অপরিবর্তিত: আগের মতো ফের নগদে নেওয়া হচ্ছে পার্কিং ফি। শনিবার, ক্যামাক স্ট্রিটে। ছবি: সুমন বল্লভ।
বাড়তি খরচের বোঝা সাধারণ মানুষের উপরে চাপাতে চায় না রাজ্য সরকার। এই যুক্তিতে চালু হওয়ার এক সপ্তাহের মাথায় শুক্রবার প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে পুরসভার বর্ধিত পার্কিং-ফি। এর ফলে গাড়ি নিয়ে পথে বেরোনো মানুষ কিছুটা স্বস্তির শ্বাস ফেললেও তাঁদের মনেই ঘুরপাক খাচ্ছে অন্য এক প্রশ্ন। এর জেরে ফের শুরু হবে না তো পার্কিং-দুর্নীতি? চালু হয়ে যাবে না তো যেমন খুশি পার্কিং-ফি হাঁকারপুরনো রেওয়াজ?
শনিবার শহরের উত্তর থেকে দক্ষিণে ঘুরে দেখা গেল, আশঙ্কা অমূলক নয়। বহু জায়গাতেই শুরু হয়ে গিয়েছে, আগের মতো যেমন খুশি পার্কিং-ফি আদায়। প্রায় সর্বত্রই রাতারাতি সরিয়ে ফেলা হয়েছে পুরসভার দেওয়া ই-পস যন্ত্র। লেনদেন চলছে নগদে। গাড়ি বা মোটরবাইক রাখতে গেলেই বলে দেওয়া হচ্ছে, ‘‘আগের রেট মানে কিন্তু বাইকের ক্ষেত্রে ঘণ্টায় পাঁচ টাকা বা গাড়ির ক্ষেত্রে ঘণ্টায় ১০ টাকা নয়। আমরা যে হিসাবে গাড়ি রাখতে দিতাম, সেটাই দিতে হবে!’’ কী সেই হিসাব? অন্তত ১০ থেকে ২০ টাকা করে বেশি লাগবে। চালকেরা জানাচ্ছেন, বাধ্য হয়েই তাঁদের মেনে নিতে হচ্ছে নতুন এই ‘ব্যবস্থা’। অনেকেই ভাবছেন, পুরসভা যেটা চালু করেছিল, সেই দু’-তিন গুণ পার্কিং-ফি দেওয়ার চেয়েতো ভাল!
পয়লা এপ্রিল থেকে বর্ধিত হারে পার্কিং-ফি আদায় শুরু করেছিল পুরসভা। আগে চার চাকার জন্য যেখানে ঘণ্টায় ১০ টাকা করে নেওয়া হত, সেটাই নতুন কাঠামোয় প্রথম এক ঘণ্টা পর্যন্ত করা হয় ২০ টাকা। দুই, তিন, চার ও পাঁচ ঘণ্টা পর্যন্ত গাড়ি রাখার ক্ষেত্রে তা হয়যথাক্রমে ৪০, ৮০, ১২০ ও ১৬০ টাকা। পাঁচ ঘণ্টার পর থেকে প্রতি ঘণ্টায় ১০০ টাকা করে নেওয়া শুরু হয়। বাইকের ক্ষেত্রে আগে ছিল ঘণ্টায় পাঁচ টাকা করে। নতুন হারে ঘণ্টায় ১০ টাকা করে নেওয়া শুরু হয়। দ্বিতীয়, তৃতীয়, চতুর্থ ও পঞ্চম ঘণ্টা পর্যন্ত নেওয়া হচ্ছিল যথাক্রমে ২০, ৪০, ৬০ ও ৮০ টাকা। এর পরে প্রতি ঘণ্টায় ৫০ টাকা করে নেওয়া শুরু হয়। বাস, লরি-সহ ভারী ও পণ্যবাহী যানবাহনের ক্ষেত্রেও পার্কিং-ফি বৃদ্ধি করা হয়। সেই সঙ্গেই পুরসভা জানিয়ে দেয়, পার্কিংয়ের দরপত্র পেয়েছে যে সংস্থা, তাদের ই-পস যন্ত্র দেওয়া হচ্ছে। যত ক্ষণ গাড়ি রাখা হবে, সেই সময়টা বসালেই ওই যন্ত্র থেকে কিউআর কোড-সহ একটি কাগজ বেরিয়ে আসবে। গাড়ির মালিক বা চালক কোড স্ক্যান করেই টাকা মিটিয়ে দিতে পারবেন। শহরের কোথাও নগদে টাকা নেওয়া যাবে না। নগদে টাকা নিলে সংশ্লিষ্ট সংস্থার বিরুদ্ধে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে। যে হেতু সমস্তটাই অনলাইনে হবে, তাই দুর্নীতি রোখা যাবে।
এ দিন ক্যামাক স্ট্রিটে দেখা গেল, ই-পস যন্ত্র কোথাও ব্যবহার করা হচ্ছে না। সেখানকার একটি শপিংমলের সামনে পার্কিংয়ে গাড়ি রাখতে আসা এক ব্যক্তিকে বলা হল, ‘‘ঘণ্টায় কিন্তু ৩০ টাকা!’’ ওই ব্যক্তি বললেন, ‘‘নতুন হিসাব তো বাতিল হয়ে গিয়েছে। আগের মতো ঘণ্টায় ১০ টাকা দিলেই তো হবে!’’ পার্কিং-ফি আদায়কারী যুবকের উত্তর,‘‘ও সব খাতায়-কলমে ছিল। বহু দিন ঘণ্টায় ১০ টাকা নেওয়ার চল উঠে গিয়েছে। ৩০ দিলে আসুন, নয়তো আগে দেখুন।’’ গড়িয়াহাটের কাছে একই ভাবে দেখা গেল, চার চাকার জন্য ঘণ্টায় ৫০ টাকা হাঁকা হচ্ছে। এত বেশি কেন? পার্কিং-ফি আদায়কারী বললেন, ‘‘এখানে ২০টা গাড়ি রাখা যাবে ধরে নিয়ে গাড়ি-পিছু দিনে ২০০ টাকা করে আদায়ের টার্গেট দেওয়া হয়েছে। কিন্তু রোজ তো একই রকম সংখ্যায় গাড়ি আসে না। বেশি না নিলে আমাদের সংসারচলবে কী করে? যাঁদের খুশি করে এখানে দু’লাইনে গাড়ি রাখি, তাঁদেরই বা দেব কী?’’
এই দুর্নীতি রোখা যাবে কী করে? ই-পস যন্ত্রগুলিরই বা ভবিষ্যৎ কী? মেয়র ফিরহাদ হাকিমকে ফোন করা হলেও তিনি ধরেননি। উত্তর দেননি টেক্সট মেসেজের। পার্কিং বিষয়ের দায়িত্বপ্রাপ্ত তথা কলকাতা পুরসভার মেয়র পারিষদ দেবাশিস কুমার যদিও বললেন, ‘‘যন্ত্রগুলো আপডেট করা হচ্ছে। পুরনো কাঠামোতেই যাতে যন্ত্রে টাকা নেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়, সেটা দেখা হবে। সাধারণ মানুষকে স্বস্তি দিতে দুর্নীতিও আটকাতে হবে।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy