অব্যবস্থা: আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল চত্বরে ঘুমোচ্ছেন রোগীর পরিজনেরা। সরকারি রাত্রিনিবাস থাকলেও সেটি বন্ধ। ছবি: সুমন বল্লভ
জরুরি বিভাগের সামনে দিয়ে ঢুকে বাঁ দিকে যেতেই দেখা গেল ছবিটা। হাসপাতালের এ দিকে, ও দিকে প্লাস্টিক পেতে শুয়ে রয়েছেন লোকজন। আর একটু এগোতেই চোখে পড়ল, এসএনসিইউ এবং স্ত্রীরোগ বিভাগের সামনে গাদাগাদি করে চাদর চাপা দিয়ে শুয়ে অসংখ্য মানুষ। রাতের এই ছবিটা রাজ্যের অন্যতম মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল, আর জি কর চত্বরের।
সেখানে ছড়িয়েছিটিয়ে শুয়ে থাকা লোকজনেরা হলেন ভর্তি থাকা রোগীর পরিজন। কেউ এক মাস, তো কেউ দু’-আড়াই মাস ধরে এ ভাবেই রাত কাটাচ্ছেন সেখানে। রোগীর পরিজনদের থাকার জন্য প্রায় প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালেই রাত্রিনিবাস তৈরি করেছে রাজ্য সরকার। আর জি কর হাসপাতালও তার ব্যতিক্রম নয়। তবে শহরের ওই মেডিক্যাল কলেজে রাতের ছবিটা এমন কেন?
উত্তরটা স্পষ্ট হল স্ত্রীরোগ বিভাগ থেকে সোজা কিছুটা এগোতেই। ন্যায্য মূল্যের ওষুধের দোকানের ঠিক উল্টো দিকেই রয়েছে চারতলা একটি বাড়ি। যার নীচের তলার একটি ঘরেই শুধু আলো জ্বলছে। বাদ বাকি গোটা বাড়ি ডুবে অন্ধকারে। রোগীর পরিজনদের জন্য রাত্রিনিবাস বোর্ড ঝোলানো ওই বাড়িতে ঢোকার মুখেই কয়েক জনকে প্লাস্টিক পেতে শুয়ে থাকতে দেখা গেল। ‘এখানে কেন শুয়ে আছেন? রাত্রিনিবাসে জায়গা পাননি?’ জানতে চাইতেই উঠে বসলেন মধ্যমগ্রামের বাসিন্দা সুব্রত দত্ত। ঠিক পিছনের বন্ধ কোল্যাপসিবল গেটের দিকে দেখিয়ে ওই যুবক বললেন, ‘‘কী করব? এখানে তো তালা ঝুলছে। তাই রাস্তায় রাত কাটাচ্ছি!’’
এগিয়ে এলেন বসিরহাটের আসগর মণ্ডল। তাঁর ছেলে এসএনসিইউ-তে ভর্তি আছে। প্রায় মাসখানেক ধরে রাতে ওই রাত্রিনিবাসের সামনেই প্লাস্টিক পেতে শুয়ে থাকেন আসগর। তাঁর প্রশ্ন, ‘‘রাতে কোথায় যাব? এখানেই শুতে হচ্ছে। শুধু কয়েক জন নিরাপত্তারক্ষীই এই রাত্রিনিবাসে থাকেন। ওঁরা রাগারাগি করেন দরজার সামনে আমরা শুয়ে থাকি বলে।’’ রোগীর পরিজনদের জন্য রাজ্যের প্রতিটি মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চারতলা রাত্রিনিবাস তৈরি করেছে সরকার। প্রতি তলে অন্তত ২৪-২৫টি করে শয্যা থাকে। একটি তল থাকে শুধু মহিলাদের জন্যই। সেখানে দৈনিক নির্দিষ্ট ভাড়ার বিনিময়ে শয্যা পাওয়ার কথা পরিজনেদের। যদিও এমন বন্দোবস্ত যে রয়েছে হাসপাতালে, তা জানেন না বলেই দাবি করলেন খানাকুলের বাসিন্দা শেখ ওসমান আলি। প্রায় দু’মাস ধরে তিনি রাত কাটান স্ত্রীরোগ বিভাগের সামনের একটি বাঁধানো রোয়াকে। রোগীর পরিজনদের অভিযোগ, ব্যবস্থা থাকা সত্ত্বেও হাসপাতালের বিভিন্ন বিভাগের সামনে গাদাগাদি করে রাত কাটাতে হচ্ছে। অতিমারি পরিস্থিতিতে যেখানে ভিড় থেকে দূরে থাকতে বলা হচ্ছে, সেখানে এমন হাল কেন? সূত্রের খবর, আর জি করের ওই ভবনে কোভিড প্রতিষেধক প্রদান কেন্দ্র চালু করা হয়েছে।
কিন্তু রোগীর পরিজনদের থাকার জায়গায় তাঁদেরই থাকার সুযোগ মিলবে না? ওই হাসপাতালের রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান চিকিৎসক সুদীপ্ত রায় বলেন, ‘‘সমস্যার বিষয়টি নজরে রয়েছে। নতুন যে ছাত্রীরা আসবেন, তাঁদের জন্য অস্থায়ী ভাবে ওই রাত্রিনিবাস বরাদ্দ করা হয়েছে। যে হারে আর জি করে রোগীর সংখ্যা বাড়ছে, তাতে একটি রাত্রিনিবাসে সমস্যা মিটবে না। বিকল্প ব্যবস্থারও পরিকল্পনা হচ্ছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy