ফিরহাদ হাকিম। —ফাইল চিত্র।
রাজ্যের শাসকদল তৃণমূল কংগ্রেসের সাংসদ তথা সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের নাম করে বহু মানুষের সঙ্গে আর্থিক প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে খোদ কলকাতার মেয়র ফিরহাদ হাকিমের ওএসডি (অফিসার অন স্পেশ্যাল ডিউটি) কালীচরণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের বিরুদ্ধে। একাধিক ব্যক্তিকে রীতিমতো এজেন্ট হিসাবে ব্যবহার করে কালীচরণ এই তোলাবাজি চালিয়েছেন বলে অভিযোগ। বিষয়টি নিয়ে বৃহস্পতিবার অভিষেকের ক্যামাক স্ট্রিটের অফিসের এক কর্মী শেক্সপিয়র সরণি থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন। পুলিশ সূত্রের খবর, শুক্রবার বিকেল পর্যন্ত এই ঘটনায় কোনও এফআইআর দায়ের করা হয়নি। তবে, অভিযোগ খতিয়ে দেখতে তদন্ত চলছে। এ নিয়ে অবশ্য প্রকাশ্যে কিছু বলতে চাননি লালবাজারের কোনও কর্তাই। তবে সমালোচনায় সরব হয়েছে রাজ্যের প্রতিটি বিরোধী দল।
তবে, তাঁর ওএসডি-র বিরুদ্ধে ওঠা এমন মারাত্মক অভিযোগ প্রসঙ্গে ফিরহাদ শুক্রবার বলেন, ‘‘এ বিষয়ে আমি কিছুই জানতাম না। এই প্রথম শুনলাম। এ রকম কোনও ঘটনা
ঘটে থাকলে আমাকে তো আগে জানাতে হবে। তদন্ত তো আমি করব।’’ কালীচরণের বিরুদ্ধে অভিযোগ, নিজেকে অভিষেকের ঘনিষ্ঠ বলে দাবি করে ব্যবসায়ী ও সরকারি অফিসার-সহ বহু মানুষকে বিভিন্ন সুবিধা পাইয়ে দেওয়ার নামে তাঁদের কাছ থেকে কোটি কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন তিনি।
অভিযোগ, নিজেকে প্রভাবশালী হিসাবে প্রমাণ করার জন্যই অভিষেকের সঙ্গে তাঁর ঘনিষ্ঠতা নিয়ে মিথ্যা প্রচার করতেন কালীচরণ। বিভিন্ন সূত্র মারফত এই ধরনের প্রতারণার একাধিক অভিযোগের কথা জানতে পেরে অভিষেকের অফিসের ওই কর্মী কালীচরণের বিরুদ্ধে থানায় অভিযোগ দায়ের করেন। এই ঘটনা প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ এ দিন বলেন, ‘‘এই অভিযোগ দলের পক্ষে অস্বস্তিকর। তবে, এ ব্যাপারে দলের কিছু বলার নেই। যা বলার তা বলতে পারবেন, সংশ্লিষ্ট আধিকারিক।’’
তাঁর বিরুদ্ধে ওঠা প্রতারণার অভিযোগ প্রসঙ্গে প্রশ্ন করতে এ দিন কালীচরণের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়েছিল। সংবাদমাধ্যমের তরফে ফোন করা হয়েছে শুনেই তিনি ‘‘মিটিংয়ে আছি, পরে কথা বলব’’ বলে ফোন কেটে দেন।
এই ঘটনা প্রসঙ্গে বিজেপির বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারী বিধানসভা ভবনের বাইরে দাঁড়িয়ে এ দিন বলেন, ‘‘তপসিয়ায় যে তৃণমূল ভবন তৈরি হচ্ছে, সেটি ২০০ কোটি টাকার একটা বাড়ি। অতিথি নিবাস, পাঠাগার, সেমিনার রুম-সহ সুসজ্জিত বাড়ি। যিনি বাড়িটি তৈরি করছেন, তাঁকে টাকা তুলে ওই কালীচরণকে দিতে হচ্ছে। হাওড়া থেকে শুরু করে বিভিন্ন জায়গায় কালীর সাত-সাতটা ফ্ল্যাট আছে। পার্থ-অপার চেয়েও বেশি। এ সব আমি অনেক আগেই বলেছি।’’
এই প্রসঙ্গে সিপিএমের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য সুজন চক্রবর্তী বলেন, ‘‘রাজ্যে মাৎস্যন্যায় চলছে। অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়ের বাহিনী অভিযোগ করেছে ফিরহাদ হাকিমের বাহিনীর বিরুদ্ধে। গোটা দলটাই অভিযুক্ত। এর পিছনে অন্য কোনও গল্প আছে কিনা, সেটা আমাদের ভাবনার বিষয় নয়।’’ প্রদেশ কংগ্রেসের মুখপাত্র সৌম্য আইচ রায় বলেন, ‘‘ভাইপোর নাম নিয়ে আগেও দেখেছি প্যাড ছাপিয়ে লোকজন টাকা তুলছে। মেয়রের ওএসডি-ও ভাইপোর নামে টাকা তুলছেন। এ দিকে, খোদ মেয়রকেও দেখা গিয়েছে, স্যান্ডো গেঞ্জি পরে টাকা নিতে। টাকা তোলাটাই এখন শিল্প। এক পক্ষ অপর পক্ষের বিরুদ্ধে নালিশ করছে। গোষ্ঠীদ্বন্দ্বের সঙ্গেই ভাগের লড়াই চলছে। শুভনন্দন!’’
এ দিনই আবার নিজের এক্স-হ্যান্ডলে একটি ভিডিয়ো (যেটির সত্যতা আনন্দবাজার যাচাই
করেনি) পোস্ট করেছেন শুভেন্দু। তাতে দেখা যাচ্ছে, কলকাতা পুরসভার ১২৫ নম্বর ওয়ার্ডের পুরপ্রতিনিধি প্রোমোটারের কাছ থেকে বর্গফুট হিসাবে তোলা চাইছেন। যদিও অভিযোগ অস্বীকার করে ওই পুরপ্রতিনিধি বলেন, ‘‘সাহস থাকলে উনি (শুভেন্দু) সামনে এসে বলুন।’’ যার পাল্টা শুভেন্দু বলেন, ‘‘সামনে এসে বলার কী আছে? আমি প্রমাণ দিয়ে দিয়েছি। ওঁর যদি মনে হয়, ওই ভিডিয়ো ওঁর নয়, উনি আদালতে মামলা করুন।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy