অঘটন: পোড়া ঘরের ধ্বংসস্তূপে বাসিন্দারা। শনিবার, কৈখালিতে। নিজস্ব চিত্র
কৈখালির অগ্নিকাণ্ডকে নিছক দুর্ঘটনা হিসেবে মানতে নারাজ ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারগুলির সদস্যেরা। ঝুপড়ির জমিতে বহুতল নির্মাণের পথ মসৃণ করতেই আগুন লাগানো হয়েছে বলে অভিযোগ সেখানে বসবাসকারী লোকজনের।
স্থানীয় সূত্রের খবর, ওই জমির মালিকানা নিয়ে রবিউল ইসলাম মণ্ডলের সঙ্গে সাবিনা ইয়াসমিনের দীর্ঘদিন ধরে বিবাদ চলছে। সাবিনার দাবি, শুক্রবার সন্ধ্যায় মণ্ডলগাঁতির পুষ্পকনগরে যে সাতটি ঝুপড়ি আগুনের গ্রাসে চলে গিয়েছে, সেগুলির বাসিন্দারা তাঁর ভাড়াটে। আগুন থেকে বাঁচতে ঘর থেকে বেরোতে না পারায় ভিতরেই পুড়ে মৃত্যু হয়েছে নির্মল মণ্ডল নামে পক্ষাঘাতগ্রস্ত এক বৃদ্ধের। অগ্নিকাণ্ডের সময়ে ওই সাতটি ঝুপড়ির ২১ জন বাসিন্দার মধ্যে ১০ জন ঘটনাস্থলে উপস্থিত ছিলেন। সাবিনা বলেন, ‘‘গত দেড় বছর ধরে রবিউল আমার ভাড়াটেদের উঠে যাওয়ার জন্য হুমকি দিচ্ছে। কথা না শুনলে আগুন লাগানোর হুমকি পর্যন্ত দিয়েছিল। সেটাই করে দেখাল।’’
স্থানীয় বাসিন্দারা জানান, অগ্নিকাণ্ডে নির্মলবাবুর মতোই এক অন্তঃসত্ত্বা মহিলা-সহ দু’জন আটকে পড়েছিলেন। আলম খান নামে এক কিশোরের তৎপরতায় তাঁরা প্রাণে বেঁচেছেন। সেই মুহূর্তের বর্ণনা দিয়ে আলম জানিয়েছে, আগুনের মধ্যে ‘বাঁচাও বাঁচাও’ বলে চিৎকার করছিলেন হালিমা খাতুন ও অন্তঃসত্ত্বা মণি বিবি। আলম যেখানে দাঁড়িয়ে
ছিল, সেখান দিয়ে দু’জনকে বার করা সম্ভব ছিল না। তখন রাস্তার একটি দোকানের ভিতরের পাঁচিল টপকে টিনের দরজা ভেঙে ঘুরপথে দুই মহিলার কাছাকাছি পৌঁছয় সে। ঘরে থাকা একটি টেবিল দেওয়ালের কাছে রেখে তার উপরে মহিলাদের চড়িয়ে লাফ মারতে বলে ওই কিশোর। স্থানীয় বাসিন্দা রফিকুল গাজি বলেন, ‘‘অন্তঃসত্ত্বা মহিলার পক্ষে ও ভাবে ঝাঁপ দেওয়ায় ঝুঁকি ছিল। কিন্তু আগুন থেকে বাঁচতে আর তো কোনও উপায়ও ছিল না।’’ ওই মহিলা সুস্থ রয়েছেন বলে জানিয়েছেন স্থানীয় বাসিন্দারা।
দুই মহিলাকে প্রাণে বাঁচানো গেলেও নির্মলবাবুকে বাঁচানো যায়নি। ঘটনার সময়ে তাঁর ঘরে তিনি ছাড়া কেউ ছিলেন না। তার উপরে দরজার তালা বাইরে থেকে দড়ি দিয়ে বাঁধা ছিল। শনিবার মৃতের স্ত্রী সুমতি মণ্ডল বলেন, ‘‘দশ বছর ধরে স্বামী পক্ষাঘাতগ্রস্ত হয়ে শয্যাশায়ী ছিলেন। মল রোডে এক জনের বাড়িতে কাজ করার সময়ে খবরটা পেলাম। আমার নাতনি বলল, সে দাদুকে বাঁচানোর চেষ্টা করেছিল। কিন্তু বাড়ির দিকে যাওয়ার সময়ে একটি জ্বলন্ত কাঠ ওর
সামনে ভেঙে পড়ে। তখন ওকে প্রতিবেশীরা বাইরে টেনে নিয়ে আসেন।’’ ওই জমি ছাড়ার জন্য রবিউল হুমকি দিতেন বলে অভিযোগ করেছেন মৃতের স্ত্রীও। দুই মেয়ের বিয়ের জন্য জমানো টাকা খুইয়ে একই অভিযোগ করেছেন আবদুল রহমান গাজি বা নুরনাহার বিবিরাও।
এ দিন রবিউলের বিরুদ্ধে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করতে যান সাবিনা-সহ স্থানীয় বাসিন্দারা। কিন্তু আগুন কী ভাবে লাগল, সে ব্যাপারে নিশ্চিত না হয়ে পুলিশ অভিযোগ
নিতে চায়নি বলে দাবি সাবিনার। অভিযোগ অস্বীকার করে সম্পর্কে সাবিনার দেওর রবিউল বলেন, ‘‘ওই জমির মালিক আমি। ভাড়াটেরা জমি দখল করে রাখলেও আমি কখনও হুমকি দিইনি। শুক্রবার সারা দিন স্ত্রীর অসুস্থতার জন্য হাসপাতালে ছিলাম। মিথ্যা অভিযোগ করা হচ্ছে।’’
এ দিন ঘটনাস্থলে গিয়ে তৃণমূলের স্থানীয় বিধায়ক তথা মন্ত্রী পূর্ণেন্দু বসু বলেন, ‘‘সরকারি ভাবে ক্ষতিগ্রস্তদের যা যা প্রাপ্য, সব দেওয়া হবে। আহতদের চিকিৎসার ব্যবস্থাও করা হয়েছে। পুড়ে যাওয়া সরকারি পরিচয়পত্র, রেশন কার্ড প্রশাসনিক উদ্যোগে করে দেওয়া হবে। ক্ষতিগ্রস্তেরা নতুন বাড়িও পাবেন।’’ পুলিশ জানিয়েছে, ওই জমির মালিকানা নিয়ে পুরনো বিবাদ রয়েছে। আগুন কী ভাবে লেগেছে, তা এখনই বলা সম্ভব নয়। ফরেন্সিক
পরীক্ষার জন্য নমুনা সংগ্রহ করা হবে। সব সম্ভাবনার কথা মাথায় রেখেই তদন্ত করা হচ্ছে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy