেন।”
এ দিন কলকাতায় যাওয়ার আগে চাচাকে দেখতে ভিড় জমিয়েছিলেন সিপিআই নেতা অসিত বসাক, তৃণমূল নেতা নারায়ণ পড়িয়া-সহ বহু মানুষ। চাচাকে অসুস্থ দেখাচ্ছিল। মাথায় ছিল না চিরচেনা বড় পাগড়ি। বরাবরের মিতবাক মানুষটি শুধু বলছিলেন, “পেটে ভীষণ ব্যথা।”