Advertisement
০২ নভেম্বর ২০২৪
Coronavirus in America

মেয়েকে নিয়ে গঙ্গায় ‘ঝাঁপ’ বাবার, উদ্ধার শিশুর দেহ

তারকবাবুর স্ত্রী নীলা করোনা আক্রান্ত হয়ে গত সোমবার, ১৭ মে থেকে বেলঘরিয়ার একটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন।

ঈশানীর সঙ্গে তারক কুণ্ডু।

ঈশানীর সঙ্গে তারক কুণ্ডু। নিজস্ব চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৩ মে ২০২১ ০৬:০৩
Share: Save:

‘আমি চললাম। মেয়েটাকে তোর ভরসায় রেখে গেলাম। ওকে ফেলে দিস না। নিজের মেয়ের মতো করে রাখিস!’

শুক্রবার ভোর ৪টে ৫৫ মিনিটে দাদার থেকে এমন হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ পেয়ে চমকে উঠেছিলেন বোন। তড়িঘড়ি দাদাকে ফোন করে বুঝিয়েছিলেন যে, তিনি যেন কোনও হঠকারি সিদ্ধান্ত না নেন।

কিন্তু কথা শোনেননি দাদা। বরং ছ’বছরের মেয়েকে নিয়ে নিখোঁজ হয়ে যান ওই ব্যক্তি। আর সেই দিন সকালেই কয়েক জন পথচারী বালি থানার পুলিশকে জানিয়েছিলেন, বালি সেতু থেকে এক ব্যক্তি একটি শিশুকে গঙ্গায় ফেলে নিজে ঝাঁপ দিয়েছেন। তবে ওই ঘটনার সঙ্গে বরাহনগরের বাসিন্দা, নিখোঁজ বাবা-মেয়ের আদৌ কোনও সম্পর্ক আছে কি না, তা নিয়ে সংশয় ছিল।

শনিবার সকালে খড়দহের ঘাট থেকে এক শিশুর মৃতদেহ উদ্ধারের পরে অবশ্য সেই সংশয় কেটে যায়। পরিজনেরা দেহটি শনাক্ত করার পরে জানা যায়, ওই শিশুটিই বরাহনগরের ঈশানী কুণ্ডু (৬)। তার বাবা তারক কুণ্ডুর (৪৭) এখনও কোনও খোঁজ মেলেনি।

পুলিশ ও পরিবার সূত্রের খবর, বরাহনগরের গোপাললাল ঠাকুর রোডের বাসিন্দা তারক একটি ছোট সংস্থায় কাজ করেন। অবসর সময়ে নিজের ছোট একটি ব্যবসা চালান। তারকবাবুর স্ত্রী নীলা করোনা আক্রান্ত হয়ে গত সোমবার, ১৭ মে থেকে বেলঘরিয়ার একটি হাসপাতালে ভর্তি রয়েছেন। তবে তাঁর অবস্থাও সঙ্কটজনক। লিভারেও সংক্রমণ ছড়িয়েছে। তাঁকে ভেন্টিলেশনে রাখা হয়েছে, এই খবর পাওয়ার পর থেকেই মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছেন তারক। পরিজনেরা জানাচ্ছেন, স্ত্রীর কিছু হয়ে গেলে কী ভাবে মেয়েকে বড় করবেন এবং কী ভাবে স্ত্রীর চিকিৎসার খরচ জোগাবেন, তা নিয়ে দুশ্চিন্তা ও মানসিক অবসাদে ভুগছেন তিনি।

তাঁর বাল্যবন্ধু সৈকত কুণ্ডু বলেন, ‘‘তারক অত্যন্ত চাপা স্বভাবের। স্ত্রীর এমন হওয়ার পর থেকে খুব ভেঙে পড়েছে। সব ঠিক হবে যাবে বলে ওকে ভরসা দিচ্ছিলাম। কিন্তু ও শুনল না।’’ শুক্রবার ভোরে তারক তাঁর বোন তপতী দাসকে হোয়াটসঅ্যাপ মেসেজ করেন। বেলঘরিয়ার রথতলার বাসিন্দা, তপতীর স্বামী সৌগত বলেন, ‘‘মেসেজ দেখেই ওঁকে ফোন করে অনেক বোঝানো হয়। বার বার বলি, মেয়ের কোনও চিন্তা নেই। বৌদির কিছু হয়ে গেলেও মেয়ে ভাল করেই মানুষ হবে।’’ পরিজনেরা জানাচ্ছেন, সে দিনই সকাল ৬টা নাগাদ নাতনির জন্য দুধ আনতে গিয়েছিলেন ঈশানীর ঠাকুরমা। তিনি ফিরে এসে দেখেন, তারক-ঈশানী কোথাও নেই। তাঁর চেঁচামেচিতে চলে আসেন প্রতিবেশীরা। খবর পেয়ে তপতী-সৌগতেরা বার বার তারককে ফোন করলেও মোবাইল বন্ধ ছিল। পরে খুঁজে দেখা যায় যে, নিজের ফোন বন্ধ করে ঘরেই রেখে গিয়েছেন তারক। এর পরে বাবা-মেয়ের খোঁজ না পেয়ে শেষে বরাহনগর থানায় নিখোঁজ ডায়েরি করেন পরিজনেরা।

অন্য দিকে, ওই দিন সকাল সাড়ে ৬টা নাগাদ বালি সেতুতে প্রাতর্ভ্রমণকারীদের কয়েক জন দেখেন, দক্ষিণেশ্বরের দিক থেকে আসা সেতুর রাস্তার ফুটপাতে দাঁড়িয়ে এক ব্যক্তি একটি শিশুকে জলে ফেলে দিয়ে নিজেও রেলিং টপকে ঝাঁপ দেন। প্রত্যক্ষদর্শী বিশ্বনাথ দাশগুপ্ত বলেন ‘‘আমি সকালে হেঁটে ফিরছিলাম। আচমকা দেখি ওই ব্যক্তি
শিশুটিকে রেলিংয়ের নীচে ঝুলিয়ে ফেলে দিলেন। তার পরে নিজেও ঝাঁপ দিলেন। চেঁচিয়ে কিছু বলারও সময় পেলাম না। কয়েক জন সেতুর ওই রাস্তায় গিয়ে নীচে তাকিয়ে দেখেন, বাচ্চাটা হাবুডুবু খেতে খেতে ভাসছে। পাশ দিয়ে ভেসে যাচ্ছেন ওই ব্যক্তি।’’ প্রত্যক্ষদর্শীদের থেকে জানতে পেরে খোঁজ শুরু করে বালি থানার পুলিশ। তল্লাশি চালায় রিভার ট্র্যাফিকও। তার পরে সে দিন রাতেই বরাহনগরের বাবা-মেয়ের নিখোঁজ হওয়ার খবর পায় বালি থানা। এ দিন সকালে শিশুটির দেহ উদ্ধার হতে পরিচয় নিয়ে নিশ্চিত হন তদন্তকারীরা। এ দিন তপতী বলেন, ‘‘আমার মাকে কিছু জানাতে পারিনি। বৌদি সুস্থ হয়ে এলে কী বলব, জানি না।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Suicide Coronavirus in America
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE