ধর্মীয় অনুষ্ঠান উপলক্ষে হাসপাতাল চত্বরের ভিতরেই মেলা বসে গেল। রান্নাবান্না, খাওয়াদাওয়া, দোকানপাট, গানবাজনা সবই হল প্রধান ফটক আটকে। ফলে হাসপাতালে অ্যাম্বুল্যান্স ঢুকতে-বেরোতে বাধা পেল। স্ট্রেচারে করে এক ওয়ার্ড থেকে অন্য ওয়ার্ডে রোগীকে নিয়ে যেতে গিয়ে প্রতি পদে হোঁচট খেলেন রোগীর পরিজনেরা। মঙ্গলবার বিকেলের পর থেকে রাতভর এমনই চলল রাজ্যের সেরা সরকারি হাসপাতাল বলে পরিচিত এসএসকেএমে। যার রেশ রয়ে গেল বুধবার সকাল পর্যন্তও।
প্রতি বছরই এই সময়ে উরস উৎসব পালন হয় হাসপাতালে। কিন্তু সাধারণত অনুমতি মেলে শুধু খাওয়াদাওয়া, গানবাজনা আর ছোটখাটো জমায়েতের। এ বার সেখানেই পুরোদস্তুর মেলা বসানোর অনুমতি ছিল। শুধু তা-ই নয়, হরিশ মুখার্জি রোডে হাসপাতালের মূল ফটকটি বন্ধ রাখা হয়েছিল সারা রাত। পরিষেবায় বিঘ্ন ঘটছে জেনেও কী ভাবে কর্তৃপক্ষ তা মেনে নিলেন? বিষয়টি নিয়ে সরাসরি কোনও মন্তব্য করতে চাননি হাসপাতালের হাসপাতালের সুপার বা অধিকর্তা কেউই। তবে হাসপাতালের শীর্ষকর্তারা অনেকেই স্বীকার করেছেন, বাধা তো দূরের কথা, অনুষ্ঠানে যাতে প্রয়োজনে সব রকম সহযোগিতা করা হয়, সে সম্পর্কে উপর মহল থেকে কড়া নির্দেশ ছিল।
রোগী কল্যাণ সমিতির চেয়ারম্যান ফিরহাদ হাকিম অবশ্য দাবি করেছেন, তিনি জানলে এমনটা হত না। একই দাবি রাজ্যের স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা সুশান্ত বন্দ্যোপাধ্যায়েরও। তিনি বলেন, ‘‘এই প্রথম শুনলাম। হাসপাতালের গেট আটকে এমন অনুষ্ঠান কোনও ভাবেই হওয়ার কথা নয়। বিষয়টি খোঁজ নিচ্ছি।’’
স্বাস্থ্যকর্তারা ‘না জানলে’ও এসএসকেএম হাসপাতাল চত্বর মঙ্গলবার রাতে আক্ষরিক অর্থেই মেলা প্রাঙ্গনের চেহারা নিয়েছিল। বড়সড় ওই মেলায় খাবারদাবার, গয়না, সংসারের টুকিটাকি থেকে শুরু করে ভেঁপু— বিক্রি হয়েছে সবই। বাইরের প্রচুর লোকজন সারা রাত হাসপাতালে ছিলেন। রাতভর এই উৎসব চলায় ভোগান্তি বেড়েছে গুরুতর অসুস্থ রোগীদের। বিভিন্ন ওয়ার্ডের নার্সরা জানিয়েছেন, বহু রোগীই রাতে ঘুমোতে পারেননি বলে অভিযোগ করেছেন।
এমন ভোগান্তি যে হতে পারে, তার আগাম আঁচ না পাওয়ার কথা নয়। তা হলে অনুমতি দিলেন কেন? সুপার মানস সরকার বলেন, ‘‘আমি গতকাল থেকে ছুটিতে রয়েছি। তাই বলতে পারব না।’’ কিন্তু অনুমতি তো তার আগেই দেওয়া। সুপারের জবাব, ‘‘আমি বিষয়টা মনে করতে পারছি না।’’
ফিরহাদ হাকিম বলেছেন, ‘‘আগে মাজারের সামনের অংশে অনুষ্ঠান হত। গোটা হাসপাতাল চত্বর জুড়ে এ রকম অনুষ্ঠান হওয়ার কথাই নয়। এতে রোগীদের স্বার্থ বিঘ্নিত হয়।’’ তিনি জানান, নির্বাচনী আচরণবিধির কারণে গত বেশ কিছু দিন তিনি হাসপাতালের কোনও বৈঠকে অংশ নিতে পারেননি। তাই এ বারের উৎসবটি যে এমন বড় আকারে হচ্ছে, তা তাঁর জানা ছিল না।
এই অনুষ্ঠানটির আয়োজকদের মধ্যে হাসপাতালের চতুর্থ শ্রেণির কর্মীদের একাংশও যুক্ত। তাঁরা অবশ্য দাবি করেছেন রোগীদের যাতে কোনও অসুবিধা না হয়, সে দিকে সব সময়েই খেয়াল ছিল। অন্য বারের চেয়ে এ বারের আয়োজনে অতিরিক্ত কিছু ছিল বলেও মানতে চাননি তাঁরা। তাঁরা জানান, অন্য বারের চেয়ে অল্পই ফারাক ছিল। বছরে এক দিন এমন হতেই পারে!
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy