Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Firecracker

Firecracker: বাজি শিল্প কি শেষের পথে, শঙ্কায় ব্যবসায়ীরা

চিংড়িপোতার মন্টু দাস আবার বাজির কারখানা বন্ধ করে এলাকাতেই শুরু করেছেন পানীয় জল বিক্রির ব্যবসা।

প্রতীকী ছবি

প্রতীকী ছবি

জয়তী রাহা
কলকাতা শেষ আপডেট: ০১ নভেম্বর ২০২১ ০৬:১৭
Share: Save:

কলকাতা হাইকোর্টের রায়ে কালীপুজো ও দীপাবলিতে বাজি নিষিদ্ধ হওয়ায় স্বস্তি প্রকাশ করেছেন অনেকেই। কিন্তু কী অবস্থায় রয়েছে বাজি ব্যবসার সঙ্গে জড়িত অসংখ্য পরিবার?

কর্মহীন হয়ে এবং ব্যবসার জন্য নেওয়া ধার শোধ করতে না পেরে পেশা বদল করে বাঁচতে চাইছেন অনেকে। যেমন, সদ্য উনিশ ছোঁয়া রাজিবুল লস্কর দক্ষ বাজি কারিগর হয়েও কর্মহীন। থলেতে সামান্য আনাজ ভরে উত্তর শহরতলির পাড়ায় পাড়ায় বিক্রি করেন তিনি। দক্ষিণ ২৪ পরগনার বলরামপুরের সফিকুল মল্লিক দশ বছর ধরে বাজি তৈরির ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। দু’টি বাচ্চা, স্ত্রী, মা ও ভাইকে নিয়ে তাঁর সংসার। ৩০ জন কর্মী নিয়ে ছিল তাঁর ব্যবসা। দেনার দায়ে গত কালীপুজোর আগেই বন্ধ হয়েছে সে সব। পেটের দায়ে রাজমিস্ত্রির জোগাড়ের কাজে নেমেছিলেন সফিকুল। কিন্তু তেমন আয় না হওয়ায় এখন তামিলনাড়ুতে কুলিং টাওয়ারের কাজ নিয়ে চলে গিয়েছেন তিনি।

চিংড়িপোতার মন্টু দাস আবার বাজির কারখানা বন্ধ করে এলাকাতেই শুরু করেছেন পানীয় জল বিক্রির ব্যবসা। বাড়িতে রয়েছেন স্ত্রী, মেয়ে, শাশুড়ি। নুঙ্গির শুকদেব নস্কর গত ২৮ বছর ধরে এই ব্যবসায় যুক্ত ছিলেন। পড়াশোনা শেষ করে অন্য চাকরি না পেয়ে পারিবারিক ব্যবসায় যোগ দিয়েছিলেন তরুণ বয়সে। আজ তাঁর মেয়ে স্নাতকোত্তর স্তরের পড়ুয়া। যে ব্যবসার গুণে জীবনে সুখের মুখ দেখেছিলেন, তালা ঝুলিয়ে দিতে হয়েছে তাতেই। এখন নুডলস, সয়াবিন বিক্রি করে দিন চালাচ্ছেন শুকদেব।

রোজ বন্ধ কারখানার সামনে দাঁড়িয়ে দীর্ঘশ্বাসের পাশাপাশি ওঁদের তাড়া করে বেড়ায় ব্যাঙ্কের সুদ মেটানোর তাড়া। সপ্তাহান্তে কাউকে দেড় হাজার, কাউকে বা তারও বেশি টাকার তাগাদা দিতে হাজির হন ব্যাঙ্কের কর্মীরা। কারণ, উৎসবের মরসুমে বিপুল উৎপাদন করে লাভের আশায় ওঁরা ব্যাঙ্ক থেকে ধার নিয়ে ব্যবসায় লাগাতেন। গত বছর থেকে বাজারে হাজার হাজার টাকা বকেয়া পড়ে। বাকি পড়ে অসংখ্য কারিগরের মজুরিও। কারখানার মালিকদের তুলনায় আরও দুর্বিষহ অবস্থা বাজি কারিগরদের।

শুকদেব, সফিকুলদের প্রশ্ন, ‘‘সরকার তবে কেন এই ব্যবসার প্রশিক্ষণ দিয়ে উৎসাহিত করেছিল তরুণ সমাজকে?’’ ২০০৭ সাল থেকে বাজি তৈরি আরও বিজ্ঞানসম্মত করতে কেন্দ্রীয় সরকারের এমএসএমই মন্ত্রক (মিনিস্ট্রি অব মাইক্রো, স্মল অ্যান্ড মিডিয়াম এন্টারপ্রাইজ়েস) এক মাস ধরে রাজ্যের বাজি কারিগরদের চম্পাহাটিতে প্রশিক্ষণ দেয়। উন্নত আলোর বাজি তৈরি এবং সুরক্ষা ছিল প্রশিক্ষণের মূল বিষয়বস্তু। ২০১৭ সালেও পরিবেশবান্ধব আতশবাজি তৈরির জন্য রাজ্য সরকার প্রশিক্ষণ দেয়।

‘‘ভবিষ্যৎ আছে ভেবে বহু কর্মহীন যুবক এই ব্যবসায় যুক্ত হতে এগিয়ে এসেছিলেন। রাজ্যের প্রায় সাত লক্ষ পরিবার এখন অথৈ জলে পড়েছে। এর দায় কে নেবে?’’ প্রশ্ন হাড়ালের আতশবাজি ব্যবসায়ী সমিতির সঙ্গে যুক্ত শঙ্কর মণ্ডলের। আশি-নব্বইয়ের দশকে বুড়িমা ব্র্যান্ডের বাণিজ্যিক দিকটি দেখতেন তিনি। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘আতশবাজি শিল্পকে বাঁচাতে সরকার কি আদৌ কোনও বিকল্প পথ ভাবছে?’’

আতশবাজি কারবারিদের আশঙ্কা, সরকারের সহায়তা ছাড়া তলিয়ে যাবে গন্ধক, কাঠকয়লা আর পটাশিয়াম নাইট্রেটের মিশ্রণে শুরু হওয়া প্রায় ১৩০০ বছরের প্রাচীন এই শিল্প। যার প্রথম ব্যবহারের উল্লেখ মেলে চিন দেশে। মধ্যযুগ থেকে আতশবাজির জনপ্রিয়তা ছড়িয়ে পড়ছিল ইউরোপে। ইটালি থেকে স্পেন, ইংল্যান্ড, জার্মানিতে। ব্রিটিশদের সঙ্গে বাজি পাড়ি দেয় আমেরিকাতেও। ঊনবিংশ শতকের প্রথমার্ধে বাজি শিল্পে রং যোগ করে ইটালি। আজকের রঙিন আতশবাজির জন্ম সেই সময়েই।

অন্য বিষয়গুলি:

Firecracker Kali Puja 2021
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy