Advertisement
E-Paper

জলের ‘রং’ লাল, সবুজ বা গেরুয়া, তাই জলকরে ‘না’?

সে যতই কলকাতা পুরসভাকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক পানীয় জলের ক্ষেত্রে ‘ভলিউমেট্রিক ট্যারিফ’-এর কথা বলুক না কেন!

ফাইল চিত্র।

ফাইল চিত্র।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ০৫ ফেব্রুয়ারি ২০২১ ০৫:১২
Share
Save

জলের কোনও রং নেই।— এই আপ্তবাক্যের রাজনৈতিক পরিসরে অন্তত কোনও গ্রহণযোগ্যতা নেই। এমনটাই মনে করছেন পরিবেশবিদেরা। তাঁদের মতে, সময়ের পরিবর্তনেই কখনও জলের রং লাল, কখনও সবুজ আবার কখনও গেরুয়াও হতে পারে।

সে যতই কলকাতা পুরসভাকে ঋণ দেওয়ার ক্ষেত্রে এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক পানীয় জলের ক্ষেত্রে ‘ভলিউমেট্রিক ট্যারিফ’-এর কথা বলুক না কেন! বা কোভিড সংক্রমণের সময়ে বাড়তি ঋণ দিতে গিয়ে কেন্দ্র বা পঞ্চদশ অর্থ কমিশনও রাজ্যের কোষাগারের হাল ফেরাতে জল সরবরাহের জন্য ফি আদায়ের সুপারিশ করুক না কেন। সব পথই শেষ পর্যন্ত ওই ভোট-রাজনীতিতে গিয়ে মিশে যায় বলে জানাচ্ছেন পরিবেশবিদেরা।

তাঁদের বক্তব্য, সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরাই মানুষের জন্য কাজ করার কথা বলেন। ইদানীং নির্বাচনের প্রাক্কালে দলবদলের হাওয়ায় যে কথা আরও বেশি করে শোনা যাচ্ছে। কিন্তু মানুষের জন্য কাজ মানে তো ভবিষ্যৎ প্রজন্মকেও সুরক্ষিত পরিবেশ দেওয়া। তাদের জন্য সুস্থায়ী উন্নয়নের (সাসটেনেবল ডেভেলপমেন্ট) ক্ষেত্র প্রস্তুত করা।

এক পরিবেশবিদের কথায়, ‘‘ক্ষমতাসীন সরকার, সে যে দলেরই হোক না কেন, ভুলে যায় যে পানীয় জলের পরিমাণ অপরিসীম নয়। অথচ শুধুমাত্র রাজনৈতিক স্বার্থ চরিতার্থ করতেই মহামূল্যবান এই প্রাকৃতিক সম্পদ ধ্বংস করা হচ্ছে।’’ পরিবেশবিজ্ঞানী তপন সাহার আবার বক্তব্য, ‘‘প্রতিদিন মাথাপিছু জলের নির্দিষ্ট পরিমাণ ধার্য করে দেওয়া হোক। সেই নির্ধারিত মাত্রার বেশি খরচ হলে জরিমানা করা হোক।’’

অতীত বলছে, কলকাতার মেয়র থাকাকালীন (২০০০-’০৫ সাল) সুব্রত মুখোপাধ্যায় জলকর বসানোর চেষ্টা
করলেও দলের আপত্তিতে তা বাস্তবায়িত হয়নি। প্রাক্তন মেয়র তথা বর্তমান পঞ্চায়েতমন্ত্রী সুব্রতবাবু বলছেন, ‘‘দরিদ্র নাগরিককে জলকরের বাইরে রাখা হোক। কিন্তু আর্থিক সঙ্গতিপূর্ণ পরিবারের থেকে জলকর নেওয়া যেতেই পারে।’’ বাম আমলে (২০০৫-’১০ সাল) মেয়র থাকাকালীন বিকাশরঞ্জন
ভট্টাচার্যও উদ্যোগী হয়েছিলেন জলকর বসাতে। কিন্তু অন্য শরিকদের আপত্তিতে সে বারেও তা ভেস্তে যায়। বিকাশবাবুর কথায়, ‘‘জল অপচয় বন্ধের জন্য কর বসানোর প্রয়োজন রয়েছে।’’

এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্ক সূত্রের খবর, বর্তমানে শহরে ‘নন রেভিনিউ ওয়াটার’ বা অপচয় হওয়া জলের পরিমাণ সরবরাহ করা জলের অর্ধেক অর্থাৎ ৫০ শতাংশ। চলতি বছরে তা কমিয়ে ২৫ শতাংশ করার পরিকল্পনা করা হয়েছে। এবং সেই সঙ্গে ‘ভলিউমেট্রিক’ ও ‘নন-ভলিউমেট্রিক’ জলের মাসুলের (ওয়াটার ট্যারিফ) কথাও বলা হয়েছে। যাতে অপরিশোধিত জল প্রক্রিয়াকরণের পরে পানযোগ্য করে বাড়ি বাড়ি সরবরাহের প্রয়োজনীয় খরচ উঠে আসে। কারণ, এই খরচের পুরোটাই পুরসভার ভাঁড়ার ও রাজ্য সরকারের আর্থিক সহায়তার উপরে নির্ভরশীল।

যদিও রাজ্যের জনস্বাস্থ্য কারিগরিমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্রের বক্তব্য, ‘‘আমরা জলকর বসানোর পক্ষে নই। কোষাগারের হাল ফেরাতে বিকল্প পথ ভাবা যেতে পারে।’’ এক পুরকর্তা বলছেন, ‘‘বাণিজ্যিক ক্ষেত্র বা বহুতলে বাল্ক মিটার বসিয়ে তো টাকা আদায় করাই হয়।’’

যার পরিপ্রেক্ষিতে এক পরিবেশবিদের মত, ‘‘বিপিএল তালিকাভুক্তদের বাদ দিয়ে শুধু বহুতল নয়, ব্যক্তিগত বাড়ি থেকেও জলকর আদায় করা যায়। কিন্তু সেটা করতে গেলে জলের সঙ্গে ভোটও বেরিয়ে যেতে পারে। তাই সেই আশঙ্কাতেই তেমনটা করা হয় না!’’

সে কারণেই হয়তো এশীয় উন্নয়ন ব্যাঙ্কের ‘প্রজেক্ট অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ম্যানুয়াল’-এও স্পষ্ট ভাবে উল্লেখ থাকে— ‘হাউসহোল্ড স্তরে সরবরাহ করা পরিমাণের নিরিখে জলের উপরে কর বসানোর ক্ষেত্রে রাজনৈতিক সদিচ্ছার অভাব রয়েছে (ল্যাক অব পলিটিক্যাল উইল ইন ইন্ট্রোডিউসিং ভলিউমেট্রিক ট্যারিফস অ্যাট হাউসহোল্ড লেভেল)’।

আর এই রাজনৈতিক সদিচ্ছার ‘অভাব’-ই অদূর ভবিষ্যতে পানীয় জলের অভাব তৈরি করবে বলে আশঙ্কা পরিবেশবিদদের!

Drinking water Water Tax Environmentalist

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।