E-Paper

ক্যামেরা মোড়া শহরে ফের খোঁজ পুলিশ-শিল্পীর 

পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, নীতিনের আঁকা ছবি ৭৩টি অপরাধের কিনারা করেছে। ২০০১-এর খাদিম-কর্তা অপহরণ বা ২০০২-এর আমেরিকান তথ্যকেন্দ্রে জঙ্গি হামলার মতো বড় ঘটনা তো আছেই।

An image of Lalbazar

লালবাজার। —ফাইল চিত্র।

নিজস্ব সংবাদদাতা

শেষ আপডেট: ১৪ অক্টোবর ২০২৩ ০৮:১৫
Share
Save

খুনটি কে করেছে, বলার লোক ছিল একমাত্র সন্দেহভাজন ব্যক্তি নিজেই। এ ছাড়া, খুনির চেহারা দেখেছিলেন খুন হওয়া ব্যক্তি। ফলে বার বার জিজ্ঞাসাবাদেও সমাধানসূত্র বার করতে পারছিলেন না বাঘা বাঘা তদন্তকারীরা। নিজের বয়ানে খানিকটা সত্যি, খানিকটা কল্পনা মিশিয়ে বলছিলেন ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী তথা সন্দেহভাজন ব্যক্তি। শেষে সম্ভাব্য খুনির চেহারা আঁকানোর জন্য ডাক পড়ে শিল্পীর। সেই সূত্রেই কাটে রহস্য।

কয়েক বছর আগে গড়িয়াহাটের এই খুনের মামলাটির কথা উল্লেখ করে তৎকালীন তদন্তকারী অফিসার বললেন, ‘‘এক-এক বার এক-এক রকম চেহারা বলছে শুনেই সন্দেহ দৃঢ় হয়। শিল্পী বুদ্ধি করে তিন রকমের ছবি আঁকেন। এক জনকে খুনি বলে চিহ্নিত করে সন্দেহভাজন ব্যক্তি। কিন্তু ছবির সেই ব্যক্তি শিল্পীর মস্তিষ্কপ্রসূত। জেরার সময়ে সে কথা জানাতেই ভেঙে পড়ে সন্দেহভাজন।’’

দিন দুয়েক আগেই শহরে হওয়া একটি খুনে অপরাধীর নাগাল পেতে চাইছেন তদন্তকারীরা। বড়তলা থানা এলাকার রায়বাগান স্ট্রিটে বাড়ির ভিতরে এক প্রৌঢ়াকে কুপিয়ে খুন করা হয়। মীনাক্ষী ভট্টাচার্য (৫৫) নামে ওই প্রৌঢ়ার খুনের ঘটনায় এখনও অধরা অভিযুক্ত। ঘটনার একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী, মীনাক্ষীর ১৫ বছরের ছেলে আপাতত কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। সেই ঘটনার কিনারা করতে ফের শিল্পীদের সাহায্য নেওয়ার কথা ভাবছে পুলিশ।

পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, গত কয়েক বছরে একাধিক কঠিন মামলার কিনারা করে দিয়েছেন ‘পুলিশ-শিল্পীরা’। কখনও তাঁদের ‘পোর্ট্রেট পার্লে’-এর (বর্ণনা শুনে অপরাধীর ছবি আঁকার পদ্ধতি) জাদুতে ধরা পড়েছে দীর্ঘদিন পরিচয় লুকিয়ে বেড়ানো ডাকাতদলের সর্দার, কুখ্যাত দুষ্কৃতী, আবার জঙ্গিও। পুলিশের কর্তারা জানাচ্ছেন, মুখাবয়ব (পোর্ট্রেট) ভাল আঁকেন যাঁরা, এক সময়ে তাঁদের থানা বা লালবাজারে ডেকে কার্যোদ্ধার করা হত। পারিশ্রমিকের ভিত্তিতে কাজ করতেন তাঁরা। এখন এমন শিল্পীর অভাব দেখা যাচ্ছে। গোপনীয়তা রক্ষাও এ ক্ষেত্রে বড় বিষয়। গত শতকের আশির দশকে উত্থান হয় পুলিশ-শিল্পী নীতিন বিশ্বাসের। তাঁর পেন্সিলেই বিস্তার পায় পোর্ট্রেট পার্লে। চিত্রশিল্পের এক বিশেষ আঙ্গিক এই পোর্ট্রেট পার্লে। ১৯৬০ সালে মার্কিন শিল্পী হিউজ ম্যাকডোনাল্ড যার উদ্ভাবক। তাঁর সম্পর্কে বলা হয়, স্বপ্নে দেখা মানুষের ছবি আঁকতেন তিনি। এ দেশে সেই ধারার ছবি আঁকতে শুরু করেন নীতিন।

পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন, নীতিনের আঁকা ছবি ৭৩টি অপরাধের কিনারা করেছে। ১৯৯৫-এর পুরুলিয়া অস্ত্র বর্ষণ মামলা, ২০০১-এর খাদিম-কর্তা অপহরণ বা ২০০২-এর আমেরিকান তথ্যকেন্দ্রে জঙ্গি হামলার মতো বড় ঘটনা তো আছেই। নীতিনের ছবি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা নেয় ১৯৮২ সালে দিল্লিতে নিরঙ্কারী বাবা হত্যাকাণ্ডেও। ওই বছরই সেই সাফল্যে পালক জোড়ে দিল্লিতে কুয়েতের রাষ্ট্রদূত হত্যা। কলকাতা পুলিশের সার্জেন্ট বাপি সেনকে হত্যার রহস্য সমাধানেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল তাঁর। একই ভাবে ছবি এঁকে কাজ করেছেন বেলুড়ের দেবাশিস বন্দ্যোপাধ্যায়ও।

এখন সেই পরিস্থিতি অনেকটাই বদলেছে। সিসি ক্যামেরায় মোড়া শহরে অপরাধ করে পালানোই মুশকিল। ছবি থেকেই যায়। তবুও যদি খুব প্রয়োজন পড়ে, এখনও ডাক পড়ে ওই শিল্পীদের।

লালবাজার সূত্রে জানা যাচ্ছে, এই মুহূর্তে কলকাতা পুলিশে এমন পুলিশ-শিল্পী রয়েছেন দু’জন। কনস্টেবল এবং হোমগার্ড পদে চাকরি করেন তাঁরা। আঁকার হাত থাকায় পুলিশের তরফেই তাঁদের সব দিক শিখিয়ে নেওয়া হয়েছে বলে পুলিশকর্তারা জানাচ্ছেন। রাজ্যের কোনও প্রান্তে প্রয়োজন পড়লেও কলকাতা পুলিশকে ‘রিকুইজ়িশন’ দিয়ে এই পুলিশ-শিল্পীদের নিয়ে যাওয়া হয়।

কলকাতা পুলিশের এমনই এক শিল্পী বললেন, ‘‘বর্ণনা শুনতে হয় গভীর মনোযোগ সহকারে। জানতে হয় মুখের কাঠামো, ভ্রূ, চোখ, নাক, ঠোঁটের গঠন। তার পরে মনের মধ্যে ছবি আসতে থাকে। স্কেচ শুরু করি। ছবি যত এগোয়, একটু একটু করে জেগে ওঠে প্রত্যক্ষদর্শীর মনের আয়না। তাঁরা নানা পরিবর্তন করতে বলেন। তাঁদের কথা মতো অদলবদল করতে করতেই রূপ পায় ছবি। কান আর মনই সব চেয়ে গুরুত্বপূর্ণ।’’

কিন্তু ঘটনার শিকার বা প্রত্যক্ষদর্শীরা সাধারণত খুব অল্প সময়ের জন্য অপরাধীকে দেখেন। তাঁরা কি ঠিকঠাক মনে রাখতে পারেন? শিল্পী বলেন, ‘‘ওই মুহূর্তের দেখা অন্য সাধারণ দেখার চেয়ে অনেক আলাদা। যাঁর সঙ্গে ঘটনা ঘটে, দৃশ্যটা তাঁর মনের গভীরে বসে যায়।’’

এই মনস্তত্ত্বকে কাজে লাগিয়েই রায়বাগান স্ট্রিটের খুনের ঘটনায় কিনারা করতে চাইছে লালবাজার। পুলিশের অনুমান, ঘটনায় পরিচিত কেউ জড়িত। প্রৌঢ়ার দেহে কোপানোর যে পাঁচ-ছ’টি আঘাতের চিহ্ন রয়েছে, তা প্রবল আক্রোশের ইঙ্গিত দিচ্ছে। এ ছাড়া, আততায়ী বিনা বাধায় ঢুকেছিল। এই দু’টি দিক দেখেই পরিচিত কারও জড়িয়ে থাকার অনুমান করছেন তদন্তকারীরা। একমাত্র প্রত্যক্ষদর্শী ওই কিশোরকে ঠিক ভাবে জিজ্ঞাসাবাদ করা গেলে উত্তর মিলবে বলে তাঁদের ধারণা। তবে কিশোরের প্রাথমিক বয়ানে একাধিক অসঙ্গতি মিলেছে বলে দাবি পুলিশের। এক তদন্তকারী জানান, খুনের কারণ স্পষ্ট নয়। মৃতার পরিজন ও প্রতিবেশী মিলিয়ে ১৪ জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। এ বার পুলিশ-শিল্পী দিয়ে আততায়ীর ছবি আঁকানোর পালা।

(এই প্রতিবেদনটি আনন্দবাজার পত্রিকার মুদ্রিত সংস্করণ থেকে নেওয়া হয়েছে)

Sketch Artist Lalbazar police criminals

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

ক্যানসেল করতে পারবেন আপনার সুবিধামতো

Best Value
প্রতি বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
প্রতি মাসে

৪২৯

১৬৯

প্ল্যানটি সিলেক্ট করে 'Subscribe Now' ক্লিক করুন।শর্তাবলী প্রযোজ্য।