Advertisement
২৩ নভেম্বর ২০২৪

মরচে সরিয়ে টালা ট্যাঙ্কে রঙের প্রথম ধাপ শেষ

ব্রিটিশরা টালা ট্যাঙ্ক তৈরির সময়ে তার মধ্যে চারটি প্রকোষ্ঠ করেছিল, যাতে প্রয়োজনে মেরামতির জন্য একটি প্রকোষ্ঠ বন্ধ রাখলেও বাকি তিনটি চালু রাখা যায়। সেই মতোই এত দিন প্রথম প্রকোষ্ঠের মেরামতির কাজ চলছিল।

দর্শন: টালা ট্যাঙ্কের ছাদ থেকে শহর কলকাতা। নিজস্ব চিত্র

দর্শন: টালা ট্যাঙ্কের ছাদ থেকে শহর কলকাতা। নিজস্ব চিত্র

দেবাশিস ঘড়াই
কলকাতা শেষ আপডেট: ০৮ জুন ২০১৯ ০৩:৪৩
Share: Save:

প্রায় ৫০ মিটার বাই ৫০ মিটারের প্রকোষ্ঠ। সদ্য রং করা হয়েছে। আশপাশে স্তূপীকৃত হয়ে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে মরচের গুঁড়ো। তারই একপাশে দাঁড়িয়ে বছর ঊনত্রিশের সাইট ইঞ্জিনিয়ার বলছেন, ‘‘এই কম্পার্টমেন্টের কাজ প্রায় সম্পূর্ণ। দ্রুত চালু করে দেওয়া হবে। তার পরে দ্বিতীয় কম্পার্টমেন্টের কাজ শুরু হবে।’’ কিন্তু প্রকোষ্ঠের ভিতরে বেশি ক্ষণ দাঁড়ানোর উপায় নেই। স্টিলের তৈরি আয়তাকার কাঠামোটি যেন তখন ‘হিট চেম্বার’! ‘‘দেখে বোঝার উপায় আছে যে এমনি সময়ে এখানেই জল ভর্তি থাকে!’’— বলছেন ওই সাইট ইঞ্জিনিয়ার।

কত জল? তথ্য বলছে, টালা ট্যাঙ্কের ২০ ফুট উচ্চতার ওই একটি প্রকোষ্ঠের জলধারণ ক্ষমতা প্রায় সাড়ে ২২ লক্ষ গ্যালন। আর পুরো ট্যাঙ্কের জলধারণ ক্ষমতা প্রায় ৯০ লক্ষ গ্যালন। ব্রিটিশরা টালা ট্যাঙ্ক তৈরির সময়ে তার মধ্যে চারটি প্রকোষ্ঠ করেছিল, যাতে প্রয়োজনে মেরামতির জন্য একটি প্রকোষ্ঠ বন্ধ রাখলেও বাকি তিনটি চালু রাখা যায়। সেই মতোই এত দিন প্রথম প্রকোষ্ঠের মেরামতির কাজ চলছিল। কলকাতা পুরসভা সূত্রের খবর, কিছু দিনের মধ্যেই ফের ওই প্রকোষ্ঠ থেকে জল সরবরাহ চালু করা যাবে। তার পরে শুরু হবে দ্বিতীয় প্রকোষ্ঠ সংস্কারের কাজ।

প্রসঙ্গত, গত বছর থেকেই টালা ট্যাঙ্কে সংস্কারের কাজ শুরু হয়েছে। ২১৫টি লোহার স্তম্ভের উপরে ৮৫০০ টন লোহার ওই কাঠামোর প্রয়োজনীয় মেরামতির পাশাপাশি তাকে মজবুত করার কাজ চলছে। জল সরবরাহের প্রকোষ্ঠগুলির ভিতরে মরচে নিরোধক (অ্যান্টি করোসন) ফুড গ্রেড রঙের প্রলেপের পাশাপাশি পরের দফায় ট্যাঙ্কের বাইরের দেওয়ালে অতিবেগুনি রশ্মি নিরোধক রঙের প্রলেপ দেওয়া হবে। ইতিমধ্যে প্রথম প্রকোষ্ঠের ভিতরে রঙের প্রলেপের কাজ সম্পূর্ণ। তামিলনাড়ুর ‘সেন্ট্রাল ইলেক্ট্রো কেমিক্যাল রিসার্চ ইনস্টিটিউট’ (সিইসিআরআই)-এর পরামর্শ নিয়েই টালা ট্যাঙ্কের এই রঙের কাজ করছে পুরসভা।

রং করার পুরো প্রক্রিয়াটিই একটা এলাহি আয়োজন। শতাব্দীপ্রাচীন টালা ট্যাঙ্কের ভিতরে-বাইরের দেওয়ালে একশো বছরের পুরনো মরচের আস্তরণ জমেছে। তা থেকে নিস্তার পেতে ট্যাঙ্কের নীচে একটি ‘এয়ার কম্প্রেসার’ মেশিনের মাধ্যমে ‘কপার ব্লাস্টিং’ করে মরচে তোলা হচ্ছে। তার পরে ট্যাঙ্কের দেওয়াল রং করার উপযোগী করে তোলা হচ্ছে। এক পদস্থ আধিকারিকের কথায়, ‘‘প্রায় ৪০০ মাইক্রন ঘনত্বের পুরু রঙের প্রলেপ দেওয়া হয়েছে।’’

এমনিতে টালা ট্যাঙ্কের ছাদের উপরে দাঁড়ালে যেন এক বিশালাকার স্টেডিয়ামের মধ্যে দাঁড়িয়ে থাকার অনুভূতি হয়। পার্থক্য এটুকুই যে, এই স্টেডিয়ামে ঘাসের বদলে বসানো রয়েছে লোহার পাত! দূরে হাওড়া ব্রিজ, দ্বিতীয় হুগলি সেতু, শহরের উঁচু উঁচু বহুতল। মনে হয়, পুরো শহরটাই যেন বৃত্তাকারে ঘিরে রয়েছে ট্যাঙ্কটিকে।

তৈরির সময়ে টালা ট্যাঙ্কের ছাদ ছিল লাইম কংক্রিট দিয়ে তৈরি। তা ছিল প্রায় ৮ ইঞ্চি পুরু। পরে আশির দশকে যখন টালা ট্যাঙ্ক সংস্কারের ছোট কাজ হয়েছিল, তখন লাইম কংক্রিটের পরিবর্তে প্রায় ১০ হাজার ‘প্রি-কাস্ট কংক্রিট স্ল্যাব’ বসানো হয় টালা ট্যাঙ্কের উপরে। সেই স্ল্যাব ছিল গড়ে ৩ ইঞ্চি পুরু। কিন্তু সেগুলি নানা ভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় এ বার পুরসভা প্রায় ৮ মিলিমিটার পুরু লোহার পাত বসিয়ে আরও মজবুত করার কাজ (রেট্রোফিটিং) করছে। ট্যাঙ্কের উপরিভাগের একটা বড় অংশে সে কাজ করাও হয়ে গিয়েছে। এক আধিকারিক বলেন, ‘‘এত উঁচুতে এটা পুরোটাই ‘ব্যালান্স ট্যাঙ্ক’। ফলে ওজনের একটু এদিক-ওদিক হলে ভারসাম্য এক না-ও থাকতে পারে। সে কারণেই পুঙ্খানুপুঙ্খ ভাবে হিসেব কষে প্রয়োজনীয় পরিবর্তনের কাজ করা হচ্ছে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

KMC Tala Tank
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy