ট্যাংরার ঘটনাস্থল দেখাচ্ছেন রবিনাথ গুড়ে। ছবি: দেশকল্যাণ চৌধুরী।
ট্যাংরায় মঙ্গলবার রাতে ঠিক কী ঘটেছিল, তা নিয়ে তদন্ত চলছে। এরই মধ্যে নিজেকে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী বলে দাবি করলেন এক যুবক। বছর আটত্রিশের রবিনাথ গুড়ে শুক্রবার দাবি করেন, ‘‘অ্যাম্বুল্যান্স সরাসরি ওই বৃদ্ধকে ধাক্কা মেরে বেরিয়ে গিয়েছিল বলে যে-দাবি করা হচ্ছে, তা ঠিক নয়। নিজের চোখে দেখেছি, সে-রাতে ওই মহিলাকে জোর করে অ্যাম্বুল্যান্সে টেনে তোলার চেষ্টা করা হয়েছিল। তাঁকে বাঁচাতে যাওয়া শ্বশুরকেই পিষে দেয় অ্যাম্বুল্যান্স।’’
ট্যাংরা এলাকাতেই মাংসের দোকানে মুরগি জোগান দেন রবিনাথ। এক প্রোমোটারের সহযোগী হিসেবেও কাজ করেন তিনি। রবিনাথের বক্তব্য, মঙ্গলবার রাতে প্রোমোটিংয়ের সূত্রে বালির লরি খালি করানোর কাজ চলছিল গোবিন্দ খটিক রোডে। তিনি লরির চালকের সঙ্গে কথা বলছিলেন। রবিনাথের দাবি, ‘‘তখন প্রায় পৌনে ১২টা হবে। প্রথমে কিছু খেয়াল করিনি। কিন্তু তপসিয়ার দিক থেকে একটি অ্যাম্বুল্যান্স দ্রুত গতিতে এসে রাস্তার বাঁ দিক ঘেঁষে এমন ভাবে দাঁড়ায় যে, ওই দিকে তাকাই। দেখি অ্যাম্বুল্যান্সের সামনে দাঁড়ানো এক মহিলা চেঁচাচ্ছেন, ‘হাত ধরছিস কেন? ছাড় ছাড়!’ অনেকের সঙ্গে আমিও ছুটে যাই।’’
গতি বাড়িয়ে অ্যাম্বুল্যান্সটি পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে বলে রবিনাথের দাবি। তাঁর বক্তব্য, ‘‘এক বৃদ্ধ অ্যাম্বুল্যান্সের সামনে দাঁড়িয়ে পথ আটকানোর চেষ্টা করছিলেন। এত জোরে সেটি চালিয়ে দেওয়া হবে, তিনি হয়তো ভাবেননি। ধাক্কার চোটে বৃদ্ধ অনেকটা দূরে ছিটকে পড়েন। এর পরেও অবশ্য অ্যাম্বুল্যান্সটি দাঁড়ায়নি।’’ যুবক এ-ও বলেন, ‘‘প্রথমে বুঝিনি ওই মহিলা ট্যাংরা ফুলবাগান এলাকারই বাসিন্দা। ওঁর স্বামীকে চিনি। কাছেই বিয়েবাড়ি থেকে ওঁরা ফিরছিলেন। ওই বৃদ্ধ যে তাঁর শ্বশুর, পরে জানতে পারি। আমরাই অটোয় তুলে বৃদ্ধকে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিই।’’
আরও পড়ুন: সপ্তম শ্রেণির ছাত্রীকে মদ খাইয়ে গণধর্ষণ কলকাতায়, গ্রেফতার ৪ যুবক
পুলিশকে বিষয়টি জানিয়েছেন? রবিনাথ বলেন, ‘‘বুধবার সকালেই পুলিশ এসেছিল। যেখানে অ্যাম্বুল্যান্স থেকে মহিলাকে টেনে তোলার চেষ্টা হয়েছিল, সেই জায়গা দেখিয়েছি। আর পিষে দেওয়ার পরে বৃদ্ধ যেখানে পড়েছিলেন, সেটাও পুলিশ দেখাতে বলেছিল। আমার নাম, ঠিকানা লিখে নিয়ে গিয়েছে পুলিশ।’’
বৃদ্ধা মা, স্ত্রী এবং দুই পুত্র রয়েছে রবিনাথের। তাঁর কথায়, ‘‘আমাদের সঙ্গেও তো এমন কিছু ঘটে যেতে পারে। তাই সত্যি লুকোইনি।’’ অপহরণের চেষ্টা হয়েছিল কি না, সেই তদন্তে পুলিশ কি এই যুবকের বক্তব্যকে গুরুত্ব দিচ্ছে? ট্যাংরা থানা সূত্রের খবর, হাতে আসা সিসি ক্যামেরার ফুটেজে, ঘটনাস্থল দিয়ে ওই সময়ে যত জনকে চলাচল করতে দেখা গিয়েছে, তাঁদের নাম-ঠিকানার তালিকা তৈরি করা হচ্ছে। সেই তালিকা ধরে সকলের সঙ্গে কথা বলার প্রক্রিয়া শুরু হবে। ওই সময়ে ঘটনাস্থল দিয়ে যাওয়া গাড়িগুলির মালিকদের নামের তালিকাও তৈরি করা হচ্ছে বলে সূত্রের খবর।
প্রসঙ্গত, বৃহস্পতিবার ওই রাস্তার একটি ফুটেজ দেখিয়ে কলকাতা পুলিশ ইঙ্গিত দিয়েছিল, ওই রাতে যা কিছু ঘটার, তা চার সেকেন্ডের মধ্যেই ঘটেছিল। যদিও ফুটেজে দেখা যাচ্ছে, ১১টা ৫৩ মিনিট নাগাদ অভিযোগকারিণী মহিলা রাস্তার ডান থেকে বাঁ দিকে হেঁটে যাচ্ছেন। আর ১১টা ৫৩ মিনিট ৫৭ সেকেন্ড নাগাদ বাঁ দিক থেকে আসা অ্যাম্বুল্যান্সটি বেরিয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ যেখানে অ্যাম্বুল্যান্সটি মহিলার পথ আটকায় বলে অভিযোগ, সেখানকার প্রায় ৫৭ সেকেন্ডের কোনও ফুটেজ এখনও দেখা যায়নি। ফলে তদন্তকারীদের একাংশের দাবি, চার সেকেন্ড নয়, রহস্য আটকে ওই ৫৭ সেকেন্ডে। তবে চার সেকেন্ড নিয়ে বলা হল কেন? লালবাজারের কর্তারা এ দিন এ প্রসঙ্গে বলেন, ‘‘তদন্ত চলছে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy