Advertisement
০৫ নভেম্বর ২০২৪
tala bridge

টালা সেতু ‘অতি দুর্বল’, পুজোর আগেই বাস চলাচল বন্ধের সুপারিশ, কাল সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রী

সেতু পর্যবেক্ষণ করার পর বুধবার সেতু পরামর্শদাতা কমিটির সদস্যরা একটি বৈঠক করেন। তার পর সেতু সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট পাঠানো হয় রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দে-কে।

—ফাইল চিত্র।

—ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৬ সেপ্টেম্বর ২০১৯ ১৭:২১
Share: Save:

পণ্যবাহী ভারী গাড়ি চলাচল আগেই বন্ধ করা হয়েছিল। এ বার টালা সেতু (হেমন্ত সেতু)-র উপর দিয়ে বাস চলাচলও বন্ধ করার সুপারিশ করলেন বিশেষজ্ঞরা। তাঁদের মতে, ৫৭ বছরের পুরনো ওই সেতুর হাল এতটাই খারাপ, যে কোনও দিন ঘটতে পারে মাঝেরহাট সেতু দুর্ঘটনার পুনরাবৃত্তি। তবে, পুজোর আগে এখনই ওই সেতুর উপর বাস চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করার ক্ষেত্রে জোরালো আপত্তি তুলেছে কলকাতা পুলিশ। তাঁদের আশঙ্কা, টালা সেতু পুজোর সময় বন্ধ থাকলে কার্যত ভেঙে পড়বে উত্তর কলকাতার ট্রাফিক ব্যাবস্থা।

এই পরিস্থিতিতে টালা সেতু নিয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত নেবেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নিজে। শুক্রবার তিনি এ নিয়ে বিশেষ বৈঠক ডেকেছেন বলে নবান্ন সূত্রে জানানো হয়েছে। সেখানেই এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

১৯৬২ সালে উদ্বোধন করা হয়েছিল ওই উড়ালপুল। ৬২৫ মিটার লম্বা ওই সেতুর ১৮২ মিটার রয়েছে রেল লাইনের উপর। সেই অংশটির রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব রেলের। বাকিটা রাজ্য পূর্ত দফতরের। কিন্তু টালা সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করে রীতিমতো আশঙ্কিত রাজ্যের সেতু পরামর্শদাতা কমিটির বিশেষজ্ঞরা। গত সপ্তাহে সেতুর স্বাস্থ্য পরীক্ষা করতে গিয়ে তাঁরা চমকে গিয়েছেন। ওই কমিটির এক সদস্য বৃহস্পতিবার বলেন, ‘‘মাঝেরহাট সেতু যে প্রযুক্তিতে তৈরি করা হয়েছিল, টালা সেতুও একই প্রযুক্তিতে তৈরি। সোজা ভাষায় স্তম্ভের উপর ইস্পাতের জাল। তার উপর কংক্রিটের চাদর।” ওই বিশেষজ্ঞদের মতে, সেতুর ওই লোহার জাল, দীর্ঘ দিন ধরে ভার বহন করতে করতে নীচের দিকে নেমে আসছে। ফলে সেতুর মূল কাঠামোয় ক্ষতি হয়েছে।

আরও পড়ুন: পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালানোর অভিযোগ প্রমাণে ব্যর্থ লালবাজার, বেকসুর খালাস গোপাল

সেতুর উপর দিয়ে যাওয়া গ্যাসের পাইপ লাইন অবিলম্বে সরানোর সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। —নিজস্ব চিত্র।

কলকাতা শহরে যে পরিমাণ পণ্যবাহী গাড়ি ঢোকে, তার প্রায় অর্ধেকই চলাচল করে টালা সেতুর উপর দিয়ে। ফলে প্রতি দিন ব্যাপক ভার বহন করতে হয় ওই সেতুকে। সে কারণেই আশঙ্কা আরও বেশি বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। কমিটির সদস্য অন্য এক ইঞ্জিনিয়ার বলেন, ‘‘গোটা সেতুতে জায়গায় জায়গায় কংক্রিটের চাদর খসে পড়েছে। উন্মুক্ত হয়ে গিয়েছে ভিতরের ইস্পাত। সেই ইস্পাতেও ক্ষয় শুরু হয়েছে।’’ তিনি আরও বলেন, ‘‘এ সবই হল কংক্রিটের ভার বহন ক্ষমতা শেষ হয়ে আসার লক্ষণ। এর সঙ্গে অন্যান্য সেতুর মতো একের পর এক বিটুমিনের প্রলেপ ব্রিজের স্থায়ী ভার আরও বৃদ্ধি করেছে। ফলে সময়ের সঙ্গে সঙ্গে সেতু অক্ষম এবং ন্যুব্জ হয়ে উঠেছে।’’

বিশেষজ্ঞরা প্রথমেই সেতুর ভার কমাতে ভারী পণ্যবাহী গাড়ি চলাচলে নিষেধাজ্ঞা জারি করার সুপারিশ করেন। সেই নির্দেশ মেনে শনিবার সকাল থেকেই ভারী পণ্যবাহী গাড়ি চলাচল বন্ধ করে দেওয়া হয় টালা সেতুতে। কিন্তু এর পরেও পরিস্থিতি খতিয়ে দেখে বিশেষজ্ঞরা সেতুকে ‘খুব দুর্বল’ বলে চিহ্নিত করেন। ওই কমিটির একটি বড় অংশ সেতু মেরামত না করা পর্যন্ত তা যান চলাচলের অনুপযুক্ত বলে মত দেন।

সেতু পর্যবেক্ষণ করার পর বুধবার সেতু পরামর্শদাতা কমিটির সদস্যরা একটি বৈঠক করেন। তার পর সেতু সংক্রান্ত একটি রিপোর্ট পাঠানো হয় রাজ্যের মুখ্যসচিব মলয় দে-কে। ওই রিপোর্টে তাঁরা টালা সেতুর গুরুত্ব এবং ট্রাফিক সমস্যার কথা মাথায় রেখে ছোট গাড়ি চলাচলে সবুজ সঙ্কেত দেন। কিন্তু পণ্যবাহী গাড়ির মতো বাস চলাচলেও নিষেধাজ্ঞার সুপারিশ করেন। সেই সুপারিশের বিপক্ষেই মত দিয়েছে কলকাতা পুলিশ।

আরও পড়ুন: বৃষ্টির আশঙ্কায় বিকল্প প্রস্তুতি পাড়ায় পাড়ায়

প্রাথমিক ভাবে এই তিনটি রাস্তাকেই বিকল্প পথ হিসাবে ভাবা হচ্ছে।

পুলিশের যুক্তি, ওই সেতু উত্তর কলকাতা এবং বিটি রোড সংলগ্ন উত্তর শহরতলির বিস্তীর্ণ এলাকাকে যুক্ত করেছে। পুজোর সময় তা বন্ধ থাকলে কার্যত স্তব্ধ হয়ে যাবে উত্তর কলাকাতার একটা বড় অংশের যান চলাচল। কারণ, ওই সেতু বন্ধ থাকলে শহরে ঢোকা বা বেরনোর পর্যাপ্ত রাস্তা নেই ওই এলাকায়। তাই পুলিশের পক্ষ থেকে পুজোর পরে ওই নিষেধাজ্ঞা আরোপের আর্জি জানানো হয়। সূত্রের খবর, বৃহস্পতিবার নবান্নে ফের বৈঠকে বসেন বিশেষজ্ঞরা। বৈঠকে ছিলেন পরিকাঠামো সমীক্ষা সংস্থা রাইটস-এর এক্সপার্টরাও। তাঁরা সেতুর ‘খুব দুর্বল’ অবস্থার কথা উল্লেখ করে বাস চলাচল বন্ধ রাখার উপর জোর দেন।

অন্য দিকে, এ দিনের বৈঠকে সেতুর তলায় বসবাস করা প্রায় ২০০ জন মানুষের অবিলম্বে অন্যত্র সরানোর কথা বলেন। কমিটির এক সদস্য বলেন, ‘‘সেতুর কংক্রিটের যা অবস্থা তাতে যে কোনও সময় বড় চাঙড় খসে পড়ে প্রাণহানি হতে পারে।” ওই ২০০ জনকে কোথায় নিয়ে যাওয়া হবে সেই বিকল্প জায়গা নিয়েও আলোচনা হয় এ দিন। এ ছাড়াও ওই সেতুর উপর দিয়ে একটি বেসরকারি সংস্থার গ্যাস-পাইপ লাইন গিয়েছে। সেই পাইপ লাইনও অবিলম্বে সরানোর সুপারিশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।

পুলিশ সূত্রে খবর, তাঁরা প্রাথমিক ভাবে তিনটি বিকল্প পথ ভেবেছেন। একটি, দমদম চিড়িয়ামোড় থেকে নাগেরবাজার, লেকটাউন হয়ে আরজি কর রোড। অন্যটি কাশীপুর রোড। তৃতীয় বিকল্প মূলত উত্তরমুখী গাড়িগুলির ক্ষেত্রে, খালের পাশ দিয়ে রাস্তা ধরে আরজি কর রোড। তবে কাশীপুর রোড ছাড়া বাকি দু’টি ক্ষেত্রেই ব্যাপক চাপ বাড়বে আরজি কর রোডের উপর। এমনিতেই ওই রাস্তায় যথেষ্ট চাপ রয়েছে। তার উপর ওই বাড়তি চাপ কী ভাবে মোকাবিলা করা হবে তা নিয়ে দুশ্চিন্তা বাড়ছে পুলিশ কর্তাদের।

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE