Advertisement
২৩ ডিসেম্বর ২০২৪
Coronavirus

পথেই আড়াই মাস, অবশেষে বাড়ি ফিরলেন প্রৌঢ়

কলকাতায় চিকিৎসা করাতে এসে সর্বস্ব খুইয়ে রাস্তাতেই ভবঘুরের মতো দিন কাটছিল বর্ধমানের উত্তম রায়ের।

উত্তম রায়

উত্তম রায়

নিজস্ব সংবাদদাতা
কলকাতা শেষ আপডেট: ১৩ সেপ্টেম্বর ২০২০ ০১:০১
Share: Save:

ভিডিয়ো কলে মোবাইলের স্ক্রিনে স্ত্রী ও ছেলেকে দেখা যেতেই আর বাঁধ মানল না চোখের জল। অঝোরে কাঁদতে শুরু করলেন প্রৌঢ়। প্রায় আড়াই মাস পরে পরিবারের সঙ্গে আবার দেখা! উল্টো দিকেও তখন একই ছবি।

কলকাতায় চিকিৎসা করাতে এসে সর্বস্ব খুইয়ে রাস্তাতেই ভবঘুরের মতো দিন কাটছিল বর্ধমানের উত্তম রায়ের। মানসিক ভাবে বিপর্যস্ত ওই প্রৌঢ়কে শেষমেশ উদ্ধার করে বাড়িতে পাঠানোর ব্যবস্থা করলেন বরাহনগরের এক যুবক ও তাঁর সঙ্গীরা। শুক্রবার বাবাকে বাড়ি নিয়ে গিয়েছেন ছেলে সুব্রত। তাঁর কথায়, ‘‘যাঁরা ওঁকে ফিরে পেতে সহযোগিতা করলেন, তাঁদের কোনও দিন ভুলব না।’’

গত বৃহস্পতিবার রাতে অফিস থেকে ফেরার পথে টবিন রোডে রাস্তার ধারে শীর্ণকায় ওই প্রৌঢ়কে বসে থাকতে দেখেন স্থানীয় বাসিন্দা সুমন কর। মাথা ভর্তি চুল, গাল ভর্তি দাড়ি, পরনে পোশাক নেই বললেই চলে। সুমন বলেন, ‘‘ওই প্রৌঢ়ের শরীর থেকে খুব দুর্গন্ধ বেরোচ্ছিল। তাই কেউ সামনে যাচ্ছিলেন না। কয়েকটি বাচ্চা ঢিলও ছুড়ছিল। সকলকে হটিয়ে ওঁকে নিজের পাড়ায় নিয়ে যাই।’’ সুমন জানান, অনেকেই ভয় দেখিয়েছিলেন যে, ওই প্রৌঢ় করোনায় আক্রান্ত হয়ে থাকতে পারেন। কিন্তু কারও কথায় আমল দেননি সুমন।

ওই রাতেই সুমন ও তাঁর সঙ্গীরা প্রৌঢ়ের চুল-দাড়ি কেটে তাঁকে স্নান করান। পরানো হয় জামাকাপড়। দেওয়া হয় নতুন গামছা ও মাস্ক। এর পরে খেয়েদেয়ে প্রৌঢ় জানান, তিনি মনোরোগী নন। তাঁর নাম উত্তম রায়। বয়স ৫৫-৫৭। রথের দিন কলকাতা মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এসেছিলেন চিকিৎসা করাতে। সে দিনই তাঁর মোবাইল, ব্যাগ সব চুরি হয়ে যায়। তার পর থেকে রাস্তাতেই ঘুরে বেড়িয়েছেন। কোনও ভাবে চলে এসেছিলেন বরাহনগরে। সুমন বলেন, ‘‘দীর্ঘ দিন খেতে না পেয়ে আর অবহেলায় মানসিক ভাবে ভেঙে পড়েছিলেন প্রৌঢ়। মাঝেমধ্যে ভুল বকছিলেন। বাড়ির ফোন নম্বরও বলতে পারছিলেন না।’’

তবে উত্তমবাবু কোনও ভাবে নিজের গ্রামের নাম ‘নলা’, বেলকাশ পঞ্চায়েত, বর্ধমান সদর থানা এবং ছেলে ও আত্মীয়ের নাম জানাতে পেরেছিলেন। এর পরে অভিনেতা তথা রাজ্য তৃণমূল যুব-র সহ সভাপতি সোহম চক্রবর্তীকে ফো‌ন করে বিষয়টি জানান সুমন। সোহম বলেন, ‘‘বর্ধমানের ওই থানাকে ঠিকানা ও তথ্য জানিয়ে অনুরোধ করি, পরিবারকে খুঁজে দিতে। ওই রাতেই খোঁজ মেলে।’’ ভিডিয়ো কলে স্ত্রী বন্দনা ও ছেলে সুব্রতের সঙ্গে কথা বলেন উত্তমবাবু। পরের দিন, শুক্রবার লকডাউন থাকলেও সোহমের সহযোগিতায় গাড়ি নিয়ে বরাহনগরে আসেন সুব্রতেরা। ফেরার সময়ে উত্তমবাবু বললেন, ‘‘আবার আসব। তোমরা খুব ভাল ছেলে।’’

অন্য বিষয়গুলি:

Coronavirus Lockdown Elderly Man Burdwan
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy