অভিষেককুমার পান্ডের বাজেয়াপ্ত হওয়া গাড়ি। নিজস্ব চিত্র।
অভিযুক্তের পরিচয় প্রাথমিক ভাবে গোপন করেছিলেন তিনি। কিন্তু, শনিবার রাতে অভিষেককুমার পান্ডে গাড়ির মধ্যে যে নয়াবাদের ওই তরুণীকে মারধর করেছিলেন তার প্রমাণ মিলল ফরেন্সিক পরীক্ষায়। মঙ্গলবার দুপুরে ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা অভিষেকের বাজেয়াপ্ত গাড়ি এবং আনন্দপুরে আর আর প্লটের ঘটনাস্থলে গিয়ে বিভিন্ন নমুনা পরীক্ষা করেন। সূত্রের খবর, প্রাথমিক পরীক্ষায় অভিষেকের হন্ডা সিটি গাড়ির বেশ কয়েক জায়গায় রক্তের দাগ পাওয়া গিয়েছে। তবে, আনন্দপুরে চলন্ত গাড়িতে তরুণীর শ্লীলতাহানি এবং তাঁকে বাঁচাতে গিয়ে এক মহিলাকে পিষে দেওয়ার ঘটনায় দু’দিন পরেও অধরা অভিযুক্ত। তদন্তে উঠে আসছে একের পর এক নতুন তথ্য।
পুলিশ সূত্রে খবর, ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞরা তদন্তকারীদের জানিয়েছেন, গাড়ির সিট, ড্যাশ বোর্ড এবং গাড়ির দরজায় রক্তের দাগ পাওয়া গিয়েছে। নির্যাতিতা তরুণী শনি এবং রবিবার আনন্দপুর থানার পুলিশকে জানিয়েছিলেন যে, তাঁকে অভিষেক মারধর করে গাড়ির মধ্যে। ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞদের মতে গাড়ির মধ্যে হাতাহাতি-ধস্তাধস্তির চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে। রবিবার নয়াবাদের তরুণীকে যে দম্পতি উদ্ধার করেছিলেন, সেই দম্পতি— দীপ শতপথি এবং নীলাঞ্জনা চট্টোপাধ্যায় পুলিশকে জানিয়েছিলেন, শনিবার রাতে তরুণীকে উদ্ধার করার পর তাঁর সারা গায়ে নখের আঁচড়ের চিহ্ন দেখতে পান তাঁরা। এ ছাড়াও তরুণীর মুখে আঘাতের চিহ্ন ছিল, জামাকাপড় ছেঁড়া ছিল। সূত্রের খবর, গাড়ির মধ্যে তরুণীর জামার ছেঁড়া অংশ পাওয়া গিয়েছে। তদন্তকারীদের ধারণা, যে রক্তের চিহ্ন পাওয়া গিয়েছে তা দু’জনেরই হতে পারে। অর্থাৎ তরুণীর সঙ্গে ধস্তাধস্তিতে অভিযুক্তেরও রক্তপাত হয়ে থাকতে পারে। তাই একাধিক জায়গায়, বিশেষত গাড়ির ড্যাশবোর্ড এবং চালকের আসনের পিছনে রক্তের ছোপ পাওয়া গিয়েছে।
কিন্তু এই সমস্ত তথ্য পাওয়ার পরে আরও সংশয়ে তদন্তকারীরা। কারণ তরুণীর নয়াবাদের আবাসনের নিরাপত্তারক্ষী থেকে শুরু করে অন্য আবাসিকদের সঙ্গে কথা বলে তদন্তকারীরা জানতে পেরেছেন, সপ্তাহে অন্তত দু-তিন দিন নির্যাতিতা তরুণীকে আবাসনের সামনে নামিয়ে দিয়ে যেতেন অভিষেক। এ দিন অভিযুক্তের মা এবং জামাইবাবুই পুলিশকে জানিয়েছেন, অভিষেকের সঙ্গে ওই তরুণীর বেশ কিছু দিন ধরে সম্পর্ক তৈরি হয়েছে। পুলিশের কাছে স্পষ্ট নয়, অভিষেককে বাঁচানোর জন্যই কি তরুণী পুলিশকে অভিষেকের নাম গোপন করে অন্য নাম বলেন? এবং প্রথমে পুলিশকে জানিয়েছিলেন মাত্র পাঁচ দিন আগে অভিষেকের সঙ্গে আলাপ।
আরও পড়ুন: রাজ্য কমিটিতে ঢুকে খুশি নন? কাননে নতুন অস্বস্তি বিজেপির
গাড়ির সিট, ড্যাশ বোর্ড এবং গাড়ির দরজায় রক্তের দাগ পাওয়া গিয়েছে। নিজস্ব চিত্র।
এ সমস্ত প্রশ্নের উত্তর যখন পুলিশ খুঁজছে, তার মধ্যে অস্বস্তির কারণ হয়ে উঠেছে তদন্তের প্রথম ধাপে আনন্দপুর থানার ঢিলেমি। কারণ, কলকাতা পুলিশের গোয়েন্দা বিভাগের একটি দল যারা এই তদন্তে যোগ দিয়েছে, তাদের একটি অংশের ইঙ্গিত শহরেই গা ঢাকা দিয়েছিলেন অভিযুক্ত। শনিবার রাতে নীলাঞ্জনাকে পিষে পালিয়ে যাওয়ার পর পূর্ব যাদবপুর এলাকায় নিজের বাড়িতে গাড়ি রেখে অভিষেক গা ঢাকা দেয় বলে খবর পুলিশ সূত্রে। তদন্তকারীদের একটি অংশের দাবি, এর পর ওই এলাকার একটি হোটেলে গা ঢাকা দিয়ে ছিলেন অভিষেক। সোমবার গোটা কলকাতা জুড়ে ওই ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হওয়ার পর তিনি ফের অন্য কোথাও গা ঢাকা দেন। যদিও এই কথা ঠিক নয় বলে দাবি কলকাতা পুলিশের এক শীর্ষ কর্তার। সেখানে প্রশ্ন, পুলিশ ওই রাতেই বাইপাস এবং বিভিন্ন জায়গায় ট্রাফিক পুলিশের লাগানো সিসিটিভি ফুটেজ দেখে গাড়ির রেজিস্ট্রেশন নম্বর জোগাড় করার চেষ্টা করল না কেন? রবিবার দুপুরের মধ্যে গাড়িটি চিহ্নিত করা সম্ভব হলে অনেক আগেই জানা যেত গাড়ির মালিকের নাম। বোঝা যেত তরুণীর দাবি মতো অভিযুক্তের নাম অমিতাভ বসু নয়। তা হলে অনেক আগেই অভিযুক্তকে পাকড়াও করা যেত বলে ধারণা কলকাতা পুলিশের একাংশের।
আরও পড়ুন: মাদক-যোগে গ্রেফতার রিয়া, ভিডিয়ো কনফারেন্সে আদালতে পেশ আজই
তদন্তকারীদের একটি অংশের দাবি, অভিযুক্তের সঙ্গে বিয়ে হওয়ার কথা ছিল নির্যাতিতার। তাই তিনি অভিযুক্তের পরিচয় গোপন করার চেষ্টা করেছেন। কলকাতা পুলিশের এক কর্তা বলেন, ‘‘অভিযুক্তকে পাকড়াও করে নির্যাতিতার সঙ্গে সামনা সামনি কথা বললেই গোটা বিষয়টা পরিষ্কার হবে।”
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy