অপেক্ষা: আটকে থাকা যাত্রীরা। শনিবার, কলকাতা বিমানবন্দরের লাউঞ্জে। নিজস্ব চিত্র
কী বলা যায় একে! কপালের ফের! না কি সমাপতন!
সুভাষচন্দ্র বসুর নামাঙ্কিত বিমানবন্দরে তাঁর জন্মদিনেই কাটিয়ে গেলেন প্রায় চারশো বিদেশি নাগরিক। একেবারে বিনা আমন্ত্রণে। পরিকল্পনা ছাড়া, সূচিবিহীন যাত্রায়।
শুক্রবার গভীর রাত থেকেই প্রতিবেশী দেশের রাজধানী ঢাকার আকাশের মুখ ভার। শনিবার কাকভোরে অন্ধকার কাটার আগেই ঢাকার আকাশ থেকে মুখ ঘুরিয়ে
দু’টি বিদেশি বিমান চলে আসে কলকাতায়। নতুন কিছু নয়। এমন আগেও হয়েছে। কিন্তু সকাল সাড়ে ৯টা নাগাদ যখন খবর আসে যে, ঢাকার আকাশ থেকে মেঘ সরে গিয়েছে, তখন জানা যায়, ওই দুই বিদেশি বিমানের পাইলটদের ডিউটির নির্ধারিত সময় পেরিয়ে গিয়েছে। তাঁরা এখন আর উড়তে পারবেন না। কলকাতা থেকে ঢাকা পৌঁছতে লাগে বড়জোর আধ ঘণ্টা। কিন্তু সেটুকুও ওড়ার অনুমতিছিল না তাঁদের।
ফলে, নতুন পাইলটদের আসা পর্যন্ত শনিবার ভোর সাড়ে তিনটে থেকে সন্ধ্যা সাড়ে ন’টা পর্যন্ত, টানা ১৮ ঘণ্টা একটি বিমানের ভিতরে আটকে বসে থাকেন ২৭০ জন বিদেশি যাত্রী। আর অন্য বিমান থেকে ভোর চারটে নাগাদ বাকি ১৩৫ জন যাত্রীকে নামিয়ে বিমানবন্দরের লাউঞ্জে রাখা হয় শনিবার রাত প্রায় ১১টা পর্যন্ত। শারজা থেকে অন্য বিমানে রাতে বিকল্প পাইলটদের পাঠানো হয়। তাঁরাই যাত্রীদের নিয়ে উড়ে যান ঢাকায়।
এ দিন বিমানবন্দরের অধিকর্তা কৌশিক ভট্টাচার্য জানান, কলকাতার আকাশেও সকালে কুয়াশা ছিল। যার জেরে বেশ কিছু উড়ানদেরিতে ওঠানামা করে। কিন্তু সমস্যা হয় মূলত দু’টি বিদেশি বিমাননিয়ে। জেড্ডা থেকে ঢাকা যাওয়ার পথে ‘সৌদি আরবিয়া এয়ারলাইন্স’-এর বড় বোয়িং ৭৭৭ বিমান ২৭০ জন যাত্রীকে নিয়ে ভোর সাড়ে তিনটে নাগাদ কলকাতায় নামে। এয়ার ইন্ডিয়া কলকাতায় তাদের কাজকর্ম দেখভাল করে। ঠিক আধ ঘণ্টা পরেই শারজা থেকে ঢাকার পথে মুখ ঘুরিয়ে ১৩৫ জন যাত্রী নিয়ে শহরে নামে ‘এয়ার আরবিয়া’র এয়ারবাস ৩২০ বিমান। তাদের হয়ে কাজে নামে গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং সংস্থা ‘ভদ্র’।
কৌশিকবাবু জানিয়েছেন, সকালে ঢাকার আকাশ পরিষ্কার হতেইজানা যায়, দুই বিমানের চারপাইলটের ডিউটির সময়সীমা পেরিয়ে গিয়েছে। বিষয়টিকে বিমান পরিবহণের ভাষায় ‘ফ্লাইট ডিউটি টাইম লিমিটেশন’ বলা হয়। এই নিয়মের আওতায় পাইলট ও বিমানসেবিকারা একটানা একটি নির্দিষ্ট সময় পর্যন্ত উড়তেপারেন। তার পরে বাধ্যতামূলক ভাবে তাঁদের বিশ্রাম নিতে হয়। সারা বিশ্বেই এই নিয়ম মানা হয়। এ দিন জানা যায়, অন্তত ১০ ঘণ্টা বিশ্রাম না নিলে বিদেশি পাইলট ও বিমানসেবিকারা আর বিমান ওড়াতে পারবেন না।
বিমানবন্দর সূত্রের খবর, সৌদি আরবিয়া এয়ারলাইন্সের বিমানের ক্ষেত্রে এয়ার ইন্ডিয়া তড়িঘড়ি বিকল্প পাইলট ও বিমানসেবিকা জোগাড়ের কাজে নামে। ভারতের অন্য কয়েকটি শহরে নিয়মিত উড়ান চালায় ওই সংস্থা। অনেক সময়েই ওই সব বিমানবন্দরে উড়ান সংস্থার অতিরিক্ত পাইলট ও বিমানসেবিকারা অপেক্ষা করেন। খোঁজ নেওয়া হয়, তেমন কোনও দল কোথাও রয়েছে কি না। এক বার জানানো হয় দুপুর ১২টা, আর এক বার জানানো হয় দুপুর ২টোয় বিকল্প পাইলট ও বিমানসেবিকাদের আনা হবে কলকাতায়।
কৌশিকবাবু বলেন, ‘‘সেই কারণে ২৭০ জন যাত্রীকে না নামিয়ে বিমানেই বসিয়ে রাখা হয়। কিন্তু, রাত সাড়ে ন’টার আগে বিকল্প পাইলট ও বিমানসেবিকাদের
পাওয়া যায়নি। সেই বিকল্প দলকে কলকাতায় উড়িয়ে এনে রাতেই ঢাকা উড়ে যায় বিমানটি।’’ এয়ার আরবিয়া তাদের শারজা-চট্টগাম উড়ানের মুখ ঘুরিয়ে রাতে নামিয়ে আনে কলকাতায়। সেই উড়ানেই আসেন বিকল্প পাইলট ও বিমানসেবিকারা। এই উড়ানের যাত্রীদের নামিয়ে আন্তর্জাতিক লাউঞ্জে রাখা হয়।
আর কোভিড নেগেটিভ সার্টিফিকেট দেখিয়ে দুই বিমানের পাইলট ও সেবিকারা বিশেষ অনুমতি নিয়ে শহরের হোটেলে চলে যান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy