E-Paper

‘সর্বত্র শুধুই ডাক্তার নেই! তা হলে আমরা যাব কোথায়?’

শহরের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে চলা জুনিয়র চিকিৎসকদের লাগাতার কর্মবিরতির জেরে রোগী-ভোগান্তি ক্রমশ বাড়ছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে রোগী ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য উঠে আসছে।

রোগী-ভোগান্তি চলছেই। চিকিৎসা না পেয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ফিরে

রোগী-ভোগান্তি চলছেই। চিকিৎসা না পেয়ে কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতাল থেকে ফিরে যেতে হচ্ছে তপতী পাল নামে এক রোগীকে। ছবি: রণজিৎ নন্দী

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ২২ অগস্ট ২০২৪ ০৮:১৯
Share
Save

স্ট্রেচারে শুইয়ে রাখা রোগীর নাকে নল। অনবরত লালা গড়াচ্ছে। হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে রোগীকে নিয়ে উদ‌্ভ্রান্তের মতো দাঁড়িয়ে ফোন করে চলেছেন যুবক। তাঁকে বলতে শোনা গেল, ‘‘সব হাসপাতালই তো প্রায় ঘোরা হয়ে গেল! আর কত? এ বার তো আর বাবা বাঁচবে না!’’

ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বহির্বিভাগের সামনে দাঁড়িয়ে লিলুয়ার বাসিন্দা ওই যুবক জয়জিৎ দত্ত জানালেন, তাঁর বাবা ব্রেন স্ট্রোকে আক্রান্ত। মঙ্গলবার বিকেলে হঠাৎ খিঁচুনি শুরু হয়ে দাঁতের আঘাতে দু’ভাগ হয়ে যায় জিভ। বিকেলে তাঁরা বছর তেষট্টির প্রৌঢ়কে নিয়ে লিলুয়ার একটি হাসপাতালে যান। কিন্তু রোগীর অবস্থা সঙ্কটজনক হতে থাকায় তাঁদের দ্রুত কলকাতায় নিয়ে যাওয়ার কথা বলা হয়। ওই দিনই সন্ধ্যা থেকে শহরের একাধিক হাসপাতালে ঘুরলেও ভর্তি তো দূর, কোথাও চিকিৎসাই মেলেনি বলে অভিযোগ।

জয়জিতের কথায়, ‘‘লিলুয়া থেকে বাবাকে নিয়ে প্রথমে এসএসকেএমে যাই। সেখান থেকে পাঠানো হয় এম আর বাঙুরে। কিন্তু সেখানেও ভর্তি নেয়নি। তার পরে সকালে ন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসেছি।’’ সেখানে বহির্বিভাগে দেখানোর পরে ভর্তির ব্যবস্থা হলেও কবে অস্ত্রোপচার হবে, তার নিশ্চয়তা নেই বলেই জানানো হয়েছে। যুবক বলেন, ‘‘সর্বত্র শুধুই ডাক্তার নেই! তা হলে আমরা যাব কোথায়?’’

শহরের মেডিক্যাল কলেজগুলিতে চলা জুনিয়র চিকিৎসকদের লাগাতার কর্মবিরতির জেরে রোগী-ভোগান্তি ক্রমশ বাড়ছে। প্রতিদিনই বিভিন্ন হাসপাতাল থেকে রোগী ফিরিয়ে নিয়ে যাওয়ার দৃশ্য উঠে আসছে। ব্যতিক্রম ছিল না বুধবারও। কবে এই ভোগান্তি শেষ হবে, তারও দিশা মিলছে না। ঘটনার তদন্ত করছে সিবিআই। আর জি করের নিরাপত্তায় সিআইএসএফ মোতায়েনের নির্দেশ দিয়েছে আদালত। তার পরেও কর্মবিরতি চালিয়ে যাওয়ার নেপথ্যে আর কী দাবি রয়েছে?

আন্দোলনকারীরা জানালেন, তাঁদের দাবি ছিল, প্রকৃত দোষীদের ধরতে হবে ও শাস্তি দিতে হবে। সর্বত্র নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করতে হবে। এই দু’টি দাবির মধ্যে প্রকৃত দোষীদের ধরার ব্যাপারে তদন্ত কতটা এগিয়েছে, সেই সম্পর্কে আগামী বৃহস্পতিবার সিবিআইকে রিপোর্ট দিতে নির্দেশ দিয়েছে সর্বোচ্চ আদালত। দেশের সমস্ত হাসপাতালে সুরক্ষা ও নিরাপত্তার বিষয়টি দেখতে জাতীয় স্তরের টাস্ক ফোর্স গঠিত হয়েছে। আর জি করের আন্দোলনকারী আবাসিক চিকিৎসকদের তরফে অনিকেত মাহাতো বলেন, ‘‘এই ঘটনায় একাধিক ব্যক্তি জড়িত বলে অনেকেরই সন্দেহ। সেটি হলে তো এখনও খুনি ও ধর্ষকেরা বাইরে ঘুরছে। তাই দোষীরা গ্রেফতার না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি কী ভাবে প্রত্যাহার করা যায়?’’ অনিকেত আরও বলেন, ‘‘ঘটনাটি ঘটেছিল একটি বিভাগের সেমিনার কক্ষে। আবার কেউ এমন ঘটাতে পারে। তা আটকাতে গেলে আগের ঘটনার নেপথ্যের কারণ স্পষ্ট হওয়া জরুরি।’’

আন্দোলনকারীদের আরও দাবি, হাসপাতালে যদি অসাধু চক্র সক্রিয় থাকে, তা হলে সেটাও সামনে আসা দরকার। সেখানে সিআইএসএফ বা সেনা মোতায়েন করেও নিরাপত্তা সুনিশ্চিত করা যাবে না। সেগুলি স্পষ্ট না হওয়া পর্যন্ত কর্মবিরতি থেকে সরছেন না জুনিয়র চিকিৎসকেরা।

শহর জুড়ে থাকা ভোগান্তির টুকরো ছবি ধরা পড়ল এনআরএসেও। সেখানে আসা এক ব্যক্তি বললেন, ‘‘ছেলেকে দু’দিন আগে ভর্তি করিয়েছি। এক সিনিয়র চিকিৎসক এসে দেখছেন। অনেকে ছুটি করিয়ে নিয়ে গিয়েছেন।’’ বৃদ্ধা মাকে ভর্তির জন্য কলকাতা মেডিক্যালে নিয়ে এসেছিলেন সঞ্জয় পাল। তাঁর কথায়, ‘‘এক চিকিৎসক দেখে বাড়ি নিয়ে যেতে বললেন। কেন জানতে চাওয়ায় বললেন, ‘দেখছেন তো এখন হাসপাতালের কী অবস্থা!’’

আন্দোলনরত চিকিৎসক-পড়ুয়াদের কর্মবিরতি প্রত্যাহারের আবেদন করে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, ‘‘সুপ্রিম কোর্টের নির্দেশে তদন্ত করছে সিবিআই। আন্দোলনের সঙ্গে চিকিৎসাও চলুক। সাধারণ মানুষকে বঞ্চিত করবেন না।’’ তাঁর বক্তব্য, ‘‘পুলওয়ামা হামলায় ভারতীয় সেনারা শহিদ হয়েছিলেন। সে বিচার এখনও হয়নি। সেনারা কি সীমানা ছেড়ে চলে আসতে পারেন?’’

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

R G Kar Medical College Protest

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।