ফেসবুকে ভাইরাল এমন অদ্ভূত দেখতে এক প্রাণীর ছবি।
কী ছড়িয়েছে?
অদ্ভূত দেখতে চারপেয়ে এক প্রাণীর কিছু ছবি, যার মুখটা মানুষের মতো, গায়ে আরমাডিলোর মতো বর্ম, আঙুলগুলো ব্যাঙের মতো। সেই সঙ্গে কিছু মানুষের ছবি, যাঁরা কোনও কিছুর আঘাতে রক্তাক্ত। সঙ্গে লেখা বর্ণনায় দাবি করা হচ্ছে, বিরল ওই প্রাণীর হামলায় আহত হচ্ছেন অনেকেই। ভাইরাল হওয়া পোস্টগুলির কোথাও বলা হচ্ছে, পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড়ে ওই প্রাণীটিকে দেখা গিয়েছে। কেউ কেউ আবার লিখেছেন, রাজস্থান ও গুজরাতের খেতে এই জীবটির দেখা মিলেছে। অস্ত্র নিয়ে চাষ করতে যাওয়ারও পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে। এক জায়গায় বলা হয়েছে এই প্রাণীটির নাম ‘কুইয়া বাঘ’।
কোথায় ছড়িয়েছে?
ফেসবুকে ভাইরাল হয়েছে হিন্দি ও বাংলায় লেখা এমন বেশ কিছু পোস্ট। শুধু হিন্দিতে লেখা পোস্টে বলা হয়েছে, এই ঘটনা গুজরাত ও রাজস্থানের, বাংলায় লেখা পোস্টে দাবি কা হয়েছে এই ঘটনা পুরুলিয়ার অযোধ্যা পাহাড় ও সংলগ্ন জঙ্গলের।
ভাইরাল হওয়া কিছু ফেসবুক পোস্ট
এই তথ্য কি সঠিক?
না, এই তথ্য ঠিক নয়। ছবিটিতে যে জীবটিকে দেখা যাচ্ছে, ভূ-ভারত তো দূর অস্ত্, গোটা বিশ্বে এমন কোনও প্রাণী আদতে নেই। পুরুলিয়ায় স্থানীয় মানুষজদের সঙ্গে কথা বলা জানা গিয়েছে, এক ধরনের গিরগিটিকে তারা কুইয়া বাঘ বলে ডাকেন। যেমন বিশ্বজিৎ দাশগুপ্ত বলছিলেন, “একটু মোটা, একটু সবজেটে রঙের এক রকম গিরগিটি আছে যাকে আমরা কুইয়া বাঘ বলে ডাকি। তবে এমন কোনও প্রাণী দেখিনি।”
বিধাননগর গভর্নমেন্ট কলেজের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের প্রাক্তন অধ্যাপক অরূপ দত্তগুপ্ত বলছেন, “জীবজগতে এমন কোনও প্রাণীর অস্বিত্বই নেই। সরীসৃপদের সামনে-পিছনে চার পায়েই পাঁচটা করে আঙুল থাকে। আর স্যালামান্ডার জাতীয় উভচর প্রাণীদের সামনের পায়ে চারটে এবং পিছনের পায়ে পাঁচটা আঙুল থাকে। ছবিতে থাকা প্রাণীটির চেহারার বৈশিষ্ট্য এর কোনওটির সঙ্গেই মেলে না। আবার প্রাণীটির গায়ের উপরের অংশে কিছু স্তন্যপায়ী বা সরীসৃপের মতো বর্ম থাকলেও শরীরের নীচের দিকে কোনও আঁশ নেই।” চোখ দুটো সরীসৃপ বা স্যালামান্ডারের মতো মুখের দু’পাশে নয়। অধ্যাপক দত্তগুপ্তের মতে, “ছবিতে থাকা প্রাণীটি আসলে সুকুমার রায়ের বকচ্ছপ বা হাঁসজারুর মতো, কল্পনা-জাত।”
সত্যিটা কী এবং আনন্দবাজার কী ভাবে তা যাচাই করল
গুগল ইমেজ সার্চে ওই প্রাণীটির ছবি দিয়ে বেশ কিছু পুরনো ওয়েবসাইট লিঙ্কের সন্ধান মেলে। দেখা যায় যে ২০১৮ সালের অক্টোবরেও অদ্ভূত দেখতে প্রাণীটির এই ছবিগুলিই ভাইরাল হয়েছিল। তখন একাধিক জায়গায় এটিকে ‘বুশি বেবি’ বলে দাবি করা হয়।
গুগল ইমেজ সার্চে পাওয়া বছর দুয়েক আগের কিছু প্রতিবেদন
ছবিগুলি প্রথম আপলোড হয় লাইরা মাগানুকো বলে এক ইটালীয় ভাস্করের ফেসবুক প্রোফাইলে, ২০১৮ সালের ৩ অক্টোবর। শিল্পী হাইপার রিয়েলিটি নিয়ে কাজ করেন, সিলিকোনের তৈরি এমনই সব ভাস্কর্যে নিজের কল্পনাকে ফুটিয়ে তোলেন।
পুরুলিয়া থেকে গুজরাত, এমন কোনও প্রাণীর দেখা পাওয়া যায়নি, আর তাই তার হামলা করারও প্রশ্ন ওঠে না।
হোয়াটস্অ্যাপ, ফেসবুক, টুইটারে যা-ই দেখবেন, তা-ই বিশ্বাস করবেন না। শেয়ারও করে দেবেন না। বিশেষত এই আতঙ্কগ্রস্ত অবস্থায় তো তো নয়ই। এ ভাবেই ছড়িয়ে পড়ে ভুয়ো খবর। যাচাই করুন। কোনও খবর, তথ্য, ছবি বা ভিডিয়ো নিয়ে মনে সংশয় দেখা দিলে আমাদের জানান এই ঠিকানায় feedback@abpdigital.in
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy