রাজ্যপাল বোসকে দেখা যায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলতে। পরে ঘটনাস্থলে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রীও। নিজস্ব চিত্র।
রাজভবনের অদূরে অফিসপাড়ার আগুন অবশেষে নিয়ন্ত্রণে। বুধবার সকাল ১০টা নাগাদ বিবাদী বাগ চত্বরে টেলিফোন ভবনের কাছেই একটি বহুতলে আগুন লেগেছিল। কালো ধোঁয়ায় ঢেকে গিয়েছিল গোটা এলাকা। দাউ দাউ করে জ্বলতে দেখা যায় ওই বহুতলের উপরের অংশটি। আগুনের খবর পেয়ে কয়েক পা দূরেই রাজভবন থেকে রাস্তায় বেরিয়ে আসেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। পরে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও পৌঁছন বিবাদী বাগ চত্বরে। অবশেষে অফিসপাড়ার সেই আগুন প্রায় তিন ঘণ্টার চেষ্টায় নিয়ন্ত্রণ করা গেল। দুপুর ১টা ৪০ মিনিট নাগাদ দমকল বাহিনীর এক আধিকারিক জানিয়ে দেন, আগুন পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে। আপাতত ঠাণ্ডা করার প্রক্রিয়া চলছে। তবে এই কাজ বিকেল পর্যন্ত চলতে পারে।
টেলিফোন ভবনের পিছনে যে বহুতলে ওই আগুন লেগেছিল সেটির নাম শরাফ হাউস। তার ভিতরে রয়েছে বেশ কিছু অফিস। এর মধ্যে একটি রাষ্ট্রায়ত্ত ব্যাঙ্কের দফতরও। অনুমান, ওই বহুতলের ছাদে ব্যাঙ্কের ক্যান্টিন থেকেই আগুন লাগে। আগুন লাগার আগে সেখান থেকে একটি জোরে বিস্ফোরণের শব্দ পাওয়া যায় বলে জানিয়েছিলেন স্থানীয়েরা। যা সিলিন্ডার বিস্ফোরণের ঘটনা বলেই মনে করছেন অনেকে। ওই শব্দের কিছু ক্ষণের মধ্যেই আগুন ছড়িয়ে পড়তে দেখা যায় শরাফ হাউসের ছাদের উপরের অংশে। পরে তার পাশের কয়েকটি বহুতলেও আগুন ছড়িয়ে পড়ে। এমনকি, শরাফ হাউসে পর পর চারটি এসি বিস্ফোরণ হতেও দেখা যায় বলে স্থানীয় সূত্রে খবর।
আগুন লাগার খবর পেয়ে রাজভবন থেকে রাস্তায় বেরিয়ে এসেছিলেন রাজ্যপাল। পরে তাঁকে দেখা যায় গোটা পরিস্থিতির তদারকি করতে। আগুন লাগার দেড় ঘণ্টা কেটে গেলেও বুধবার দুপুর সোয়া ১২টা নাগাদ রাজ্যপালকে দেখা যায় শরফ হাউসের উল্টোদিকে দাঁড়িয়ে থাকতে। সংবাদ মাধ্যমকে পরে রাজ্যপাল বলেন, ‘‘পুলিশ ভাল কাজ করেছে, রাজভবনের চিকৎসক এবং কর্মীরা ঘটনাস্থলে সাহায্য করেছে।’’ পরে সাড়ে ১২টা নাগাদ ঘটনাস্থলে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী মমতা। তিনি বলেন, ‘‘আগুন লেগেছিল, আমাদের দমকল কর্মীরা আগুন প্রায় নিভিয়ে এনেছেন। ওঁদের অভিনন্দন জানাচ্ছি।’’
আগুনের খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছেছিল দমকলের ১৪টি ইঞ্জিন। প্রথমে দমকলের দশটি ইঞ্জিন ঘটনাস্থলে পৌঁছলেও পরে দমকল মন্ত্রী সুজিত বসু জানান আরও চারটি ইঞ্জিন, দমকলের ব্যবহারের বিশেষ মই এবং ব্রন্টো স্কাইলিফট আনা হচ্ছে আগুন নেভানোর জন্য। বহুতলের একেবারে উপরের তলে আগুন লাগায় নীচে দাঁড়িয়ে হোসপাইপ দিয়ে ছোড়া জল উপর পৌঁছচ্ছিল না। সেই সমস্যার মোকাবিলা করতেই বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়। দুপুর সাড়ে ১২টা নাগাদ নতুন পদ্ধতিতে আগুন নেভানোর চেষ্টা শুরু হয়। এবং সাফল্যও আসতে শুরু করে।
বুধবার বিবাদী বাগ চত্বরে পৌঁছেছিলেন পুলিশ কমিশনার বিনীত গোয়েল। তিনি বলেছেন, ‘‘ওই বহুতলের ভিতরে কেউ আটকে ছিলেন না। তবে এক জন রক্ষী সামান্য জখম হন। তাঁকে উদ্ধার করে বাইরে এনে চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’ একই সঙ্গে কমিশনার জানান, ওই আগুন যাতে আশপাশের বহুতলগুলিতে ছড়িয়ে না পড়ে তারও যথাযথ ব্যবস্থা করা হয়েছে।’’
ঘটনাস্থলে পৌঁছে স্থানীয় কাউন্সিলর আবার অভিযোগ করেন শরাফ হাউসে বেআইনি কাজের। তিনি বলেন, ‘‘শরাফ হাউসে বেআইনি ভাবে কিছু নির্মাণ করা হয়েছিল। অনেক নিয়ম মানা হয়নি।’’ এ ব্যাপারে তাঁর কাছে বহু অভিযোগ জমা পড়েছিল সে ব্যাপারে শরাফ হাউসকে অবহিত করাও হয়েছিল। কিন্তু তার পরও সুরাহা হয়নি বলে জানিয়েছেন কাউন্সিলর। পরে দমকল মন্ত্রী সুজিত জানান, ‘‘কী ভাবে আগুন লেগেছে, তা তদন্তের পরই জানা যাবে।’’ শহরের মেয়র ফিরহাদ হাকিমও জানান, তিনি বেআইনি কাজ হয়েছে কি না, তা খতিয়ে দেখবেন।
বুধবার সকালে এই আগুন লাগার ঘটনার পর রাজ্যপাল বোসকে দেখা যায় রাস্তায় দাঁড়িয়ে আধিকারিকদের সঙ্গে কথা বলতে। তাঁর পোশাক দেখে বোঝা যাচ্ছিল, আগুনের খবর পেয়ে তিনি বাড়ির পোশাকেই কোনও মতে রাজভবন ছেড়ে রাস্তায় নেমেছেন। সূত্রের খবর, রাজভবনের কাছেই দাঁড়িয়ে ডিজির সঙ্গে ফোনে কথাও বলেন রাজ্যপাল।
সংবাদমাধ্যমকে বলেন, ‘‘পুলিশ ভাল কাজ করছে। ট্রাফিকও যথাযথ ভাবে নিয়ন্ত্রিত হয়েছে। আগুন নিয়ন্ত্রণে আসবেই।’’ পরে এ প্রসঙ্গে দমকলমন্ত্রী সুজিতকে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, ‘‘রাজভবনের কাছেই হয়েছে। তাই উনি এসেছিলেন।’’ যদিও রাজ্যপালকে দেখা যায়, সকাল পৌনে ১১টা থেকে দুপুর সোয়া ১২টা পর্যন্ত সেখানেই দাঁড়িয়ে থাকতে। এর কিছু ক্ষণ পরেই শরাফ হাউস চত্বরে এসে পৌঁছন মুখ্যমন্ত্রী।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy