Advertisement
১৯ ডিসেম্বর ২০২৪
Drowning Death

Drowning: সাঁতার না জেনেও কেন নামল গঙ্গায়, আক্ষেপ পরিবারের

বুধবার বিকেলের পর থেকে কথা বলার অবস্থায় নেই ইসরাফেলের মা শামিমা। সমানে কেঁদে চলেছেন। প্রতিবেশীরা তাঁকে সামলানোর চেষ্টা করছেন। তবে এ দিন দুপুরে তপসিয়া সেকেন্ড লেনে বিলালের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, ঘর তালাবন্ধ।

কান্না: মহম্মদ বিলালের শোকার্ত মা ও দিদি। নিজস্ব চিত্র

কান্না: মহম্মদ বিলালের শোকার্ত মা ও দিদি। নিজস্ব চিত্র

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৯ এপ্রিল ২০২২ ০৫:৫০
Share: Save:

দু’কামরার ছোট্ট আস্তানার একটি ঘরে খাটের উপরে তখনও ছড়ানো রয়েছে বই-খাতা। পাশেই পড়ে জামাকাপড়। সেগুলি সরিয়ে ইসরাফেল আলির দাদা আসিফ আলি বললেন, ‘‘রাত জেগে পড়াশোনা করে ভাই সকালে একটু ঘুমিয়েছিল। তার পরে পরীক্ষা দিতে চলে যায়। কিন্তু পরীক্ষা শেষে কেন যে ওরা গঙ্গায় গেল, সেটাই বুঝতে পারছি না।’’ কথা শেষ না করেই পাশের ঘরে মাকে সামলাতে চলে গেলেন তিনি। ছোট ছেলের গঙ্গায় তলিয়ে যাওয়ার খবর বুধবার বিকেলে বাড়িতে আসার পর থেকেই সমানে প্রার্থনা করে চলেছেন ইসরাফেলের মা। যদিও ওই কিশোরের সহপাঠী, মহম্মদ বিলালের বাড়ি সকাল থেকে তালাবন্ধ। এক প্রতিবেশী বললেন, ‘‘বুধবার রাত ১টা নাগাদ সবাই বাবুঘাট থেকে ফিরেছিল। ভোরে আবার ওখানে গিয়েছে।’’

বুধবার উচ্চ মাধ্যমিক শেষ হওয়ার পরে বাবুঘাটে গঙ্গায় কয়েক জন সহপাঠীর সঙ্গে স্নান করতে নেমেছিল ইসরাফেল ও বিলাল। বাকিরা উঠে আসতে পারলেও জোয়ারের টানে তলিয়ে যায় দুই কিশোর। তার পরে ২৪ ঘণ্টারও বেশি সময় কেটে গেলেও বৃহস্পতিবার রাত পর্যন্ত তাদের সন্ধান মেলেনি। এ দিন সকাল থেকে দফায় দফায় গঙ্গায় তল্লাশি চালায় কলকাতা পুলিশের বিপর্যয় মোকাবিলা বাহিনী। ডুবুরি ও স্পিডবোট নামিয়েও চলে তল্লাশি। কিন্তু ওই দুই ছাত্রের খোঁজ মেলেনি। পুলিশ সূত্রের খবর, ইতিমধ্যেই গঙ্গার তীরবর্তী থানাগুলিকে ঘটনার কথা জানানো হয়েছে। গঙ্গায় নজরদারি চালাচ্ছে রিভার ট্র্যাফিক পুলিশ এবং উত্তর বন্দর থানাও।

পরিবার সূত্রে জানা গিয়েছে, ইসরাফেল ও বিলাল, কেউই সাঁতার জানত না। তা সত্ত্বেও তারা কেন গঙ্গায় নামল, সেটাই পরিষ্কার হচ্ছে না দুই পরিবারের কাছে। এ দিন তপসিয়ার নয়াবস্তির বাড়িতে বসে আসিফ বললেন, ‘‘গত কাল শেষ পরীক্ষা ছিল। তাই হয়তো বন্ধুদের সঙ্গে বাবুঘাটে ঘুরতে গিয়েছিল ভাই। কিন্তু সাঁতার না জেনেও কেন জলে নামল?’’ সদ্য একটি বেসরকারি সংস্থায় চাকরিতে যোগ দিয়েছেন আসিফ। দাদা চাকরি পাওয়ায় একটা বাইক কেনার আবদার করেছিল ইসরাফেল। আসিফ বলেন, ‘‘ভাইয়ের শখ বলতে ছিল বাইক আর পড়াশোনা। পাড়ায় তেমন বন্ধুও ছিল না। আমি চাকরি পাওয়ার পরে বলেছিল, কয়েক বছর পরে একটা স্পোর্টস বাইক কিনে দিতে। কিন্তু ভাই-ই তো থাকল না!’’ কথার ফাঁকে ইসরাফেলের মোবাইল দেখিয়ে তিনি বলে চলেন, ‘‘সকাল থেকেই ওর বন্ধুরা ফোন করছে। আর কত বার বলব?’’

বুধবার বিকেলের পর থেকে কথা বলার অবস্থায় নেই ইসরাফেলের মা শামিমা। সমানে কেঁদে চলেছেন। প্রতিবেশীরা তাঁকে সামলানোর চেষ্টা করছেন। তবে এ দিন দুপুরে তপসিয়া সেকেন্ড লেনে বিলালের বাড়িতে গিয়ে দেখা গেল, ঘর তালাবন্ধ। এক প্রতিবেশী বললেন, ‘‘ওর মা-বাবা বিহারে গিয়েছিলেন। এখানে ছিলেন শুধু দিদি। বুধবার থেকে তিনিই বাবুঘাট আর থানায় দৌড়ে বেড়াচ্ছেন।’’ বাবুঘাটে গিয়ে দেখা গেল, বিহার থেকে এসেছেন বিলালের মা-বাবা। বাবা মহম্মদ নান্নে বললেন, ‘‘ইদের পরেই ছেলের বিহারে যাওয়ার কথা ছিল। ওখানে অনুষ্ঠান থাকায় আমরা আগে চলে গিয়েছিলাম। কিন্তু এমন হবে জানলে আমি কিছুতেই ওকে ফেলে যেতাম না। এখন কী হবে?’’ আফশোস যাচ্ছে না তাঁর।

অন্য বিষয়গুলি:

Drowning Death Ganges High Tide
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy