Advertisement
২৫ সেপ্টেম্বর ২০২৪
Corona

ভোট ছাপিয়ে ব্যবসা নিয়ে শঙ্কা

ভোটের ফল যা-ই হোক, কলকাতার ব্যস্ততম এলাকা, বড়বাজারের সুনসান চেহারাটা অনেককেই স্বস্তি দিয়েছে।

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ৩০ এপ্রিল ২০২১ ০৫:৪৫
Share: Save:

‘কোথায় যাচ্ছেন?’

নন্দরাম মার্কেট থেকে দিগম্বর জৈন স্কুলের পথটুকু যেতেই আধা সামরিক বাহিনীর প্রশ্নের মুখে পড়েছিলেন সুনীল আগরওয়াল। তাতে বেশ খুশিই তিনি।

নন্দরাম মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির ওই কর্তা থাকেন নন্দরাম মার্কেটেই। বলছেন, “দেখলাম রাস্তায় জটলা দেখলেই পুলিশ বা সেন্ট্রাল ফোর্স পুছতাছ করছে। খামোখা ঘুরে বেড়ানোয় ছাড় দিচ্ছে না একটুও। বড়বাজারে এটাই দরকার।”

রবীন্দ্র সরণি বা মহাজাতি সদনের কাছে চিত্তরঞ্জন অ্যাভিনিউয়ে বোমা পড়ার অভিযোগ উঠলেও রাজাবাজার, কলাবাগান, কলুটোলা থেকে পোস্তা, বড়বাজার জুড়ে বিস্তীর্ণ জোড়াসাঁকো কেন্দ্রের আবহ ছিল নিস্তরঙ্গই। বরং ভোটের হার-জিত ছাপিয়ে আগামী দিনগুলো নিয়ে এক ধরনের চোরা আশঙ্কা দানা বাঁধছে। বড়বাজারে ব্যবসায়ীদের একাংশ আজ, শুক্রবার থেকে ভোটগণনা শেষ হওয়া পর্যন্ত বাজার বন্ধ রাখার কথা বলেছেন। তবে কোঅর্ডিনেশন কমিটি অব বড়বাজার পোস্তা অ্যাসোসিয়েশনের জয়েন্ট সেক্রেটারি তাপস মুখোপাধ্যায় বলছেন, “এখনই বড়বাজার বন্ধ রাখার পরিকল্পনা নেই।”

নন্দরাম মার্কেটের সুনীল আগরওয়ালই বলছেন, এক দিকে করোনায় প্রাণের ভয়, অন্য দিকে লগনের মরসুমের কারবার! গত বছরের মতো এ বারও সব চৌপাট হলে যে কী হবে। ইদ তো দূরে নেই!” স্বভূমির কাছে নিজের বর্তমান ঠিকানা থেকে সত্যনারায়ণ পার্ক মার্কেটের কাছে জলেবি-সামোসার নামী দোকানের কাছে ভোটটা সকালের দিকেই দিতে গিয়েছিলেন বাগড়ি মার্কেটের ব্যবসায়ী সমিতির সভাপতি আশুতোষ সিংহও। তবে তিনি দুশ্চিন্তায়, “আমরা বাজারের টাইমিংটা একটু কমিয়ে বেলা ১০টা থেকে সন্ধে ৭টার মধ্যে রেখেছি। এমনিতেও মার্কেটে লোক কম। শুক্রবারই মিটিংয়ে বসব, দেখি কী করা যায়।” জোড়াসাঁকোর ঠাকুরবাড়ির পাড়ার বাসিন্দা সঞ্জয় তিওয়ারি ভোটটা দিতে গিয়েছিলেন কাছেই মদন চ্যাটার্জি লেনের সনাতন স্কুলে। নিজেই বললেন, “ভ্যাকসিন পাব কি না কে জানে, তবু সাহস করে ভোটটা দিতে এসেছি। কিন্তু ৭০ বছরের বৃদ্ধা মায়ের ভোটটা নষ্টই হল। মাকে ভ্যাকসিন দেওয়া এখনও হয়নি। তাই সঙ্গে নিয়ে আসার সাহস হল না।”

দিনের শেষে বিভিন্ন রাজনৈতিক শিবিরে গুঞ্জন, অমুক দলের কয়েক জন কর্মী কোভিড পজ়িটিভ, কিন্তু উপসর্গহীন। বুথের থার্মাল গানে তাপমাত্রা ধরা পড়বে না দেখে বড় নেতারাই বলেছেন, চুপচাপ ভোটটা জায়গামতো দিয়ে আয়! রাজা কাটরার ব্যবসায়ী স্বপন পালের ক্ষোভ, “২০২০-তে কম কষ্ট করিনি! আমি নিজে রাস্তায় নেমে দূরত্ব বজার রাখার গোল্লা এঁকে লোকজনকে শারীরিক দূরত্ব রাখা শিখিয়েছি। দুঃখের বিষয়, এক বছর বাদে বিপদের মোকাবিলায় প্রস্তুতির অভাবেই আমরা পিছিয়ে পড়েছি।” বড়বাজারের ব্যবসায়ী মহলের একাংশ ভোটবিমুখ বলে পরিচিত। এ দিনও ভোটের হার খুব বেশি নয়। তবে বিজেপির মীনাদেবী পুরোহিত এবং সংযুক্ত মোর্চা সমর্থিত কংগ্রেসের আজমল খানকে সারা দিনই ঘুরপাক খেতে দেখা গিয়েছে। কলাবাগান, রাজাবাজারে গোলমাল পাকানো হয়েছে বলে দাবি করেও মীনাদেবী আত্মবিশ্বাসী, “আমিই জিতব!” তিনি নিজেই ভোটার কার্ড আনতে ভুলে গিয়েছিলেন। তাই প্রিসাইডিং অফিসার তাঁকে কার্ড আনতে বুথ থেকে বাড়ি পাঠান বলে অভিযোগ। কংগ্রেস প্রার্থীও কলাবাগানের কাছে একটি বুথে তৃণমূলের বিদায়ী কাউন্সিলরের বিরুদ্ধে গোলমালের অভিযোগ তুলেছেন। তুলনায় রাস্তায় কম দেখা গিয়েছে তৃণমূল প্রার্থী, সংবাদপত্র সম্পাদক বিবেক গুপ্তকে। কিন্তু তৃণমূল-শিবিরই আত্মবিশ্বাসী, তাঁরাই জিতছেন। এমনকি, মহাজাতি সদনের কাছে ‘বোমাবাজি’র অভিযোগ নিয়েও তৃণমূল-শিবিরেই অসন্তোষ মালুম হয়েছে। তাঁদের বক্তব্য, অতটা দরকার ছিল না।

ভোটের ফল যা-ই হোক, কলকাতার ব্যস্ততম এলাকা, বড়বাজারের সুনসান চেহারাটা অনেককেই স্বস্তি দিয়েছে। কলুটোলায় ইফতারের বেচাকেনাও ঢিমে তালে। খিদিরপুরের বাড়ি থেকে এ দিনই কলুটোলায় ভোট দিতে এসেছিলেন জনৈক পুরনো বাসিন্দা। তিনি বললেন, “ভিড়, জটলা কম থাকায় অনেক দিন বাদে খেয়াল হল, এলাকার পুরনো বাড়িগুলো কতটা সুন্দর।” এটাও ভোট-দিবসের প্রাপ্তি।

(সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের Google News, X (Twitter), Facebook, Youtube, Threads এবং Instagram পেজ)

অন্য বিষয়গুলি:

Corona COVID-19 coronavirus
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE