ওই আধিকারিকের কথায়, ‘‘জলের নীচে যে কী কী আছে, তা আমরাও জানি না। গঙ্গা নদী কোথায় কতটা গভীর, তারও স্পষ্ট হিসাব নেই। ফলে মৃতদেহ কোথায়, কী ভাবে আটকে থাকছে, বোঝা খুব মুশকিল।’’ ইসরাফেলের দেহও কি তা হলে নদীর তলদেশে কোথাও আটকে ছিল? এই প্রশ্নের উত্তর নেই কারও কাছেই।
প্রতীকী ছবি।
গঙ্গায় স্নান করতে নেমে তলিয়ে গিয়েছিল দুই ছাত্র। এক জনের দেহ উদ্ধার হয় ওই অঘটনের দু’দিন বাদে। অন্য জনের দেহ মিলল প্রায় এক সপ্তাহ পরে।
গত বুধবার উচ্চ মাধ্যমিক পরীক্ষা শেষে বন্ধুদের সঙ্গে বাবুঘাটে গিয়ে স্নান করতে নেমে গঙ্গায় তলিয়ে যায় বছর আঠারোর ইসরাফেল আলি ও শেখ বিলাল। দু’দিন পরে সাঁকরাইল থেকে উদ্ধার হয় বিলালের দেহ। তবে ইসরাফেলের দেহ অনেক খোঁজাখুঁজি করেও প্রথম ক’দিনে পাওয়া যায়নি। শেষে মঙ্গলবার রাতে তার দেহ
পাওয়া যায়।
ইসরাফেলের দেহ শেষমেশ পাওয়া গেলেও পুলিশ জানিয়েছে, অতীতের এমন বেশ কিছু ঘটনায় তলিয়ে যাওয়া ব্যক্তির দেহ আরও পাওয়াই যায়নি। যেমন, ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি নিমতলা ঘাটে বানের জলে একাধিক জন ভেসে গিয়েছিলেন। তাঁদের মধ্যে ছিলেন সল্টলেকের বাসিন্দা, মিতালি চৌধুরী নামে এক বৃদ্ধা। সেই ঘটনার পরে তিন বছরের বেশি সময় কেটে গেলেও তাঁর দেহের হদিস মেলেনি। উত্তর বন্দর থানার এক তদন্তকারী আধিকারিক বলেন, ‘‘সে দিন বানের পূর্বাভাস থাকায় গঙ্গার ধার বরাবর মাইকে ঘোষণা করে লোকজনকে সতর্ক করা হচ্ছিল। কিন্তু বানের জল প্রায় ২০ ফুট উঁচুতে উঠে যায়। সেই জলের তোড়েই একসঙ্গে ন’জন ভেসে গিয়েছিলেন। আট জনকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার পরে এক জনকে মৃত ঘোষণা করা হয়। তবে মিতালিদেবীর দেহের খোঁজ মেলেনি আজও।’’ তাঁর ছেলে সায়ন্তন চৌধুরী বলেন, ‘‘ওই সময়ে পুলিশের পাশাপাশি আমরাও নিজেদের উদ্যোগে নৌকা ভাড়া নিয়ে গঙ্গায় মাকে খুঁজেছিলাম। একাধিক জায়গায় অভিযোগও জানিয়েছিলাম। কিন্তু লাভ হয়নি।’’
২০২০ সালে মহালয়ার দিন বাগবাজার ঘাটে তর্পণ করতে নেমে নিখোঁজ হয়ে গিয়েছিলেন সিকন্দর সিংহ নামে এক ব্যক্তি। পুরোহিতের সামনে দাঁড়িয়ে জলে ডুব দেওয়ার পরে আর দেখা যায়নি তাঁকে। অনেকটা একই ভাবে তলিয়ে গিয়েছিলেন রাজীব রঞ্জন নামে এক আরপিএফ কর্মী। বছর চারেক আগের সেই ঘটনার পরেও ডুবুরি নামিয়ে তল্লাশি চালানো হয়েছিল। কিন্তু দেহ মেলেনি। উত্তর বন্দর থানার এক পুলিশকর্মী বলেন, ‘‘ওই ঘটনার বেশ কয়েক দিন পরে এক অজ্ঞাতপরিচয় ব্যক্তির দেহ উদ্ধার হয়েছিল। সেই সময়ে রাজীবের পরিবার ওই পচাগলা দেহ দেখেই সেটি তাঁর বলে দাবি করেছিল। কিন্তু পরে ডিএনএ পরীক্ষায় দেখা যায়, তিনি অন্য ব্যক্তি।’’ থানার এক আধিকারিকের কথায়, ‘‘এখনও অনেকে এসে তাঁদের পরিজনদের খোঁজ করেন। জানতে চান, কিছু পাওয়া গেল কি না।’’
গঙ্গায় তলিয়ে যাওয়ার পরে মৃতদেহ অনেক সময়ে মেলে না কেন? উত্তর বন্দর থানার এক আধিকারিক জানাচ্ছেন, সাধারণ ভাবে জলে ডোবার কয়েক ঘণ্টার মধ্যেই দেহ ভেসে ওঠে। স্রোতের টানে দূরে চলে গেলেও দেহ পাওয়া যায়। কিন্তু দেহটি যদি জলের নীচে কোনও কিছুতে আটকে যায়, তা হলে আর কিছু করার থাকে না। তিনি বলেন, ‘‘আসলে গঙ্গার নীচে এখনও
অনেক ভাঙা জেটি ও বোল্ডার রয়েছে। মৃতদেহ সে সবের নীচে আটকে গেলে তা আর পাওয়া যায় না।’’
ওই আধিকারিকের কথায়, ‘‘জলের নীচে যে কী কী আছে, তা আমরাও জানি না। গঙ্গা নদী কোথায় কতটা গভীর, তারও স্পষ্ট হিসাব নেই। ফলে মৃতদেহ কোথায়, কী ভাবে আটকে থাকছে, বোঝা খুব মুশকিল।’’ ইসরাফেলের দেহও কি তা হলে নদীর তলদেশে কোথাও আটকে ছিল? এই প্রশ্নের উত্তর নেই কারও কাছেই।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy