Advertisement
E-Paper

চাকার সমস্যায় কি বাসে আগুন, উত্তর খুঁজছেন বিশেষজ্ঞেরা

বৃহস্পতিবারের ঘটনাটির ক্ষেত্রে চাকার সমস্যাই দায়ী বলে অনুমান মোটর ভেহিক্‌ল বিভাগের কারিগরি আধিকারিকদের একাংশের।

চলন্ত বাসে আগুন। — নিজস্ব চিত্র।

চলন্ত বাসে আগুন। — নিজস্ব চিত্র।

ফিরোজ ইসলাম 

শেষ আপডেট: ১৯ এপ্রিল ২০২৫ ০৮:৩২
Share
Save

বয়স ছ’মাসও পেরোয়নি। গত ২৪ অক্টোবর সরকারি ভাবে নথিভুক্ত করে কলকাতা-পুরুলিয়া রুটে বাস নামিয়েছিলেন স্বপ্না বন্দ্যোপাধ্যায়। মাস কয়েক আগে তাঁর স্বামী মারা যাওয়ার পরে ছেলে সৌমেন ব্যবসা দেখাশোনা করেন। প্রায় নতুন এই বাসে বৃহস্পতিবার রাতে আচমকা কী ভাবে আগুন লাগল, সেটাই ভেবে পাচ্ছেন না সৌমেন।
প্রসঙ্গত, কলকাতা থেকে পুরুলিয়ার বিভিন্ন রুটে মোট প্রায় ৫০টি বাস রাতে যাতায়াত করে। ট্রেনের সময় অনিয়মিত হওয়ায় ব্যবসায়িক
কাজে কলকাতায় আসা যাত্রী, পুরুলিয়াগামী পর্যটক, পড়ুয়া— সকলের ভরসা এই সব বাস। বৃহস্পতিবারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় উদ্বিগ্ন পুরুলিয়া বাস ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক প্রতিমারঞ্জন সেনগুপ্তও। বাস নির্মাতা এবং প্রযুক্তিবিদদের একাংশ জানাচ্ছেন, বাসে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে মূলত তিনটি কারণে— ইঞ্জিন এবং অন্যান্য যন্ত্রের সমস্যায়, বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটে এবং চাকা অস্বাভাবিক গরম হয়ে যাওয়ায়।

বৃহস্পতিবারের ঘটনাটির ক্ষেত্রে চাকার সমস্যাই দায়ী বলে অনুমান মোটর ভেহিক্‌ল বিভাগের কারিগরি আধিকারিকদের একাংশের। তাঁদের মতে, বাসের ব্রেক অথবা চাকার যন্ত্রাংশ জ্যাম হয়ে এমন বিপত্তি ঘটে থাকতে পারে। নিচু গিয়ারে গাড়ি চালানোর কারণে সম্ভবত তা বুঝতে পারেননি চালক। যন্ত্রাংশ জ্যাম হওয়ার ফলে চাকার ব্রেক শু অত্যধিক গরম হয়ে আগুন লেগে থাকতে পারে বলে মনে করছেন তাঁরা।

মোটর ভেহিক্‌ল বিভাগের কারিগরি বিভাগের আধিকারিক তথা ব্যারাকপুরের অতিরিক্ত আঞ্চলিক পরিবহণ অধিকর্তা সুরজিৎ চট্টোপাধ্যায় জানান, এই ধরনের ঘটনার কারণ খুঁজতে তাঁরা অভ্যন্তরীণ তদন্ত তো করেনই, সেই সঙ্গে হয় ফরেন্সিক তদন্তও। সংশ্লিষ্ট তদন্তের রিপোর্ট জমা হয় কেন্দ্রীয় সরকারের ইন্টিগ্রেটেড রোড অ্যাক্সিডেন্ট ডেটাবেস পোর্টালে। সেখানে দুর্ঘটনাস্থলের ভৌগোলিক অবস্থানও দেওয়া থাকে। ওই সব তথ্য নিয়মিত পর্যালোচনা করে গাড়িতে সম্ভাব্য সুরক্ষার মাপকাঠি নির্ধারণ করে অটোমোটিভ রিসার্চ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া (এআরএআই)।

গাড়ি নির্মাণ প্রযুক্তির সঙ্গে যুক্ত আধিকারিকেরা জানাচ্ছেন, ২০২৩ সালের এপ্রিল মাস থেকে বিএস-৬ মাত্রার সঙ্গে যুক্ত হয়েছে অন-বোর্ড ডায়াগনস্টিক ডিভাইস নর্ম-২ (ওবিডি-২)। এই ব্যবস্থায় গাড়ির ইঞ্জিন এবং অন্য যন্ত্রাংশ অস্বাভাবিক আচরণ করলে নির্দিষ্ট ‘অ্যালার্ট কোড’ তৈরি হয়। যা নির্দিষ্ট অ্যাপ ছাড়াও গাড়িতে থাকা ওবিডি পোর্টের সঙ্গে ল্যাপটপ যুক্ত করলে জানা যায়। এ ছাড়াও, ইঞ্জিন গরম হওয়া, অয়েল ফিল্টারে সমস্যা বোঝা যায় গাড়ির ড্যাশবোর্ডে থাকা বিভিন্ন সঙ্কেত থেকে। প্রযুক্তিবিদদের পরামর্শ, এই সব লক্ষণ দেখলেই গাড়ির প্রয়োজনীয় পরীক্ষা করানো উচিত।

তবে, আধুনিক গাড়ি প্রযুক্তি-নির্ভর হওয়ায় সেখানে শর্ট সার্কিট থেকে অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বেড়েছে। গাড়ির সেল্ফ স্টার্ট ছাড়াও বিভিন্ন কনভার্টারে অল্প সময়ে উচ্চ মাত্রার বিদ্যুৎ প্রবাহিত হয়। ফলে, তারে সমস্যা থাকলে সেখান থেকেও আগুন ছড়ানোর আশঙ্কা রয়ে যায়। এই সমস্যা দূর করতে বিভিন্ন বৈদ্যুতিক সার্কিটে পৃথক ফিউজ় ব্যবহার করা হয় বলে জানাচ্ছেন বাস নির্মাণের সঙ্গে যুক্ত প্রযুক্তিবিদেরা। বাস-সহ বিভিন্ন গাড়িতে নিজস্ব প্রয়োজন ছাড়াও অতিরিক্ত আলো, পাখা, বিনোদন সংক্রান্ত উপকরণ ব্যবহৃত হয়। অনেক ক্ষেত্রে ওই সব উপকরণ চালাতে
গিয়ে ফিউজ ব্যবস্থা এড়িয়ে সংযোগ তৈরি করা হয়। তাতেও অগ্নিকাণ্ডের ঝুঁকি বাড়ে।

প্রযুক্তিবিদেরা আরও জানাচ্ছেন, ব্যাটারি-সহ বেশ কিছু ক্ষেত্রে আলগা সংযোগ অনেক সময়ে বাড়তি তাপমাত্রার সৃষ্টি করে। তার ফলেও আগুন লাগার ঘটনা ঘটে। এ ছাড়াও চাকার ঘর্ষণ, রাস্তার উষ্ণতা, হাওয়ার চাপ সমস্যার সৃষ্টি করতে পারে। বিপত্তি হতে পারে ব্রেক থেকেও। বৃহস্পতিবারের ঘটনায় যেমনটা হয়েছে বলে তাঁদের ধারণা।

তাই প্রযুক্তিবিদদের পরামর্শ, গাড়ি নিয়ে বেরোনোর আগে ব্রেক অয়েল, ইঞ্জিনের কুল্যান্ট এবং অন্যান্য একাধিক ব্যবস্থা পরীক্ষা করা জরুরি। এ ক্ষেত্রে দীর্ঘ দিনের অভিজ্ঞ বাসচালক কেন কোনও অস্বাভাবিকতা টের পেলেন না, তা-ও ভাবাচ্ছে তাঁদের। আধুনিক প্রযুক্তির বাসে সাইলেন্সার লাগোয়া অংশে একাধিক তারের উপস্থিতিকে দুষছেন কেউ কেউ। তবে সকলেই বলছেন, ফরেন্সিক পরীক্ষার পরেই অগ্নিকাণ্ডের প্রকৃত কারণ জানা যাবে।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Second Hoogly Bridge

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

{-- Slick slider script --}}