Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

নিষিদ্ধ ভোজ বন্ধে ‘বন্ধু’র খোঁজ সোশ্যাল মিডিয়ায়

এর আগে ভাম মেরে, তার মাংস রান্না করে খাওয়ার ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেই বন দফতর ও পুলিশের তরফে ব্যবস্থা নেওয়ার নজির রয়েছে। দেখা গিয়েছে বাঘরোল হত্যার ছবিও। পশু মাংস-স্বাদের বিচিত্র স্বাদ মেটানোর সাক্ষী সোশ্যাল মিডিয়া।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

ঋজু বসু
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৪ জুন ২০১৯ ০২:০৪
Share: Save:

‘এ পাখির কি রোস্ট হওয়া সম্ভব?’

সত্যজিতের ‘কাঞ্চনজঙ্ঘা’র ঔপনিবেশিক ভদ্রলোক ছবি বিশ্বাসের কেতায় সেই প্রশ্ন এখনও শোনা যায় বইকী! দার্জিলিংয়ে দুর্লভ এক পাখির হদিস মেলার খবর পেয়ে যিনি সেই পাখি চাখা যাবে কি না, জানতেই ব্যস্ত হয়ে উঠেছিলেন। ‘এক্সটিক’ স্বাদের লোভে দেশের আইনে নিষিদ্ধ মাছ-মাংসের দিকে নজর দেন যে অনুরাগীরা, তাঁদের দিকে পাল্টা নজরদারি চালাতে এ বার সোশ্যাল মিডিয়ায় কার্যত আড়ি পাতছে বন দফতর।

এর আগে ভাম মেরে, তার মাংস রান্না করে খাওয়ার ভিডিয়ো সোশ্যাল মিডিয়ায় দেখেই বন দফতর ও পুলিশের তরফে ব্যবস্থা নেওয়ার নজির রয়েছে। দেখা গিয়েছে বাঘরোল হত্যার ছবিও। পশু মাংস-স্বাদের বিচিত্র স্বাদ মেটানোর সাক্ষী সোশ্যাল মিডিয়া। এই প্রবণতা ঠেকাতে সেখানকার একটি জনপ্রিয় ভোজন-বিলাসী গ্রুপের ‘বন্ধু’দের শরণাপন্ন কেন্দ্রীয় বন দফতরের ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল বুরো।

‘‘বন দফতরের নীতি অনুযায়ী, বিভিন্ন দায়বদ্ধ গোষ্ঠীর সঙ্গে আমাদের গাঁটছড়া বাঁধাই দস্তুর। সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও গ্রুপের মাধ্যমে বেশি লোকের কাছে পৌঁছতে পারলেও আখেরে সচেতনতার কাজটাই ছড়িয়ে পড়বে।’’— বলছেন কেন্দ্রীয় বনকর্তা অগ্নি মিত্র। ‘রেসপন্সিব্‌ল ইটিং’ বা দায়বদ্ধ ভোজ-বিলাসের বার্তা ছড়িয়ে তাই আপাতত বন দফতরের সহযোগী ‘ক্যালকাটা ফুডিজ় ক্লাব’। এক লক্ষ ৭ হাজার সদস্যের এই বৃহৎ গোষ্ঠীটি বন দফতরের চোখ বা কান হয়ে উঠতেও বদ্ধপরিকর। গ্রুপের দুই পান্ডা চন্দন গুপ্ত ও সাগর সেন মানছেন, কলকাতা বা কাছেপিঠের শিক্ষিত ভোজ-বিলাসীদের মধ্যেও নানা অজ্ঞতা কাজ করে। তাঁরা বলেন, ‘‘কোনও নামী শেফ বা একবেলার পপ-আপ ভোজ বিশারদ সংগঠকেরাও মাঝেমধ্যে বাহাদুরি দেখাতে নিষিদ্ধ সামুদ্রিক প্রাণী বা পাখির মাংসের আয়োজন করেন। এই বিষয়গুলি নিয়ে সচেতন হওয়া দরকার।’’

সোশ্যাল মিডিয়ার গ্রুপটি ইতিমধ্যেই বন দফতরের কাছে অভিযোগ পেশ করার মাধ্যম হিসেবে সক্রিয়। গ্রুপের কর্তারা জানাচ্ছেন, বেআইনি কচ্ছপ বা হাঙর বিক্রির ঠেকের খবর দিয়ে রাজ্যের নানা এলাকা থেকে সদস্যেরা অভিযোগ পাঠাচ্ছেন তাঁদের কাছে। নিয়মিত ওই সব অভিযোগ বন দফতরের সংশ্লিষ্ট শাখায় পৌঁছে দেওয়া হচ্ছে।

ওয়াইল্ড লাইফ ক্রাইম কন্ট্রোল বুরো-র পূর্বাঞ্চলীয় সহ-অধিকর্তা অগ্নিবাবুর কথায়, ‘‘এখনও শহরতলি, মফস্‌সল বা জেলার স্টেশনের ধারে কচ্ছপের মাংস পাওয়া যায়। বিরল প্রাণী হিসেবে তা বাঘের মতোই গুরুত্বপূর্ণ। এ ছাড়া, শার্ক বা হাঙরের কয়েকটি প্রজাতি আছে— তা-ও অতি বিরল এবং নিষিদ্ধ।’’ বন দফতর সূত্রের খবর, এপ্রিল-মে মাসে কালো তিতির বা বগারি (শর্ট টোড লার্ক)-ও শিকারীদের কাছে আকর্ষক। মুর্শিদাবাদে এই ধরনের পাখির মাংসের বিরাট বাজার। আবার চিতল হরিণ, বনমোরগ বা বুনো শুয়োরও বিরল গোত্রের বলে খাওয়া উচিত নয়। বন্যপ্রাণ সুরক্ষা আইন অনুযায়ী, কচ্ছপের মতো বিলুপ্তপ্রায় প্রাণীর মাংস খেলে বা বিক্রি করলে তিন থেকে সাত বছরের জেল হতে পারে। একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি করলে আরও কড়া সাজা।

অগ্নিবাবুর ব্যাখ্যা, বনপ্রাণ সংক্রান্ত অপরাধ রুখতে দায়বদ্ধ হলেও কলকাতা ও গুয়াহাটিতে তাঁদের ৮-১০ জন করে কর্মী রয়েছেন। তাই নজরদারি চালানো বা অভিযানে শামিল হওয়াটা একার চেষ্টায় কঠিন। কেন্দ্রীয় বন মন্ত্রকের তরফে এ রাজ্যে সীমান্তরক্ষী বাহিনী, রেলরক্ষী বাহিনী বা রাজ্য গোয়েন্দা পুলিশের সাহায্য নিয়ে কাজটা সারা হয়। এমনিতে চোরাশিকার চক্রগুলির পিছনে জীবজন্তুর অঙ্গপ্রত্যঙ্গ বিক্রি বা বিদেশে পাচারের নানা অভিসন্ধি কাজ করে। কিন্তু সোশ্যাল মিডিয়ার এই সব গ্রুপের মাধ্যমে প্রধানত, খাওয়ার লোভে নিষিদ্ধ শিকার বা মাছমাংস বিক্রির প্রবণতা নিয়ে তাঁরা সক্রিয়।

অন্য বিষয়গুলি:

Social Media Forest Department Exotic Animals
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy