(বাঁ দিকে) চৌহাটি এলাকায় বাড়ির ফাটল দেখাচ্ছেন এক বাসিন্দা। (ডানদিকে) এই বহুতল নির্মাণের জন্যই এমনটা হচ্ছে বলে অভিযোগ। নিজস্ব চিত্র।
বৌবাজারের একের পর এক বাড়িতে ফের ফাটল দেখা দিয়েছে। সেই আতঙ্ক এ বার ছড়াল সোনারপুরেও।
কয়েক মাস ধরে রাজপুর-সোনারপুর পুরসভার ২৪ নম্বর ওয়ার্ডের চৌহাটিতে বহুতল নির্মাণের কাজ চলছে। সেই কাজের জেরে ফাটল ধরেছে এলাকার একমাত্র স্কুল-সহ একাধিক বাড়িতে। ফলে রীতিমতো আতঙ্কে রয়েছেন বাসিন্দারা। স্থানীয়দের অভিযোগ, ওই বহুতল তৈরির মেশিন চালু হলেই গোটা বাড়ি কাঁপতে শুরু করছে। এ নিয়ে ইতিমধ্যেই অনেকে নির্মীয়মাণ বহুতলে কর্মরতদের কাছে অভিযোগ জানিয়েছেন। কেউ কেউ পুরসভায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন।
পুরসভা ও স্থানীয় সূত্রের খবর, কয়েক মাস ধরে চৌহাটির কয়েক বিঘা জমির উপরে আবাসন তৈরির কাজ চলছে। মূলত মাটির নিচে কংক্রিটের স্তম্ভ তৈরির জন্য হাইড্রলিক যন্ত্র ব্যবহার করা হচ্ছে। ওই স্বয়ংক্রিয় যন্ত্র মাটির গভীরে গিয়ে স্তম্ভ তৈরির কাজ করছে। কিন্তু যখনই সেটি উপরে উঠে আসছে, তখনই আশপাশের বাড়িগুলিতে তীব্র কম্পন অনুভূত হচ্ছে।
স্থানীয় চৌহাটি হাইস্কুলের পরিচালন কমিটির সভাপতি শাজাহান খান বলেন, ‘‘সপ্তাহ দুয়েক হল, স্কুল থেকে কিছুটা দূরে ওই কাজ শুরু হয়েছে। এখন গরমের ছুটি চলছে, তাই পড়ুয়ারা নেই। কিন্তু স্কুলের কয়েকটি ভবনে ফাটল ধরা পড়েছে। পড়ুয়াদের মিড ডে মিল খাওয়ার ঘরে ছাদের চাঙড় ভেঙে পড়ছে। বিপজ্জনক পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। আমরা পুরসভাকে জানিয়েছি।’’
এলাকার বাসিন্দা তসলিমা খান জানাচ্ছেন, নির্মীয়মাণ বহুতলে মেশিন চালু হলেই ঘরের সমস্ত জিনিস থরথর করে কাঁপছে। আসবাবপত্র মাটিতে পড়ে যাচ্ছে। এমনকি, বিছানায় শুয়ে থেকেও স্বস্তি নেই। রুমাইয়া খান নামে আর এক স্থানীয়ের কথায়, ‘‘ঘরে ফাটল ধরে গিয়েছে। আমরা ভয়ে ভয়ে রয়েছি, কখন কী হয়ে যায়। মেশিন চলতে শুরু করলেই গোটা এলাকা অস্থির হয়ে উঠছে। পুরসভা ও পুলিশকে সব জানানো হয়েছে।’’
কী বলছে প্রশাসন? এলাকার কাউন্সিলর রাজীব পুরোহিত বলেন, ‘‘খবর পেয়ে নির্মীয়মাণ সংস্থার দায়িত্বপ্রাপ্ত ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে কথা বলেছি। তবে স্থানীয়েরা নির্মাণ সংস্থার ইঞ্জিনিয়ারদের সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজি হননি। নির্মাণ সংস্থার পক্ষ থেকে পুলিশের সঙ্গে যোগাযোগ করা হয়। সোনারপুর থানা থেকে কয়েক জন ক্ষতিগ্রস্তকে তলব করা হয় ও তাঁদের নিয়ে বৈঠক করা হয়।’’ তাঁর দাবি, ক্ষতিগ্রস্ত স্থানীয়দের নির্মীয়মাণ সংস্থার তরফে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন থানার আধিকারিকেরা।
এই ঘটনায় পুরসভা ও রাজ্যের নগরোন্নয়ন দফতরের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন সিপিএম নেতা তথা সোনারপুরের বাসিন্দা সুজন চক্রবর্তী। তাঁর কথায়, ‘‘চৌহাটি এলাকায় নানা নির্মাণ সংস্থা হাঙরের মতো ঝাঁপিয়ে পড়েছে। আশেপাশের বাড়িতে ফাটল ধরছে, অথচ কারও কোনও হেলদোল নেই। যাঁদের বাড়িতে ফাটল ধরেছে, তাঁদের পাশে কি কেউ দাঁড়াবে না?’’
তবে স্থানীয় সূত্রের খবর, বাড়িতে ফাটল ধরার ঘটনার পরে নির্মীয়মাণ সংস্থার ইঞ্জিনিয়ারেরা কয়েকটি ক্ষতিগ্রস্ত বাড়ি পরিদর্শন করেছেন। পুরসভার চেয়ারম্যান পল্লব দাস বলেন, ‘‘লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। পুরসভার ইঞ্জিনিয়ার সোমবার ঘটনাস্থলে গিয়ে প্রতিটি বাড়ির পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করেছেন। এ বিষয়ে নির্মাণ সংস্থার সঙ্গে আলোচনা করে ক্ষতিপূরণের ব্যবস্থা করা হবে। অতীতেও বহুতল তৈরি সময়ে এমন পরিস্থিতি হয়েছিল। সে ক্ষেত্রে ক্ষতিপূরণ দেওয়া হয়েছিল, ফাটল ধরা বাড়ি মেরামত করা হয়েছিল। এখানেও পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’’ পুরসভা সূত্রের খবর, পুর ইঞ্জিনিয়ারদের রিপোর্ট হাতে আসার পরেই নির্মাণ সংস্থার কর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করে সমাধানসূত্র বার করা হবে। পরবর্তী পর্যায়ে এলাকাবাসী, পুরসভা ও নির্মাণ সংস্থার কর্তাদের মধ্যে বৈঠকের পরিকল্পনাও রয়েছে। পল্লববাবুর কথায়, ‘‘এখনও পর্যন্ত দু’টি পরিবার অভিযোগ দায়ের করেছে। তবে পুরো পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে উপযুক্ত ব্যবস্থা নেওয়ার পরিকল্পনা করছি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy