গ্রাফিক: সনৎ সিংহ।
আরজি কর-কান্ডে ধৃত সিভিক ভলান্টিয়ারকে হেফাজতে নিয়ে টানা জেরা করেছে পুলিশ। একই সঙ্গে চলছে মৃতার সুরতহাল রিপোর্ট এবং ময়নাতদন্ত রিপোর্টের বিশ্লেষণ। যা থেকে প্রাথমিক ভাবে পুলিশ দাবি করছে, মৃতার শরীরের কোনও হাড় ভাঙা (ফ্র্যাকচার) নেই। যদিও শরীরের উপরিভাগে ক্ষত রয়েছে। প্রসঙ্গত, ঘটনার পরে প্রথম থেকেই কোনও কোনও মহল থেকে দাবি করা হচ্ছিল, মৃতার ‘পেলভিক বোন ’বং ‘কলার বোন’ ভাঙা অবস্থায় পাওয়া গিয়েছে। যা থেকে বিভিন্ন তত্ত্ব তৈরি হচ্ছিল। কিন্তু পুলিশের এই প্রাথমিক দাবি পুরো বিষয়টির মোড় খানিকটা হলেও ঘুরিয়ে দিতে পারে বলে অনেকে মনে করছেন।
ধৃতের ডিএনএ নমুনা ইতিমধ্যেই পাঠানো হয়েছে পরীক্ষার জন্য। পাশাপাশিই, পুলিশ বিভিন্ন ফুটেজ ইত্যাদি খতিয়ে দেখে বার করার চেষ্টা করছে যে, ঘটনাস্থলে ধৃত একা ছিলেন, না তাঁর সঙ্গে আরও কয়েক জন ছিলেন। কারণ, মৃতার শরীরের প্রাথমিক পর্যবেক্ষণ থেকে এমন ধারণা জোরালো হচ্ছে যে, ধৃতের একার পক্ষে ওই ঘটনা ঘটানো কঠিন। পুলিশ তা-ই সেই বিষয়টিও খতিয়ে দেখছে।
তদন্তের স্বার্থে সোমবার এক মহিলাকে ডেকে পাঠানো হয়েছিল লালবাজারে। পুলিশ বা সিভিক ভলান্টিয়ারের সঙ্গে বেশি পরিচয় ছিল, এমন পাঁচ জনকে সোমবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। পুলিশ সূত্রের খবর, জেরায় ধৃত অভিযুক্ত দাবি করেছেন, তিনি আগে সেমিনার হল’এ যাননি। তিনি হাসপাতালের অপারেশন থিয়েটার খুঁজছিলেন বলে পুলিশের কাছএ দাবি করেছেন। জানিয়েছেন, তাঁর পরিচিত কারও অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা ছিল। তিনি তাঁকেই খুঁজছিলেন। তখনই তিনি ওই মহিলা চিকিৎসককে সেখানে দেখেন। তার পরে ঘটনাটি ঘটান। ঘটনার পরদিন ধৃত ৪ নম্বর ব্যাটালিয়নে তাঁর বাসস্থানে ফিরে যান। তত ক্ষণে বিষয়টি জানাজানি হয়ে গিয়েছে। ব্যাটালিয়নে এক জন ধৃতকে আরজি করের ঘটনাটি জানান। শুনে তিনি বলেন, ও আচ্ছা! ব্যাপারটা দেখবেন। তার পরেই পুলিশ গিয়ে অভিযুক্তকে তুলে আনে।
হাসপাতাল থেকে মৃতার বাড়িতে যিনি ফোন করে প্রথম খবর দিয়েছিলেন, আরজি করের সেই সহকারী সুপারকে মঙ্গলবার লালবাজারে ডেকে পাঠিয়েছে পুলিশ। প্রসঙ্গত, মৃতার পরিবারের লোকজন জানিয়েছেন, প্রথমে হাসপাতাল থেকে তাঁদের ফোন করে বলা হয়েছিল, তাঁদের মেয়ে আত্মহত্যা করেছেন। পরে দেখা যায়, সেটি খুনের ঘটনা। তারও পরে ধর্ষণের তত্ত্ব প্রকাশ্যে আসে। তখন পুলিশ ধর্ষণ এবং খুনের মামলা রুজু করে তদন্তে নামে। প্রথম থেকেই প্রশ্ন ছিল, কেন প্রথমেই ওই মৃত্যুকে আত্মহত্যা বলে বর্ণনা করা হল। সোমবার মৃতার বাড়িতে গিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ও তেমনই অভিযোগ পান। তিনিই বেরিয়ে জানান, কে প্রথম ওই কথা বলেছিলেন, তা খোঁজ করা হবে। তাঁকেও প্রশ্ন করবে পুলিশ।
সোমবার জিজ্ঞাসাবাদের জন্য মোট ৭ জন চিকিৎসককেও ডেকে পাঠানো হয়েছিল লালবাজারে। এঁরা ঘটনার দিন ‘অন ডিউটি’ ছিলেন। এঁদের মধ্যে ৪ জন এক সঙ্গে রাতের খাবার খেয়েছিলেন। বাকি ৩ জন ওই ৪ জনের সঙ্গে দেখা করেছিলেন বা তাঁদের পরস্পরের সঙ্গে যোগাযোগ হয়েছিল। প্রয়োজনে এঁদের আবার লালবাজারে ডাকা হতে পারে। ধৃতের সঙ্গে আরও কেউ ছিলেন কি না, তা খতিয়ে দেখার জন্য সিসিটিভি ফুটেজ দেখা হচ্ছে এবং আরও লোকজনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে। সমস্ত ফ্লোরের সিসিটিভি ফুটেজ খতিয়ে দেখা হচ্ছে। মৃতার পরিবারের ধারনা, ঘটনার পিছনে ‘চক্রান্ত’ থাকতে পারে। কেউ কাউকে টাকা দিয়ে থাকতে পারেন। সেই অনুযায়ী ওই ঘটনায় পিছন থেকে কেউ ইন্ধন দিয়েছিলেন কি না, তা-ও দেখা হচ্ছে। ঠিক হয়েছে, গত এক মাসের সিসিটিভি ফুটেজ সময় ভাগ ভাগ করে দেখা হবে।
মুখ্যমন্ত্রী মমতা ঘোষণা করেছেন, পাঁচ দিনের মধ্যে ককাতা পুলিশ তদন্তে ‘উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি’ না-দেখাতে পারলে তিনি ঘটনার তদন্তভার সিবিআইকে দিয়ে দেবেন। সেই কারণেই তদন্তের গতি আরও দ্রুত করতে বাড়তি ‘সক্রিয়’ হয়েছে কলকাতা পুলিশ। তদন্তের ‘আওতা’ আরও বাড়ানো হচ্ছে। ঠিক হয়েছে, ঘটনার রাতে হাসপাতালের অন্যান্য ফ্লোরে যাঁরা ছিলেন, তাঁদেরও জিজ্ঞাসাবাদ করা হবে। ঘটনার তদন্তে যে বিশেষ তদন্তকারী দল (সিট) গঠন করা হয়েছিল, তার সদস্যও বাড়িয়েছে পুলিশ। ডিসিপি অমিত ভার্মাকে ওই দলে নেওয়া হয়েছে। আগে ৭ জনের ‘সিট’ ছিল। এখন তার সদস্যসংখ্যা ১২। মোট তিনটি শিফ্টে দৈনিক তদন্তের কাজ চলবে। একটি শিফ্টে কাজ করবেন ৫০ জন।
পাশাপাশিই ধৃতের ‘ক্রিমিনাল অ্যাক্টিভিটি’ও খতিয়ে দেখা হচ্ছে। অর্থাৎ, এর আগে তাঁর কোনও ফৌজদারি অপরাধের ইতিহাস আছে কি না। আগে তিনি কাকে কাকে ওই হাসপাতালে ভর্তি করিয়েছেন, দেখা হচ্ছে তা-ও। ধৃতের ডিএনএ নমুনা পরীক্ষার জন্য পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত বিশেষজ্ঞেরা হাসপাতালে গিয়েছেন। বিষয়টি যাতে তাঁরা বিশদে বুঝতে পারেন, তাই তাঁদের সঙ্গে কিছু কিছু তথ্য বিনিময় করছে পুলিশ। হাসপাতালের সিসিটিভি আটক করেছে পুলিশ। ধৃত এবং মতা মহিলা চিকিৎসকের দু’টি মোবাইল ফোন থেকেই তথ্য সংগ্রহ করেছে পুলিশ।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy