প্রতীকী ছবি।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর ফুলবাগান থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত অংশে যাত্রী-পরিষেবা শুরুর অনুমতি দিয়েছেন রেলওয়ে সেফটি কমিশনার। তবে শর্তসাপেক্ষে। সেই শর্ত অনুযায়ী, বেশ কিছু খামতি নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে পূরণ করতে হবে। শুক্রবার সল্টলেকের সেন্ট্রাল পার্ক মেট্রো স্টেশনে এক অনুষ্ঠানে সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে মেট্রো রেলের ভারপ্রাপ্ত জেনারেল ম্যানেজার অরুণ অরোরা জানান, ১৫ এপ্রিলের মধ্যে যাত্রী-পরিষেবা চালুর চেষ্টা করছেন তাঁরা। তিনি জানান, বাংলা নববর্ষই যে উদ্বোধনের কাঙ্ক্ষিত সময়, তা রেলমন্ত্রী এবং রেল বোর্ডকে জানাতে চান তিনি। তবে, কবে যাত্রী-পরিষেবা শুরু হবে, তা নির্ভর করছে রেল বোর্ডের সম্মতির উপরে।
গত ১৬ এবং ১৭ মার্চ নর্থ ফ্রন্টিয়ার সার্কলের রেলওয়ে সেফটি কমিশনার মহম্মদ লতিফ খান ফুলবাগান থেকে শিয়ালদহ পর্যন্ত মেট্রোপথ এবং সংলগ্ন স্টেশন পরিদর্শন করেন। তার এক সপ্তাহের মধ্যেই শর্তসাপেক্ষে যে অনুমতিপত্র তিনি দিয়েছেন, তাতে বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পর্যবেক্ষণ রয়েছে। যাত্রী-সুরক্ষার প্রশ্নে বিভিন্ন ফাঁকফোকর চিহ্নিত করে ১০ পাতার একটি রিপোর্ট দিয়েছেন তিনি। ওই রিপোর্টে অগ্নি-নির্বাপণ ব্যবস্থা প্রসঙ্গে বলা হয়েছে, আপৎকালীন পরিস্থিতিতে দমকলকর্মীদের ঢোকা ও বেরোনোর জন্য পৃথক একটি পথ তৈরি করতে হবে। যাত্রীদের স্টেশনে ঢোকা ও বেরোনোর যে মূল রাস্তা, বর্তমানে তার খুব কাছেই রয়েছে ওই পথ। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে যাত্রীদের হুড়মুড়িয়ে বেরিয়ে আসার সময়ে কাছাকাছি থাকা পথ দিয়ে দমকলকর্মীদের ঘটনাস্থলে পৌঁছতে অসুবিধা হতে পারে বলে জানানো হয়েছে রিপোর্টে। দমকলকর্মীদের প্রবেশপথের দরজার চাবি স্টেশন মাস্টারের ঘরের বদলে কাচের বাক্সে ভরে কাছাকাছি রাখতে বলা হয়েছে। বেরোনোর সম্ভাব্য পথ স্পষ্ট ভাবে দেখাতে বাংলা, ইংরেজি ও হিন্দিতে উপযুক্ত মাপের সাইনেজ ব্যবহার করতেও নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। স্টেশনের কন্ট্রোল রুমে জরুরি পরিষেবার নম্বরের পাশাপাশি প্রাথমিক চিকিৎসার ব্যবস্থা রাখতেও বলা হয়েছে। আধুনিক প্রযুক্তি সম্পর্কে যথেষ্ট ওয়াকিবহাল এবং প্রশিক্ষিত কর্মীদেরই ট্রেন এবং স্টেশন পরিচালনার কাজে যুক্ত করার কথা বলা হয়েছে রিপোর্টে। আপৎকালীন পরিস্থিতিতে থার্ড রেলের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করার জন্য প্ল্যাটফর্মে ইমার্জেন্সি ট্রিপ সুইচ রয়েছে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয়। ওই সুইচের কাছে একটি টেলিফোন রাখতে নির্দেশ দিয়েছেন কমিশনার। যাতে যাত্রীরা স্টেশনের কন্ট্রোল রুম এবং অপারেশনাল কন্ট্রোলের সঙ্গে কথা বলতে পারেন।
এর পাশাপাশি, ভূমিকম্প হলে তার মাত্রা নির্ণয় এবং পরিস্থিতি অনুযায়ী কী ধরনের সুরক্ষামূলক ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তা ঠিক করতে মেট্রো কর্তৃপক্ষকে তিন মাস সময় দেওয়া হয়েছে। কম্পনের মাত্রা বেশি হলে পরিষেবা বন্ধ রেখে কী ভাবে নিকটতম স্টেশনে ট্রেন দ্রুত পৌঁছতে পারবে, তা-ও ঠিক করতে বলা হয়েছে।
লাইন রক্ষণাবেক্ষণের প্রশ্নেও বিশেষ সতর্কতা নিতে বলা হয়েছে রিপোর্টে। বাঁক রয়েছে, এমন অংশে চাকার ঘর্ষণজনিত ক্ষয় এড়াতে নিয়মিত গ্রিজ়িং করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। সুড়ঙ্গের মধ্যে বাঁকের অংশে গ্রিজ়িংয়ের স্বয়ংক্রিয় ব্যবস্থা করতে বলা হয়েছে। লাইনের প্রতিটি জোড় (ওয়েল্ডিং) ‘আল্ট্রাসনিক ফ্ল ডিটেকশন মেশিন’ দিয়ে পরীক্ষা করাতে নির্দেশ রয়েছে রিপোর্টে। রিপোর্টে সুড়ঙ্গের ক্রস প্যাসেজে রেলিংয়ের ব্যবস্থা করা ছাড়াও বলা হয়েছে, সুড়ঙ্গের এক পাশে আপৎকালীন পরিস্থিতির জন্য যে হাঁটার পথ রয়েছে, তার সাইনেজ যাতে সহজে চোখে পড়ে, তা দেখতে হবে। সুড়ঙ্গে বায়ু চলাচল নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থাকেও স্বয়ংক্রিয় করতে বলা হয়েছে। যাতে ধোঁয়ার উপস্থিতি নির্ণয় করে জরুরি সিদ্ধান্ত গ্রহণ সহজ হয়।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy