সতর্ক: (বাঁ দিকে) মানিতকলার একটি জিমে দু’টি ট্রেডমিলের মাঝে বসেছে স্বচ্ছ প্লাস্টিকের দেওয়াল। (ডান দিকে) বাগুইআটির একটি জিমে মাস্ক পরেই চলছে শারীরচর্চা। ছবি: স্বাতী চক্রবর্তী
করোনার কারণে জিমের রক্ষণাবেক্ষণের খরচ বেড়ে গিয়েছে অনেকটাই। অথচ জিমে আসা লোকের সংখ্যা কমে গিয়েছে উল্লেখযোগ্য ভাবে। ফলে ব্যয় বাড়লেও আয় কমেছে। তাই করোনা পরিস্থিতিতে কয়েক মাস বন্ধ থাকার পরে জিম খোলার সরকারি অনুমতি পেলেও তাদের অবস্থা যে-কে-সেই বলেই জানাচ্ছেন শহরের একাধিক জিম কর্তৃপক্ষ।
করোনা-কালে সংক্রমণ রুখতে জিমগুলিতে প্রবেশ ঘটেছে মাস্ক-স্যানিটাইজ়ার-থার্মাল গানের। অধিকাংশ জিমের প্রবেশপথের সামনে রাখা থাকছে স্যানিটাইজ়ার মেশিন। থার্মাল গান দিয়ে শরীরের তাপমাত্রা পরীক্ষা করে তবেই মিলছে জিমে ঢোকার অনুমতি। এমনকি কয়েক ঘণ্টা অন্তর যন্ত্রপাতি এবং লকার জীবাণুমুক্ত করা হচ্ছে বলেও দাবি জিম কর্তৃপক্ষদের। তবে তাঁদের অনেকেই জানাচ্ছেন, এত কিছুর পরেও সে ভাবে লোক টানতে পারছেন না। অনেকেই এখনও জিমে আসবেন কি না, তা নিয়ে দ্বিধাগ্রস্ত। ফলে অন্য সময়ের তুলনায় এখন মাত্র ১০-১৫ শতাংশ সদস্য জিমে আসছেন। তাই খোলার অনুমতি পেলেও তাতে খুব একটা লাভ হচ্ছে না বলেই জানাচ্ছেন শহরের একাধিক জিম কর্তৃপক্ষ।
সম্প্রতি মানিকতলার একটি জিমে গিয়ে দেখা গেল, প্রতিটি ট্রেডমিলের মাঝখানে বসানো হয়েছে স্বচ্ছ প্লাস্টিকের দেওয়াল। ফলে পাশাপাশি দু’টি ট্রেডমিলে দু’জন দৌড়লেও দূরত্ব-বিধি বজায় থাকছে। ওই জিমের অন্যতম কর্ণধার নবীন সাহুর দাবি, “দু’তিন ঘণ্টা অন্তর ফগিং মেশিন দিয়ে স্যানিটাইজ়ও করা হচ্ছে। জিমের ভিতরে যেন হাওয়া বাতাস খেলে, সেই ব্যবস্থাও করা হয়েছে। কিন্তু সব ধরনের সতর্কতা নিয়েও সদস্যদের আতঙ্ক দূর করতে পারছি না। মোট সদস্যের মাত্র ১০ শতাংশ এখন জিমে আসছেন।” যাদবপুর এলাকার একটি জিমের কর্ণধার দেব সেনগুপ্তও বলছেন, “ডিপ ক্লিনিং, পাল্স অক্সিমিটার সবই আছে। এসি বন্ধ করে মাঝেমধ্যে জানলা-দরজা খুলে দেওয়াও হচ্ছে। তবু আতঙ্ক কাটছে না।”
শহরের বেশ কিছু জিমে গিয়ে দেখা গেল, সেগুলি কার্যত ফাঁকা। তবে যাঁরা সেখানে আসছেন, তাঁদের অধিকাংশেরই মুখে মাস্ক নেই। কারও মাস্ক আবার থুতনিতে নামানো। করোনার মধ্যে প্রায় চার মাস বন্ধ থাকার পরে কেন্দ্রের নির্দেশিকা অনুযায়ী গত ৫ অগস্ট থেকে খুলেছে জিম এবং যোগকেন্দ্রগুলি। সেই নির্দেশিকায় স্পষ্ট বলা ছিল, জিম করার সময় ফেস শিল্ড বা মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক। কেন সেই নিয়ম মানা হচ্ছে না? কাঁকুড়গাছির একটি জিমের আধিকারিক বিজন সর্দার বলেন, “মাল্টিজিমে কিছু কিছু ব্যায়াম মাস্ক বা ফেস শিল্ড পড়ে করা খুব কঠিন। বিশেষত মাস্ক বা ফেস শিল্ড পড়ে ট্রেড মিলে দৌড়তে পারেন না অনেকেই।”
শহরের আর এক জিমের কর্ণধার সায়ন সেনগুপ্তের কথায়, “একটু একটু করে মানুষের আতঙ্ক কাটছে ঠিকই। কিন্তু এখনও বহু সদস্য এখানে এসে তাদের সদস্যপদ নবীকরণ করেননি।”
ঝাঁ চকচকে জিম নয়, মানিকতলার চালতাবাগান এলাকায় স্বল্প পুঁজি দিয়ে বাড়ির দোতলায় জিম চালান আশিস দাস। তিনি বলেন, “মার্চের গোড়ায় কয়েক লক্ষ টাকা দিয়ে কয়েকটা নতুন মেশিন কিনেছিলাম। তার পরেই করোনা শুরু হয়ে গেল। জিমও বন্ধ হয়ে গেল। এখন জিম খুলেছে, হাতে গোনা কয়েক জন আসছেন। এ ভাবে চললে সংসার কী ভাবে চলবে জানি না।”
তবে এই পরিস্থিতিতে জিমে যেতে আতঙ্ক যে এখনও রয়েছে, তা স্বীকার করে নিচ্ছেন সুজাতা বন্দ্যোপাধ্যায় নামে এক বধূ। তিনি বলেন, “করোনা তো এখনও রয়েছে। তাই বাড়ির লোকেরা জিমে যেতে বারণ করছেন। আরও কয়েক দিন দেখে নিয়ে তার পরে যাব।” গড়িয়াহাটের বাসিন্দা অভীক মজুমদার বলেন, “জিমে আমার ন’মাসের সদস্য পদ ছিল। শেষ হয়ে গিয়েছে অগস্টে। অথচ শেষ তিন মাস জিম করতে পারিনি। কিন্তু জিম কর্তৃপক্ষ জানিয়েছেন, ফের সদস্যপদ তৈরি করতে হবে। তার পরে যে তিন মাস জিম করতে পারিনি, তার দেড় মাসের জিম করার সুবিধা পাওয়া যাবে। কিন্তু ফের যদি জিম বন্ধ হয়ে যায়, তখন তো টাকা নষ্ট হবে। তাই আরও কিছু দিন দেখে নিয়ে তবেই জিমে যাব।”
তবে ইতিমধ্যেই নিয়মিত জিমে যাচ্ছেন, এমনই রয়েছেন অনেকে। কলেজছাত্রী হর্ষিতা জয়সওয়াল যেমন বলছেন, “সব সময়ে সঙ্গে স্যানিটাইজ়ার রাখি। জিমে যখন যে মেশিনে বসি, তার আগে-পরে হাত দেওয়ার জায়গা স্যানিটাইজ় করি। মাস্ক পরে থাকার চেষ্টা করি। আমার জিমে স্বাস্থ্য-বিধি ভাল ভাবে মেনে চলা হয়। তা হলে অহেতুক ভয় পাব কেন?’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy