Advertisement
২৪ নভেম্বর ২০২৪
Cyber Crime

স্বনির্ভর হতে গিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় সর্বস্ব খোয়ানোর শঙ্কা

স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করে ব্যবসায় নামা এই সব মহিলারাই এই মুহূর্তে অনলাইন প্রতারকদের নিশানা হচ্ছেন বলে পুলিশ সূত্রের খবর।

প্রতীকী ছবি।

প্রতীকী ছবি।

নীলোৎপল বিশ্বাস
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২০ ০২:৩৬
Share: Save:

কেউ টিউশন পড়িয়ে সংসার চালাতেন। কিন্তু করোনা পরিস্থিতিতে পড়ানো বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিকল্প পথ খুঁজছিলেন। কেউ লকডাউনে কর্মহারা স্বামীর পাশে দাঁড়াতে নিজে কিছু করার কথা ভেবেছিলেন। কারও আবার ইচ্ছে হয়েছিল নিজের হাতের কাজ সকলের সামনে তুলে ধরে কিছু আয় করার।

স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে সোশ্যাল মিডিয়াকে হাতিয়ার করে ব্যবসায় নামা এই সব মহিলারাই এই মুহূর্তে অনলাইন প্রতারকদের নিশানা হচ্ছেন বলে পুলিশ সূত্রের খবর। তাঁদের থেকে জিনিসের বরাত দিয়ে প্রতারণার ফাঁদ পাতার ৪২টির বেশি অভিযোগ গত ১০ দিনে লালবাজারে জমা পড়েছে বলে পুলিশ সূত্রের খবর। প্রায় সব ক্ষেত্রেই মোবাইল কিউআর (কুইক রেসপন্স) কোড স্ক্যান করিয়ে ব্যাঙ্কে থাকা সর্বস্ব তুলে নেওয়ার অভিযোগ করেছেন প্রতারিতেরা।

রানাঘাটের বাসিন্দা এক তরুণীর দাবি, সম্প্রতি তিনি কয়েক জন বান্ধবীকে নিয়ে অনলাইনে শাড়ি বিক্রি করা শুরু করেন। তাঁর দাবি, “শাড়ির ছবি আমরা সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করি। সম্প্রতি এক ব্যক্তি সেই পোস্ট দেখে ১০টি শাড়ি কিনতে চান। দাম ঠিক হয় সাড়ে আট হাজার টাকা। ওই ব্যক্তি দাম অনলাইনে মেটাতে চান।’’ তরুণী জানিয়েছেন, তাঁর এক বন্ধুর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্টে টাকা পাঠানোর কথা হয়। ওই ব্যক্তি এর পরে একটি কিউআর কোড পাঠিয়ে স্ক্যান করতে বলেন। তাঁরা দ্বিধা প্রকাশ করায় ওই ব্যক্তি বলেন, “বিশ্বাস হচ্ছে না! কোডটি স্ক্যান করে দেখুন, ১ টাকা পাবেন।” তরুণীর দাবি, কিউআর কোডটি স্ক্যান করার আগেই তাঁর বন্ধুর অ্যাকাউন্টে ১ টাকা চলে আসে। এর পরে ওই ব্যক্তির পাঠানো কিউআর কোড নির্দ্বিধায় স্ক্যান করতেই ১০ হাজার টাকা অ্যাকাউন্ট থেকে উধাও হয়ে যায়।

যাদবপুরের বাসিন্দা রিয়া সরকার নামে এক তরুণী জানালেন, জার্মান সিলভারের গয়না বানিয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করে তিনি বিক্রি করেন। গত জুলাইয়ের শুরু থেকে প্রচুর বরাত আসতে শুরু করে। তখনই এক ব্যক্তি একসঙ্গে ৬০টি গয়না বানানোর বরাত দেন। মোট দাম দাঁড়ায় ২৬ হাজার টাকা। টাকা মেটানোর নামে কিউআর কোড পাঠিয়ে তাঁর ব্যাঙ্ক অ্যাকাউন্ট থেকেও প্রায় ৪৮ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে বলে তরুণীর দাবি। লকডাউনের মধ্যে গাড়িচালক স্বামীর কাজ না থাকায় মানিকতলার রাজা দীনেন্দ্র স্ট্রিটের বাসিন্দা সোমা ঘোষ মাস্ক বানিয়ে বিক্রি শুরু করেন। ছেলের পরামর্শে সোশ্যাল মিডিয়ায় ছবিও দেন। সেখানেই এক মহিলা তাঁর থেকে দেড়শোটি মাস্ক কিনতে চান গত ১০ অগস্ট। দাম ঠিক হয় ৭৫০০ টাকা। ১৪ অগস্ট টাকা মেটানোর নামে কিউআর কোড পাঠিয়ে তাঁর থেকেও ২০ হাজার টাকা তুলে নেওয়া হয়েছে বলে অভিযোগ। সোমার দাবি, “থানা থেকে লালবাজারের সাইবার শাখায় মেল করে অপেক্ষা করতে বলা হয়েছে। কিন্তু মঙ্গলবার রাত পর্যন্ত কেউ যোগাযোগ করেননি।’’

লালবাজার সাইবার থানার এক পুলিশ আধিকারিক বললেন, “এই ধরনের প্রচুর অভিযোগ আসছে। ওই রকম কিউআর কোড ধরে জালিয়াতি রোখা সম্ভব নয়। কম্পিউটারজাত এই ধরনের কিউআর কোড প্রতি মুহূর্তে বদলে যায়।”

তা হলে উপায়? ইন্ডিয়ান স্কুল অব অ্যান্টি হ্যাকিংয়ের অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুপ্ত বলেন, “কিউআর কোড কাউকে টাকা পাঠানোর জন্য ব্যবহার হয়। কেউ সেই কোড স্ক্যান করে টাকা পাওয়ার আশা করলে মুশকিল। কিন্তু কোড স্ক্যান করার পরেও যে কোনও অ্যাপ টাকা পাঠানোর আগে ব্যবহারকারীর চূড়ান্ত ছাড়পত্র চায়। এ ক্ষেত্রে তা হচ্ছে কি না, সেটাই দেখার।” গোয়েন্দা বিভাগের এক আধিকারিকের পরামর্শ, “অনলাইন লেনদেনের সময়ে সন্দেহ হলে ব্যাঙ্ক ট্রান্সফার করতে বলুন। সেটা বেশি নিরাপদ।”

অন্য বিষয়গুলি:

Cyber Crime Social Media
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy