প্রতীকী ছবি।
কয়েক দিন আগেই পাটুলির একটি বহুতলে এক ব্যক্তির খোঁজে হানা দিয়েছিলেন কলকাতা পুলিশের মাদক দমন শাখার তদন্তকারীরা। পুলিশের সন্দেহ ছিল, ওই ব্যক্তি নিজে মাদক সেবনের পাশাপাশি পাচারেও যুক্ত রয়েছেন। সোশ্যাল মিডিয়ায় নজরদারি চালিয়ে তাঁর উপরে দৃষ্টি যায় তদন্তকারীদের।অথচ, নাগালে পেয়েও তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে পারেননি তদন্তকারীরা। তন্ন তন্ন করে খুঁজেও তাঁর বাড়িথেকে মাদক মেলেনি বলেই খবর। বরং জানা যায়, ব্যাঙ্ককর্মী ওই ব্যক্তির সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও অ্যাকাউন্টই নেই!
এ-ও জানা যায়, পুলিশ যেটা দেখেছে, সেটা আদতে ভুয়ো প্রোফাইল! ওই ভুয়ো প্রোফাইলের আসল মাথা কে, তা খুঁজে বার করতে কালঘাম ছোটে তদন্তকারীদের। শেষে অবশ্য টানা নজরদারি চালিয়ে ধরা হয় আসল লোকটিকে।
এই মুহূর্তে মাদকের কারবারের বেশির ভাগটাই এমন ভুয়ো প্রোফাইলের আড়ালে থাকা লোকজন নিয়ন্ত্রণ করছে বলে ‘দ্য নার্কোটিক্স কন্ট্রোল বুরো অব ইন্ডিয়া’ (এনসিবি) সূত্রের খবর। এনসিবি জানাচ্ছে, এক ধরনের প্রক্সি সার্ভার ব্যবহার করে যে হেতু গোটা প্রক্রিয়াটা হচ্ছে,তাই তাদের নাগাল পাওয়া কঠিন। ভুয়ো প্রোফাইলের রহস্য ভেদ করাই এখন মূল চ্যালেঞ্জ তদন্তকারীদের। শহর থেকে গত এক বছরে এক কোটি টাকারও বেশি মূল্যের মাদক বাজেয়াপ্ত হয়েছে এবংমাদকের কারবারের মাথাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এই সাফল্য সত্ত্বেও রবিবার, আন্তর্জাতিক মাদক-বিরোধী দিবসের আগে তদন্তকারীরা মানছেন, তাঁদের গলার কাঁটা ‘টর ব্রাউজ়ার’-এর মতো প্রক্সি সার্ভার ব্যবহারের প্রবণতা বৃদ্ধি।
সাইবার গবেষকেরা জানাচ্ছেন, অনলাইন ব্যবহারকারীদের বড় অংশ গুগল বা অন্য সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমেই কোনও কিছুর সন্ধান করেন। এ ক্ষেত্রে ব্যবহারকারীর ‘সার্চ হিস্ট্রি’ এবং ‘আইপি অ্যাড্রেস’ সংরক্ষিত থাকে। কিন্তু অনলাইনের আরও একটি অংশে এই সব সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে ঢোকা যায় না। তার নাম ‘ডিপ ওয়েব’। এরই একটি অংশ হল ‘ডার্ক ওয়েব’, যেখানে ‘টর’ নামে একটি প্রক্সি সার্চ ইঞ্জিনের মাধ্যমে ঢোকা যায়। শিশু পর্নোগ্রাফি, মাদক, আগ্নেয়াস্ত্র, ব্যাঙ্ক বা সোশ্যাল মিডিয়ার হ্যাক হওয়া অ্যাকাউন্টের তথ্য— সবই বিক্রি হয় সেখানে। সাধারণ টাকায় নয়। এই ওয়েব মাধ্যমে কেনাবেচা চলে বিটকয়েনে (এক ধরনের ক্রিপ্টো কারেন্সি)। অভিযোগ উঠছে, গেম ও কম্পিউটারে কাজ করার নামে দেদার টর ব্রাউজ়ার ব্যবহার হচ্ছে। বাবা-মায়ের ক্রেডিট কার্ডে ‘বিটকয়েন’ কিনছে পড়ুয়ারা। তা দিয়েই বরাত দেওয়া মাদক ‘কুরিয়র’ মারফত হাতে আসছে।
এনসিবি-র এক কর্তা বললেন, ‘‘কুরিয়র ধরে এবং অন্য নানা ভাবে নজরদারি চালিয়ে কিছু ক্ষেত্রে সাফল্য পাওয়া গিয়েছে। এখন ডার্ক ওয়েবের থেকেও চিন্তা বাড়াচ্ছেসাধারণ সোশ্যাল মিডিয়ার অ্যাকাউন্টগুলি। প্রক্সি সার্ভার দিয়ে সোশ্যাল মিডিয়া সাইটে ঢুকে পরিচিত মুখের ছবি দিয়ে ভুয়ো অ্যাকাউন্ট খোলা হচ্ছে। সেই অ্যাকাউন্ট থেকে গ্রুপ তৈরি করে চালানো হচ্ছে মাদকের কারবার। প্রক্সি সার্ভার হওয়ায় আইপি অ্যাড্রেস সেভ হচ্ছে না, ফলেধরাই কঠিন হচ্ছে।’’ লালবাজারের মাদক দমন শাখার এক তদন্তকারীর মন্তব্য, ‘‘এর সঙ্গেই আছে নানা মেসেজিং অ্যাপ। চাইলে, নির্দিষ্ট সময়ের পরে কথোপকথন নিজে থেকে মুছে ফেলার ব্যবস্থাও রয়েছে সেখানে। ফলে কথোপকথনের হদিস পাওয়া প্রায় অসম্ভব।’’
তা হলে উপায়? ‘ইন্ডিয়ান স্কুল অব অ্যান্টি হ্যাকিং’-এর অধিকর্তা সন্দীপ সেনগুপ্ত মনে করেন, ‘‘রাখে প্রযুক্তি মারে কে! তবে প্রযুক্তির পথ ধরে পিছু নিয়ে কিছুটা চেষ্টা করা যেতে পারে। যদিও বেশি জরুরি সচেতনতা এবং মাদক-বিরোধী শিক্ষার প্রচার। আন্তর্জাতিক মাদক-বিরোধী দিবস থেকে সচেতনতার প্রচারই হওয়া উচিত মূল মন্ত্র।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy