Advertisement
E-Paper

বাজি থামাল বৃষ্টি, বৃষ্টি থামতেই কালীপুজোর রাত শব্দবাজির দখলে

আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও শব্দবাজিকেই পুলিশ-প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে, সার্বিক আইন-কানুন কী ভাবে রক্ষা হবে রাজ্যে?

উপেক্ষা: নিষেধ উড়িয়ে শহরের আকাশে শব্দবাজি। সোমবার।  ছবি: রণজিৎ নন্দী।

উপেক্ষা: নিষেধ উড়িয়ে শহরের আকাশে শব্দবাজি। সোমবার। ছবি: রণজিৎ নন্দী।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২৫ অক্টোবর ২০২২ ০৭:০৬
Share
Save

যত ক্ষণ বৃষ্টি হচ্ছিল, তত ক্ষণ একটু চুপচাপ। বৃষ্টি থামতেই প্রতি বছরের মতো একই ঘটনা ঘটল। চলতি বছরেও কলকাতা ও শহরতলি-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গায় শব্দবাজির আওয়াজে রীতিমতো অতিষ্ঠ হলেন সাধারণ নাগরিক। ত্রস্ত পশুপাখিরা। পরিস্থিতি দেখে মনেই হচ্ছিল না যে, শব্দবাজির উপরে সুপ্রিম কোর্ট, কলকাতা হাই কোর্টের বিন্দুমাত্র কোনও নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। যেন আদালতের তরফে সম্পূর্ণ ভাবে ছাড় দেওয়া হয়েছে শব্দবাজিকে! নিষেধাজ্ঞার পরেও এই ঘটনা কী ভাবে ঘটতে পারে, তা নিয়ে বিস্মিত সচেতন নাগরিক এবং পরিবেশকর্মীরা।

তাঁদের প্রশ্ন, আদালতের নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও শব্দবাজিকেই পুলিশ-প্রশাসন নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে, সার্বিক আইন-কানুন কী ভাবে রক্ষা হবে রাজ্যে? কারণ, পুরো ঘটনা তো শুধু শব্দবাজি ও তার দাপট, জনস্বাস্থ্যের উপরে তার খারাপ প্রভাবের উপরেই সীমাবদ্ধ নেই। বরং এর সঙ্গে আদালতের রায় মান্য করার বিষয়টিও জড়িয়ে রয়েছে। সেই নির্দেশ পালনে ব্যর্থতা মানে, তা আদালত অবমাননার শামিল।

যেটা হল সোমবার। রাত যত বেড়েছে, ততই এ দিন কাশীপুর, নাগেরবাজার, সিঁথি, উল্টোডাঙা, জোড়াবাগান থেকে কসবা, বড়বাজার, হেয়ার স্ট্রিট, যাদবপুর, গরফা, ভবানীপুর-সহ কলকাতার বিস্তীর্ণ এলাকায় মুহুর্মুহু বাজি ফেটেছে বলে অভিযোগ করছেন স্থানীয় বাসিন্দাদের একাংশ। রাতে সল্টলেকের সুইমিং পুল এলাকায় এক বিধায়কের পুজোর সামনেও ফেটেছে দেদার শব্দবাজি। অভিযোগ, পাশেই পুলিশ ছিল দর্শকের ভূমিকায়। পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সাধারণ সম্পাদক নব দত্ত জানাচ্ছেন, কালীপুজোয় তো বটেই, আগের দিন, অর্থাৎ রবিবারও একই ভাবে বাজি ফেটেছে। আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও এটা কী ভাবে সম্ভব, তা সত্যিই বোধগম্য হচ্ছে না। এমনকি, শব্দবাজি উপদ্রুত এলাকায় পুলিশকে টহল দিতে চোখে পড়েনি বলেও অভিযোগ করেছে সংগঠন। তাঁর কথায়, ‘‘রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদকে জবাব দিতে হবে। কেন প্রতি বার তাদের গাফিলতির জন্য নাগরিকদের ফল ভোগ করতে হবে, উত্তর দিক পর্ষদ।’’

রাজ্যের পরিবেশ দফতর অবশ্য দাবি করেছে, রবিবার পর্যন্ত কলকাতা পুলিশ এলাকা-সহ রাজ্যের বিভিন্ন জায়গা থেকে প্রায় ১৩ হাজার কিলোগ্রাম বেআইনি বাজি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে। পুলিশে অভিযোগ দায়ের হয়েছে ১৯৭টি। গ্রেফতার হয়েছেন ১৮৫ জন। এর মধ্যে সব থেকে বেশি বাজি বাজেয়াপ্ত হয়েছে কলকাতা পুলিশ এলাকা থেকে। প্রায় ৮ হাজার কিলোগ্রাম। তার পরেই রয়েছে যথাক্রমে হাওড়া ও বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেট। ওই দুই এলাকা থেকে যথাক্রমে প্রায় ১৬০০ ও ১৩০০ কিলোগ্রাম বাজি উদ্ধার হয়েছে। সোমবার ভোর থেকে রাত ১১টা পর্যন্ত কলকাতা পুলিশ এলাকার ২৫৯ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে। এ দিন বেআইনি বাজি বাজেয়াপ্ত হয়েছে ৪২০.৬৫ কেজি এবং মদ ৫৯ লিটার।

রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কন্ট্রোল রুমে কালীপুজোর রাত সাড়ে ১০টা পর্যন্ত ৪১টি অভিযোগ দায়ের হয়েছে। সব থেকে বেশি অভিযোগ এসেছে দক্ষিণ কলকাতা থেকে। পর্ষদের কন্ট্রোল রুমে রাজ্যের পরিবেশমন্ত্রী মানস ভুঁইয়া উপস্থিত ছিলেন। তা ছাড়া কন্ট্রোল রুমে কলকাতা ও বিধাননগর পুলিশ কমিশনারেটের প্রতিনিধিরাও ছিলেন। রাস্তায় পুলিশকে না দেখতে পাওয়া নিয়ে কলকাতা পুলিশের এক কর্তার বক্তব্য, ‘‘পুলিশ তো অন্যকে দেখিয়ে কাজ করবে না। পুলিশ নিজের মতো কাজ করেছে। তা বাজেয়াপ্ত বাজি এবং গ্রেফতারির সংখ্যাতেই পরিষ্কার।’’ পর্ষদের এক শীর্ষ কর্তার বক্তব্য, ‘‘বাজি একদম ফাটেনি, তা বলা যাবে না। এত দশকের সংস্কৃতি তো রাতারাতি পাল্টানো যাবে না। তবে এটাও ঠিক, আগের বছরের তুলনায় অনেক কম বাজি ফেটেছে।’’

তবে বাজি কম ফাটার কৃতিত্ব পর্ষদ বা পুলিশকে দিতে নারাজ পরিবেশকর্মীদের একাংশ। কিছু ক্ষণের জন্যও যদি বাজি কম ফেটে থাকে, তার সৌজন্যে প্রকৃতি, মত তাঁদের। শব্দদূষণ নিয়ে জাতীয় পরিবেশ আদালতে মামলাকারী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের কন্ট্রোল রুমে অভিযোগ দায়ের করে কাজ হয়নি। বৃষ্টি হচ্ছিল বলে কিছু ক্ষণ রেহাই মিলেছিল। থামতেই যে কে সে-ই। এ বার থেকে শব্দবাজির তাণ্ডব থামাতে বৃষ্টির উপরেই ভরসা করতে হবে। পুলিশ-প্রশাসন পারবে না।’’

এক পরিবেশবিজ্ঞানী বলছেন, ‘‘একটা ব্যাপার এ বছরও পরিষ্কার হয়ে গেল, এ রাজ্যে বাজি ফাটবেই। সে সুপ্রিম কোর্ট, কলকাতা হাই কোর্ট, জাতীয় পরিবেশ আদালত, যারই নিষেধাজ্ঞা থাক না কেন!’’

kali Puja 2022 Fire Cracker noise pollution

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।