Advertisement
২৬ নভেম্বর ২০২৪
Accident

ভাঙা হাত নিয়ে ২৬ ঘণ্টায় পাঁচ হাসপাতাল ঘুরল বালক

মোট পাঁচটি সরকারি হাসপাতালে ‘রেফার’ হতে হতেই এতটা সময় পেরিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ গৌতম মাল নামে ওই বালকের পরিজনেদের।

ভুক্তভোগী: আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গৌতম। নিজস্ব চিত্র

ভুক্তভোগী: আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে গৌতম। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:০৩
Share: Save:

দুর্ঘটনায় হাতে গুরুতর চোট পাওয়া বালকের পুরোদস্তুর চিকিৎসা শুরু করতেই লেগে গেল প্রায় ২৬ ঘণ্টা।

গ্রাম থেকে জেলা, সেখান থেকে কলকাতা— মোট পাঁচটি সরকারি হাসপাতালে ‘রেফার’ হতে হতেই এতটা সময় পেরিয়ে গিয়েছে বলে অভিযোগ গৌতম মাল নামে ওই বালকের পরিজনেদের। তাঁদের দাবি, কোথাও বলা হয়েছে শয্যা নেই, কোথাও আবার জানানো হয়েছে চিকিৎসার পরিকাঠামো নেই। শুক্রবার সকালে দুর্ঘটনার পর থেকে তাই এ ভাবেই একের পর এক হাসপাতালে ঘুরেছে সঙ্কটজনক ওই বালক। শনিবার দুপুরে বিষয়টি জানাজানি হতেই অবশ্য আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের ট্রমা কেয়ারে ভর্তি করা হয়েছে বীরভূমের অষ্টম শ্রেণির ওই পড়ুয়াকে।

ওই ঘটনার পরে ‘রেফার চক্র’-এর প্যাঁচে পড়ে সরকারি হাসপাতালে গিয়ে রোগীর ভোগান্তির ছবিটা আরও এক বার সামনে এল। এ দিন বিকেলে হাসপাতালে দাঁড়িয়ে ওই বালকের বাবা গোপাল মালের আক্ষেপ, ‘‘ছেলের শারীরিক অবস্থা ক্রমশ খারাপ হচ্ছে দেখেও কিছু করতে পারছিলাম না। বারবার গাড়ি ভাড়া করে একের পর এক সরকারি হাসপাতাল ঘুরেছি।’’ স্বাস্থ্যসচিব নায়ারণস্বরূপ নিগম বলেন, ‘‘ওই বালকের চিকিৎসার বিষয়ে সব রকম পদক্ষেপ করা হচ্ছে।’’

আরও পড়ুন: ‘বাধ্য’ হয়েই কি স্বাস্থ্যসাথীতে নাম নতুন ২০ হাসপাতালের

আরও পড়ুন: বাড়ি ফিরলেন আইনি জটে ‘পাগল’ তকমায় বন্দি যুবক

বীরভূমের মুরারইয়ের বাসিন্দা পেশায় ভাগচাষি গোপালবাবু জানান, তাঁর ছেলে গৌতম কখনও গরুর গাড়িতে চাপেনি। বড়দিনের সকালে পিসেমশাইয়ের সঙ্গে ওই গাড়িতে চেপেই ধান দিতে গিয়েছিল বাড়ি থেকে কিছুটা দূরে। সকাল ১১টা নাগাদ সেখান থেকে ফেরার সময়ে আচমকাই নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে গরুর গাড়িটি উল্টে যাওয়ায় ছিটকে পড়ে গৌতম। রাস্তার ধারে থাকা ধান ঝাড়াইয়ের চলন্ত যন্ত্রের ভিতরে হাত ঢুকে বালকের বাঁ হাতের কনুইয়ের নীচের অংশ থেঁতলে যায়। হাড় ভেঙে যাওয়ার পাশাপাশি মাংসপেশি ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। রক্তাক্ত অবস্থায় ছেলেকে নিয়ে প্রথমে মুরারই গ্রামীণ হাসপাতালে যান গোপালবাবু।
তাঁর দাবি, সেখানে ভর্তির পরে কিছু চিকিৎসা করে বালকটিকে রামপুরহাটের হাসপাতালে স্থানান্তরিত করা হয়। বিকেল চারটের সময়ে সেখানে নিয়ে গেলে হাতে প্লাস্টার করে গৌতমকে বর্ধমান মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়।

আরও পড়ুন: মাস্কহীন যাত্রীদের জন্য কড়া নজর অ্যাপ-ক্যাবে

গোপালবাবুর কথায় ‘‘৩১৫০ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে রাত ৮টার সময়ে বর্ধমানে পৌঁছই। সেখানে কিছু ইঞ্জেকশন, ওষুধ দিয়ে আমাদের পিজিতে যেতে বলা হয়।’’ ফের সেখান থেকে সাড়ে তিন হাজার টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে রাত ২টোর সময়ে এসএসকেএম হাসপাতালে এসে পৌঁছন গোপালবাবুরা। ওই বালকের পরিজনেদের অভিযোগ, সেখানে জরুরি বিভাগে কিছু ক্ষণ দেখার পরে চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন, শয্যা খালি নেই। তাই নীলরতন সরকার মেডিক্যাল কলেজ, আর জি কর কিংবা ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।

সেই মতো ফের গাড়ি ভাড়া করে ছেলেকে নিয়ে এনআরএসে পৌঁছন গোপালবাবু। তাঁর কথায়, ‘‘চিকিৎসকেরা দেখে বললেন, ওখানে কিছু করা যাবে না। পিজিতেই আবার নিয়ে যান।’’ অগত্যা ভোর ৪টে নাগাদ ফের আগের হাসপাতালেই ফিরে যান বীরভূমের ওই বাসিন্দারা। তাঁদের দাবি, ফের চিকিৎসকেরা জানিয়ে দেন শয্যা ফাঁকা না থাকলে কিছু করা সম্ভব নয়। তখন গৌতমকে স্ট্রেচারে শুইয়ে রেখেই অপেক্ষা করতে থাকেন তার বাবা ও মামা। কিন্তু কোনও উপায় না হওয়ায় ভোর ৬টা নাগাদ সেখান থেকে ফের গাড়ি ভাড়া করে বেরিয়ে যান গোপালবাবুরা। এ দিক ও দিক ঘোরার পরে দুপুর ২টো নাগাদ তাঁরা এসে পৌঁছন আর জি কর হাসপাতালে।

সেখানেও প্রথমে পরিকাঠামোর অভাবের কথা বলে ফের পিজিতে নিয়ে যেতে বললেও পরে ট্রমা কেয়ারের অস্থি বিভাগে ভর্তি নেওয়া হয় গৌতমকে। আর জি কর হাসপাতাল সূত্রের খবর, প্রথমে ওই বালকের শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল করার পরে এ দিন রাতে আর্থোপেডিক ও প্লাস্টিক সার্জারি বিভাগ যৌথ ভাবে তার হাতে অস্ত্রোপচার করে। কিন্তু কেন আর জি কর হাসপাতাল থেকে ফের পিজিতে পাঠানো হচ্ছিল, সে বিষয়ে জানতে বারবার ওই হাসপাতালের কর্তৃপক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলেও কেউ ফোন ধরেননি, মেসেজেরও জবাব দেননি। তবে এসএসকেএম ও এনআরএস হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের বক্তব্য, ‘‘ঠিক কী ঘটেছিল তা খোঁজ নিয়ে দেখা হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Accident
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy