Advertisement
E-Paper

বেআইনি বরাতের সব জেনেও ‘চুপ’ রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ?

কমন বায়োমেডিক্যাল ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট ফেসিলিটি’-কে (সিবিডব্লিউটিএফ) ছাড়পত্র দেওয়ার নিয়ন্ত্রক সংস্থা হল সংশ্লিষ্ট রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ।

প্রশ্ন: রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সেলের চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে পাঠানো সিবিডব্লিউটিএফ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার চিঠির প্রতিলিপি (বাঁ দিকে)। স্বাস্থ্য দফতরের ‘সোয়াপিং অ্যারেঞ্জমেন্ট অর্ডার’ পাঠানো হয়েছিল পর্ষদের সদস্য-সচিবের কাছেও (ডান দিকে)।

প্রশ্ন: রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের বর্জ্য ব্যবস্থাপনা সেলের চিফ ইঞ্জিনিয়ারকে পাঠানো সিবিডব্লিউটিএফ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়ার চিঠির প্রতিলিপি (বাঁ দিকে)। স্বাস্থ্য দফতরের ‘সোয়াপিং অ্যারেঞ্জমেন্ট অর্ডার’ পাঠানো হয়েছিল পর্ষদের সদস্য-সচিবের কাছেও (ডান দিকে)।

দেবাশিস ঘড়াই

শেষ আপডেট: ২০ ডিসেম্বর ২০২০ ০৩:৩৯
Share
Save

বেআইনি ভাবে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্য-এর দায়িত্বের বরাত দেওয়ার দুর্নীতির শাখাপ্রশাখা যে স্বাস্থ্য দফতরের বাইরে প্রশাসনের অন্য স্তরেও বিস্তৃত রয়েছে, তার ইঙ্গিত পাওয়া গিয়েছিল আগেই। এ বার সেই সূত্রে জড়িয়ে পড়ল রাজ্য দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ-এর নামও। এত দিন পর্ষদের বিরুদ্ধে শব্দদূষণ, বায়ুদূষণ রোধ-সহ একাধিক বিষয়ে ব্যর্থতার অভিযোগ ছিল। কিন্তু এ বার বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের ক্ষেত্রে পর্ষদের ভূমিকা তাদেরও বেআইনি কাজের সমান ‘অংশীদার’ করে তুলেছে বলে মনে করছেন প্রশাসনিক কর্তাদের একাংশ থেকে শুরু করে পরিবেশবিদেরাও।

কারণ, ‘কমন বায়োমেডিক্যাল ওয়েস্ট ট্রিটমেন্ট ফেসিলিটি’-কে (সিবিডব্লিউটিএফ) ছাড়পত্র দেওয়ার নিয়ন্ত্রক সংস্থা হল সংশ্লিষ্ট রাজ্যের দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদ। সেখানে গত বছরের ফেব্রুয়ারিতে দরপত্র ডেকে স্বাস্থ্য দফতর বেআইনি ভাবে যে ‘কনসোর্শিয়াম অব স্পেকট্রাম ওয়েস্ট সলিউশন প্রাইভেট লিমিটেড অ্যান্ড এসএনজি মার্কেন্টাইল প্রাইভেট লিমিটেড’-কে রাজ্যের ন’টি জ়োনে বায়োমেডিক্যাল বর্জ্যের দায়িত্ব দিয়েছিল, তা জানার পরেও পর্ষদ কেন চুপ করে থাকল তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পরিবেশকর্মীদের সংগঠন ‘সবুজ মঞ্চ’-এর সম্পাদক নব দত্ত জানাচ্ছেন, পরিবেশের স্বার্থহানি হচ্ছে এমন বিষয়ে উত্তর দিতে যে পর্ষদ কর্তারা বাধ্য, সেটাই তাঁদের আচরণে মনে হয় না। তাঁর কথায়, ‘‘নিয়ম লঙ্ঘনের বিষয় জেনেও কোনও পদক্ষেপ না করলে শুধুমাত্র পদ অলঙ্কৃত করে বসে থাকার অর্থ কী! সাধারণ মানুষ তো পর্ষদের অস্তিত্বই টের পান না!’’

অথচ জাল নথি ব্যবহার করে স্পেকট্রাম সংস্থার দরপত্রে অংশগ্রহণের বিষয়টি স্বাস্থ্য দফতরের পাশাপাশি দূষণ নিয়ন্ত্রণ পর্ষদের ‘ওয়েস্ট ম্যানেজমেন্ট সেল’-এর চিফ ইঞ্জিনিয়ারকেও জানিয়েছিল ‘সিবিডব্লিউটিএফ অ্যাসোসিয়েশন অব ইন্ডিয়া’। রাজ্যের প্রাক্তন মুখ্যসচিব রাজীব সিংহও বলেছিলেন, ‘‘টেন্ডার ডাকার সময়ে টেন্ডার কমিটিতে অন্য দফতরের প্রতিনিধিদের সঙ্গে পর্ষদের চিফ ইঞ্জিনিয়ারও ছিলেন।’’ সংশ্লিষ্ট চিফ ইঞ্জিনিয়ার তাপসকুমার গুপ্ত অবসর নেওয়ার পরে বর্তমানে পর্ষদের ‘টেক‌নিক্যাল অ্যাডভাইজ়ার’ হিসেবে কাজ করছেন। তাঁর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি এর কোনও উত্তর দেননি। যেমন উত্তর দেননি পর্ষদ-সচিব রাজেশ কুমারও। অথচ সরকারি নথি বলছে, গত বছরের নভেম্বরে স্বীকৃত সিবিডব্লিউটিএফ ‘মেডিকেয়ার এনভায়রনমেন্টাল ম্যানেজমেন্ট প্রাইভেট লিমিটেড’ ও অভিযুক্ত ‘কনসোর্শিয়াম’-এর আবেদনের ভিত্তিতে পারস্পরিক এলাকা পরিবর্তনের জন্য স্বাস্থ্য দফতরের বার করা ‘সোয়াপিং অ্যারেঞ্জমেন্ট অর্ডার’ পর্ষদ-সচিবের কাছেও পাঠানো হয়েছিল। সংশ্লিষ্ট নির্দেশিকায় লেখা ছিল— ‘কপি ফরওয়ার্ডেড ফর ইনফরমেশন অ্যান্ড নেসেসারি অ্যাকশন’। এক পরিবেশবিদের কথায়, ‘‘এমনটা হতে পারে পর্ষদ জানত না। কিন্তু যখন রাজ্যের ছ’টি স্বীকৃত সিবিডব্লিউটিএফের পরিবর্তে নতুন কোনও সংস্থার নাম উঠে এল, তখন সেটা পর্ষদের অবশ্যই খতিয়ে দেখা দরকার ছিল।’’ এ বিষয়ে জানতে পর্ষদের চেয়ারম্যান কল্যাণ রুদ্রকে ফোন করা হলে প্রথমে তিনি বলেছিলেন, ‘‘পর্ষদের চেয়ারম্যানকে এরকম ভাবে ফোন করে তাৎক্ষণিক কিছু জানতে চাইলে তো মুশকিল। কারণ, হাজার হাজার ফাইল রয়েছে।’’ কিন্তু জানার পরেও পর্ষদ কেন নিষ্ক্রিয় ছিল, তা জানতে পরে ফোন করা হলে কল্যাণবাবু ফোন ধরেননি। উত্তর দেননি মেসেজেরও। যার পরিপ্রেক্ষিতে পরিবেশকর্মী সুভাষ দত্ত বলছেন, ‘‘পর্ষদের চেয়ারম্যান হিসেবে উত্তর দিতে তিনি দায়বদ্ধ। কারণ তাঁর কাছে অন্য বিষয় নয়, পরিবেশ সংক্রান্ত আইনের নিয়ম লঙ্ঘনের বিষয়েই জানতে চাওয়া হচ্ছে। তা ছাড়া নিয়ন্ত্রক সংস্থা হিসেবে সংশ্লিষ্ট কনসোর্শিয়ামকে শো-কজ় করার পরিবর্তে পুরোটা জেনেও তারা চুপ করে থাকল। ফলে এই বেআইনি কাজে তারাও সমান অংশীদার।’’

আরও পড়ুন: ২৬ জানুয়ারি প্রস্তাবিত মসজিদের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন অযোধ্যায়, নজর কাড়ল নকশা

আরও পড়ুন: চিনকে ঘুরিয়ে ফের কড়া বার্তা প্রতিরক্ষামন্ত্রীর

পরিবেশমন্ত্রী সৌমেন মহাপাত্র অবশ্য নিজে উদ্যোগী হয়ে পুরো বিষয়টি খতিয়ে দেখার আশ্বাস দিয়েছেন। সৌমেনবাবুর কথায়, ‘‘আমরা ওই সংস্থাকে কোনও ছাড়পত্র দিইনি। কোনও আধিকারিকের গাফিলতি থাকলে অবশ্যই উপযুক্ত পদক্ষেপ করা হবে।’’

(চলবে)

Environmentalist Pollution control board Bio-Medical waste

সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:

Advertisement

আরও পড়ুন:

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy

এটি একটি প্রিন্ট আর্টিক্‌ল…

  • এমন অনেক খবরই এখন আপনার হাতের মুঠোয়

  • সঙ্গে রোজ পান আনন্দবাজার পত্রিকার নতুন ই-পেপার পড়ার সুযোগ

  • ই-পেপারের খবর এখন শুধুই ছবিতে নয়, টেক্সটেও

প্ল্যান সিলেক্ট করুন

মেয়াদ শেষে নতুন দামে আপনাকে নতুন করে গ্রাহক হতে হবে

Best Value
এক বছরে

৫১৪৮

১৯৯৯

এক বছর পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।
*মান্থলি প্ল্যান সাপেক্ষে
এক মাসে

৪২৯

১৬৯

এক মাস পূর্ণ হওয়ার পর আপনাকে আবার সাবস্ক্রিপশন কিনতে হবে। শর্তাবলী প্রযোজ্য।