Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪

স্টেশন ঘুরে তদন্ত, রেকও দেখল ফরেন্সিক

সে দিন গার্ড ও চালক সজলবাবুর হাত আটকে যাওয়ার ঘটনা দেখেছিলেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। চালক কখন, কী ভাবে আপৎকালীন ব্রেক কষেছিলেন তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

মাপজোক: পার্ক স্ট্রিট স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে তদন্তে ফরেন্সিক দল। বুধবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

মাপজোক: পার্ক স্ট্রিট স্টেশনের প্ল্যাটফর্মে তদন্তে ফরেন্সিক দল। বুধবার। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৮ জুলাই ২০১৯ ০২:৪৩
Share: Save:

সজলকুমার কাঞ্জিলালের মৃত্যুর ঘটনাস্থল এবং মেট্রোর রেকটি পরীক্ষা করল ফরেন্সিক বিভাগ। বুধবার দুপুর ১টা নাগাদ ফরেন্সিক বিভাগের প্রধান বিজ্ঞানী ওয়াসিম রাজার নেতৃত্বে পার্ক স্ট্রিট মেট্রো স্টেশনে যায় দলটি। পুলিশ সূত্রের খবর, ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পরে নোয়াপাড়া কারশেডে গিয়ে সংশ্লিষ্ট রেকটিও পরিদর্শন করেন তাঁরা। এ দিন মূলত স্টেশন ও রেকের মাপজোক এবং নকশাগত জিনিস খতিয়ে দেখা হয়েছে। পরবর্তীকালে রেকটির প্রযুক্তিগত পরীক্ষা করা হবে।

শনিবার সন্ধ্যায় পার্ক স্ট্রিট স্টেশন থেকে মেট্রোয় উঠতে গিয়েছিলেন সজলকুমার কাঞ্জিলাল। তিনি উঠতে না পারলেও তাঁর হাতের কব্জি আটকে গিয়েছিল। সেই অবস্থায় ট্রেন চলতে শুরু করে। কিছু দূর গিয়ে মেট্রো থেমে যায় এবং দরজা খোলার সঙ্গে সঙ্গে সজলবাবু পড়ে যান। তার পরেই মৃত্যু হয় তাঁর। এই ঘটনায় কলকাতা মেট্রো কর্তৃপক্ষের বিরুদ্ধে গাফিলতির অভিযোগ উঠেছে। মামলা রুজু করে তদন্তে নেমেছে লালবাজার। সে দিন গার্ড ও চালক সজলবাবুর হাত আটকে যাওয়ার ঘটনা দেখেছিলেন কি না, তা নিয়েও প্রশ্ন উঠেছে। চালক কখন, কী ভাবে আপৎকালীন ব্রেক কষেছিলেন তা-ও খতিয়ে দেখছেন তদন্তকারীরা।

পুলিশের খবর, এ দিন পার্ক স্ট্রিট প্ল্যাটফর্মের মাপজোক হয়েছে। প্ল্যাটফর্মের দু’প্রান্ত সরলরেখা বরাবর আছে কি না, তা দেখেছেন ফরেন্সিক বিশেষজ্ঞেরা। কারণ, প্ল্যাটফর্ম সরলরেখায় না থাকলে গার্ড বা চালক তাঁদের কেবিন থেকে পুরোটা দেখতে পাবেন না। এর পাশাপাশি প্ল্যাটফর্মে তাঁদের নজরে কিছু বাধা দেয় কি না, সেটাও দেখা হয়েছে। সিসি ক্যামেরায় কোনও বাধা পড়ছে কি না, দেখা হয়েছে তা-ও। মেট্রোর সুড়ঙ্গের ভিতরে যেখান থেকে সজলবাবুকে উদ্ধার করা হয়েছিল, তা প্ল্যাটফর্ম থেকে কতটা দূর, সেটাও মেপেছেন ফরেন্সিক বিজ্ঞানীরা।

পুলিশের এক আধিকারিকের বক্তব্য, দাঁড়িয়ে থাকা মেট্রো চালু হলে, কতটা জোরে গেলে এবং কত সময়ের মধ্যে ওই দূরত্ব পৌঁছতে পারে, তা দেখা হবে। চালক আপৎকালীন ব্রেক কষলে কত দূর গিয়ে ট্রেন দাঁড়াবে, সেটাও হিসেব কষে দেখা হবে। তার ফলে বোঝা সম্ভব, চালক কত দূরে গিয়ে ঘটনা জেনেছিলেন এবং কোথায় আপৎকালীন ব্রেক কষেছিলেন। একই ভাবে মেট্রোর রেকটিও পরীক্ষা করা হয়েছে। কোন কামরায় ঘটনা ঘটেছিল, তা গার্ড ও চালকের কেবিন থেকে কতটা দূরে, সেই মাপজোক করা হয়েছে। ‘‘এই হিসেব কষতে হলে ওই কামরার অবস্থানও জানা জরুরি,’’ মন্তব্য ওই পুলিশ আধিকারিকের।

পুলিশ সূত্রের বক্তব্য, ঘটনার তদন্ত অত্যন্ত জটিল। প্রতি পদে বিজ্ঞানভিত্তিক তথ্যপ্রমাণ প্রয়োজন। পরবর্তীকালে মেট্রোর সেন্সরটি পরীক্ষা করা হবে। কী ধরনের সেন্সর ওই রেকে রয়েছে এবং তা কী ভাবে কাজ করে, সেটা জানা প্রয়োজন। ইতিমধ্যে মেট্রোর তরফে দাবি করা হয়েছে, সজলবাবুর কব্জি সরু হওয়ায় তা দরজায় আটকে গিয়েছিল। যা নিয়ে বিতর্ক দেখা দিয়েছে। পুলিশের একটি সূত্রের দাবি, ‘অবস্ট্রাকশন সেন্সর’ (যা লিফটে থাকে) থাকলে কব্জি সরু না মোটা, তা দেখে কাজ হবে না। দুই দরজার মাঝে যে কোনও ধরনের বাধা বুঝতে পারলেই দু’টি পাল্লা খুলে যাবে।

এই ঘটনায় কমিশনার্স অব রেলওয়ে সেফটি ইতিমধ্যেই পৃথক তদন্ত শুরু করেছে। মেট্রো জানিয়েছে, আজ বৃহস্পতিবার তারা নিজস্ব তদন্ত শুরু করবে।

অন্য বিষয়গুলি:

Forensic Department Kolkata Metro Park Street
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE