—ছবি পিটিআই।
কোভিড-বর্জ্যের কারণে কলকাতা-সহ গোটা রাজ্যে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের পরিমাণ এলাকাভিত্তিক প্রায় ৩০-৫০ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। কিন্তু পর্যাপ্ত লোকবল, গাড়ির অভাবের পাশাপাশি সেই বর্জ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রেও নিয়মে ফাঁক থেকে যাচ্ছে। কী ফাঁক থাকছে, কী ভাবেই বা তার সমাধান করা যায়— সেই দিকগুলি দেখার জন্য গত জুলাই মাসে আট সদস্যের একটি কমিটি গড়েছিল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। তাতে রাজ্য স্বাস্থ্য দফতর, নগরোন্নয়ন দফতর, দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের পাশাপাশি ছিলেন নাগরিক সমাজের প্রতিনিধিরাও। গত সেপ্টেম্বরে কলকাতা-সহ রাজ্যের কোভিড-বর্জ্য সংক্রান্ত সমস্যা এবং তার সমাধানের সুপারিশ করে অন্তর্বর্তী রিপোর্ট জমা দেয় ওই কমিটি। কিন্তু সেই সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে কী পদক্ষেপ করা হল, দু’মাস পরেও তা নিয়ে ধন্দে কমিটির সদস্যদের একাংশ। সে সম্পর্কে নির্দিষ্ট ভাবে বলতে পারছেন না তাঁরা।
কোভিড-বর্জ্য নিয়ে গঠিত সংশ্লিষ্ট কমিটির সদস্য, ইএনটি চিকিৎসক দুলাল বসু বলেন, ‘‘আমরা যে সুপারিশগুলি করেছিলাম, তার ৯০ শতাংশকেই মান্যতা দিয়েছিল রাজ্য সরকার। তবে তার পরে বিষয়টির কী হল, সেই সম্পর্কে কিছু জানি না।’’ কমিটির আর এক সদস্য, ‘স্টেট আর্বান ডেভেলপমেন্ট এজেন্সি’-র যুগ্ম অধিকর্তা আশিস সাহা বলেন, ‘‘একটা অন্তর্বর্তী রিপোর্ট তৈরি হয়েছিল। কিন্তু চূড়ান্ত প্রস্তাবটি দেখে বলতে হবে।’’
অথচ প্রশাসন সূত্রের খবর, কোভিড-বর্জ্য নিয়ে ক্রমবর্ধমান সমস্যার কথা আন্দাজ করেই ‘বায়োমেডিক্যাল ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট রুলস, ২০১৬’ এবং কোভিড অতিমারির পরিপ্রেক্ষিতে তার সংশোধনীর উপরে ভিত্তি করে কোভিড-বর্জ্য সংগ্রহ, প্রক্রিয়াকরণ এবং তা নষ্টের জন্য গত জুলাইতে কমিটি গড়েছিল দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। ঠিক হয়েছিল, কলকাতা, হাওড়া, দুই ২৪ পরগনা, হুগলি-সহ সারা রাজ্যে কোভিড-বর্জ্যের পরিস্থিতি সরেজমিনে দেখার পাশাপাশি কোভিড-বর্জ্য সংগ্রহের জন্য রাজ্যে যে ছ’টি ‘কমন বায়োমেডিক্যাল ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট ফেসিলিটিজ়’ (সিবিডব্লিউটিএফ) কাজ করছে, বর্জ্য সংগ্রহে তাদের কী অসুবিধা হচ্ছে, তা-ও কমিটি সবিস্তার শুনবে।
কোভিড-বর্জ্য কী
• পিপিই: গগল্স, ফেস শিল্ড, স্প্ল্যাশ-প্রুফ এপ্রন, প্লাস্টিক কভারঅল, হ্যাজ়মেট সুট, নাইট্রাইল গ্লাভস
• মাস্ক
• মাথার কভার/ক্যাপ
• জুতোর কভার
• লিনেন গাউন
• রোগীর উচ্ছিষ্ট খাবার, ফেলে দেওয়া যাবে এমন থালা, গ্লাস, টিসু
কমিটির সুপারিশ
• স্থানীয় ও বৃহত্তর ক্ষেত্রে কোভিড-বর্জ্য নিয়ে সচেতনতা বৃদ্ধি
• কোথায় কোথায় কোভিড-বর্জ্য সংক্রান্ত নিয়ম ভাঙা হচ্ছে, তার তালিকা তৈরি
• নিয়ম লঙ্ঘনকারী হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলির বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ
• কোভিড-বর্জ্য সংগ্রহ, গাড়িতে নিয়ে যাওয়া, প্রক্রিয়াকরণ এবং নষ্ট— প্রতিটি পর্যায়ের জন্য নজরদারি দল
যেমন কলকাতার ক্ষেত্রে গৃহ-পর্যবেক্ষণে থাকা রোগীদের বাড়ি থেকে কোভিড-বর্জ্য সংগ্রহের জন্য একটি সিবিডব্লিউটিএফ-কে দায়িত্ব দিয়েছিল কলকাতা পুরসভা। ঠিক হয়েছিল, গৃহ-পর্যবেক্ষণে থাকা রোগীদের বর্জ্য সংগ্রহ করবে ওই সংস্থা। তার পরিবর্তে সংশ্লিষ্ট রোগীরা ওই সংস্থাকে টাকা দেবেন। কিন্তু সংস্থাটির অভিযোগ, গৃহ-পর্যবেক্ষণে থাকা অধিকাংশ রোগী সেই টাকা দিতে অস্বীকার করেন। রাজ্য স্বাস্থ্য দফতরের একটি সূত্র বলছে, রবিবার পর্যন্ত গৃহ-পর্যবেক্ষণে থাকা রোগীর সংখ্যা প্রায় ৯০ হাজার। কমিটির এক সদস্যের কথায়, ‘‘যাঁরা টাকা দিতে অস্বীকার করছেন, তাঁদের বাড়ির সামনেই কোভিড-বর্জ্য পড়ে থাকছে। তার পরে রাতের অন্ধকারে সেগুলি যত্রতত্র ফেলে দেওয়া হচ্ছে। এতে সংক্রমণের মাত্রা বাড়ার আশঙ্কা থাকছে।’’
পাশাপাশি আরও একটি গুরুতর বিষয় উঠে এসেছে! সিবিডব্লিউটিএফ জানাচ্ছে, বেশির ভাগ ক্ষেত্রে, এমনকি শহরের নামী বেসরকারি হাসপাতালগুলির ক্ষেত্রেও দেখা গিয়েছে, তারা কোভিড-বর্জ্য নিয়ে চূড়ান্ত উদাসীন! অধিকাংশ জায়গায় কোভিড-বর্জ্যের জন্য নির্ধারিত হলুদ ব্যাগ ফেলে রাখা হচ্ছে সাধারণ মানুষের যাতায়াতের পথে। অনেক সময়ে আবার তা সাধারণ বর্জ্যের সঙ্গেও মিশিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
এই সব সমস্যার সমাধানেই সুপারিশ করেছিল কমিটি। কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক, পরিবেশকর্মী নব দত্তের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাওয়া হলে তিনি বলেন, ‘‘পরিস্থিতি পর্যালোচনা করে কয়েকটি সুপারিশ করা হয়েছিল। কিন্তু সেই অনুযায়ী কী ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, সে সম্পর্কে কিছু জানানো হয়নি।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy