ভোগান্তি: এসএসকেএমের ক্লিনিকে হুইলচেয়ার-বন্দি রোগীকে সিঁড়ি দিয়ে ঠেলে তুলতে হচ্ছে পরিজনকেই। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
ঘড়িতে সকাল ১০টা। রোগীদের নিয়ে একে একে ক্লিনিকে ঢুকছেন তাদের পরিজনেরা। কিন্তু দেখা গেল, একতলার ক্লিনিকে পৌঁছতেই কেউ পাঁজাকোলা করে সন্তানকে নিয়ে ঢুকলেন, কেউ ঢুকলেন অতি কষ্টে রোগীকে হুইলচেয়ার সুদ্ধ টেনে তুলে। অভিযোগ, ভিতরে গিয়েও ওদের কম বিপত্তি পোহাতে হল না। হুইলচেয়ারে থাকা ওই রোগীদের ব্যবহারের উপযুক্ত শৌচাগার নেই। নেই কেউ আচমকা অসুস্থ হয়ে পড়লে বিশ্রামের জন্য শয্যাও।
এই রোগীরা সকলেই বিরল রোগের ‘গ্রুপ-থ্রি’ তালিকাভুক্ত। অর্থাৎ ওদের চিকিৎসা আছে, কিন্তু তা অত্যন্ত ব্যয়বহুল। সেই চিকিৎসার খরচ তুলতে এমন রোগীদের জন্য কেন্দ্রীয় সরকারের তৈরি ‘রেয়ার ডিজ়িজ় পলিসি’ মেনে তৈরি হয়েছে ‘ক্রাউড ফান্ডিং পোর্টাল’। যার মাধ্যমে সংগৃহীত টাকায় আক্রান্তদের চিকিৎসার খরচ বহন করার কথা কেন্দ্রীয় সরকারেরই। আর সেই পোর্টালে নাম তোলার জন্যই এই ক্লিনিক চালু হয়েছে এসএসকেএম হাসপাতালের মেন ব্লকের একতলায়।
‘ক্রাউড ফান্ডিং পোর্টাল’-এর নোডাল সেন্টার দিল্লির অল ইন্ডিয়া ইনস্টিটিউট অব মেডিক্যাল সায়েন্সেস। এ ছাড়াও সারা দেশে মোট আটটি উৎকর্ষ কেন্দ্র আছে। যার একটি এসএসকেএমের ইনস্টিটিউট অব পোস্ট গ্র্যাজুয়েট মেডিক্যাল এডুকেশন অ্যান্ড রিসার্চের এই ক্লিনিক। ক্রাউড ফান্ডিং পোর্টালে নাম নথিভুক্ত করার জন্য পূর্বাঞ্চলে এটিই একমাত্র কেন্দ্র। ফলে দূর-দূরান্ত থেকে বহু রোগী আসে এখানে। প্রতি সপ্তাহের বুধবার রোগী এবং তাদের পরিজনকে চিকিৎসার নথি-সহ হাজির হতে হয়। চলতি বছর থেকে শুরু হয়েছে এই ব্যবস্থা। কিন্তু অভিযোগ, এমন রোগীদের জন্য ন্যূনতম পরিকাঠামো না থাকায় ভোগান্তি পিছু ছাড়ে না তাদের পরিজনেদের।
বছর ১৫-র ছেলে অঙ্কিতকে নিয়ে সম্প্রতি হুগলি থেকে এই ক্লিনিকে এসেছিলেন তার মা-বাবা। ক্লিনিকে ঢোকার পথে বাবার কোলে চেপেই অঙ্কিত পেরোল চৌকাঠের বাধা। মগরা থেকে আসা এক দম্পতিকে দেখা গেল, ১৩ বছরের সন্তান-সহ হুইলচেয়ার টেনে তুলে ঢোকাতে রীতিমতো নাস্তানাবুদ হলেন। আর এক শিশুরোগীকে কোলে নিয়ে তার মা বলছেন, ‘‘ট্রেনে বিহার থেকে আসছি। এখানে যে শৌচাগারের সুবিধা নেই, সেটা শুনেছিলাম আগেই। তাই স্টেশনেই ছেলের ডায়াপার পাল্টে দিয়েছিলাম।’’
আর এক রোগীর বাবার অভিযোগ, ‘‘ওদের শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা এমনিতেই কম। অথচ এত বড় একটা হাসপাতালে চলা একটি ক্লিনিকে জীবাণুনাশের ন্যূনতম ব্যবস্থা নেই! স্যানিটাইজ়ার নেই, তা তো হতে পারে না। আসলে বিরল রোগে আক্রান্ত বলেই হয়তো কর্তৃপক্ষের কাছে ওদের গুরুত্ব নেই।’’
যাবতীয় অভিযোগ নিয়ে হাসপাতালের রেয়ার ডিজ়িজ কমিটির এক চিকিৎসক-সদস্যের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হয়েছিল। সব শুনে তিনি জানান, এই নিয়ে কোনও মন্তব্য করবেন না। এসএসকেএমের অধিকর্তা মণিময় বন্দ্যোপাধ্যায়ের সঙ্গে যোগাযোগ করার চেষ্টা হলে তিনি ফোন ধরেননি। মেসেজেরও উত্তর দেননি।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy