—প্রতীকী চিত্র।
মা মারা গিয়েছেন বছর পাঁচেক আগে। বাবা ছ’বছর ধরে রয়েছেন মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে। সোমবার দুপুরে ছাদ থেকে পড়ে গুরুতর জখম হলেন সেই পরিবারের ছোট ছেলে, ১৮ বছরের শুভম চক্রবর্তী। এই ঘটনায় ওই তরুণের দাদা ও বৌদিকে গ্রেফতার করেছে পুলিশ। প্রতিবেশীদের অভিযোগ, শুভমের পড়ে যাওয়ার পিছনে তাঁদের হাত থাকতে পারে। মাথায় চোট নিয়ে ওই তরুণ আর জি কর মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। তাঁর অবস্থা সঙ্কটজনক হলেও আপাতত স্থিতিশীল।
এ দিন সকালে ঘটনাটি ঘটে নাগেরবাজারের নয়াপট্টি এলাকায়। প্রতিবেশীদের অভিযোগের ভিত্তিতেই গ্রেফতার করা হয় দাদা কল্যাণ ও বৌদি প্রিয়াঙ্কাকে। কল্যাণ পুরসভার চুক্তিভিত্তিক কর্মী। তাঁদের বিরুদ্ধে খুনের চেষ্টার অভিযোগে মামলা রুজু করা হয়েছে। প্রতিবেশীরা জানান, এ দিন সকাল সাড়ে ৯টার কিছু পরে শুভমদের ফ্ল্যাটের চারতলার ছাদ থেকে ভারী কিছু পড়ার আওয়াজ হয়। দৌড়ে গিয়ে তাঁরা দেখেন, সিমেন্টে বাঁধানো চত্বরে শুভম পড়ে রয়েছেন। পড়শি দীপক পাল বললেন, “একতলায় দাঁড়িয়ে মোবাইলে কথা বলছিলাম। আচমকাই শুভমদের ফ্ল্যাটের পিছন দিক থেকে ভারী কিছু পড়ার আওয়াজ পাই। ছুটে গিয়ে দেখি, শুভম পড়ে রয়েছে।’’ এই ঘটনার পরেই শুভমের দাদা-বৌদিকে ঘিরে বিক্ষোভ শুরু করেন প্রতিবেশীরা। পুলিশ এসে ওই দম্পতিকে থানায় নিয়ে যায়। প্রতিবেশীদের অভিযোগ, শুভমকে একা পেয়ে তাঁর উপরে গত পাঁচ বছর ধরে অত্যাচার চালাচ্ছেন দাদা-বৌদি। শুভমের পড়ে যাওয়ার পিছনেও তাঁদের হাত রয়েছে বলে বিশ্বাস প্রতিবেশীদের।
শুভম ছাদ থেকে পড়ে গিয়েছেন, না তাঁকে ঠেলে ফেলা হয়েছে, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ। সূত্রের খবর, কল্যাণ দাবি করেছেন, ঘুড়ি ওড়াতে গিয়ে পড়ে যান শুভম। পুলিশ অবশ্য ছাদে গিয়ে লাটাই, ঘুড়ি, সুতো— কিছুই পায়নি। স্থানীয় বাসিন্দা রাধারানি দাস বললেন, “রান্না করা, ঘর মোছা, কাপড় কাচা থেকে শুরু করে বাড়ির সব কাজ শুভমকে দিয়েই করাত ওরা। সেই সঙ্গে চলত বেধড়ক মারধর। ওর পড়াশোনাও বন্ধ করে দিয়েছিল।” তাঁদের অভিযোগ, এ দিন সকালেই শুভমকে কোনও একটা বিষয় নিয়ে নাকে খত দেওয়ানো হয়েছিল।
আর এক প্রতিবেশী পূজা বিশ্বাস জানান, শুভম দাদা-বৌদিকে ভীষণ ভয় পেতেন। মার খাওয়ার ভয়ে কোনও কথার উত্তর দিতেন না। স্থানীয় দক্ষিণ দমদম পুরসভার ২১ নম্বর ওয়ার্ডের কোঅর্ডিনেটর সত্যব্রত সাঁতরা জানান, শুভমের উপরে অত্যাচারের বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দারা তাঁকে জানিয়েছেন। কিন্তু শুভম ভয়ে সে কথা কখনও স্বীকার করতেন না।
প্রতিবেশীরা জানান, যে চারতলা বহুতলে শুভম ও তাঁর পরিবারের বাস, সেখানে চারতলার ফ্ল্যাট ছাড়া আরও তিনটি ফ্ল্যাট ও দোকানঘর রয়েছে শুভমদের। সবটাই শুভমের বাবার নামে। সম্পত্তিঘটিত কারণেই এমন ঘটনা বলে অনুমান তাঁদের। পাড়ার লোকজনের আরও অভিযোগ, শুভমের বাবা শিবু চক্রবর্তীকে ছ’বছর ধরে বারাসতের একটি মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রে রেখে দেওয়া হয়েছে। কর্তৃপক্ষের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ। কিন্তু পরিবার থেকে তাঁকে বাড়ি ফিরিয়ে আনার ব্যাপারে কোনও আগ্রহ দেখানো হচ্ছিল না।
এ দিন ওই ঘটনার পরে প্রতিবেশীদের উদ্যোগে মানসিক চিকিৎসা কেন্দ্রের বিশেষ অনুমতি নিয়ে পাড়ায় আনা হয় শিবুবাবুকে। যদিও তাঁর ফ্ল্যাটে তালা লাগানো ছিল। শিবুবাবুও বলেন, “আমার বড় ছেলে ও বৌমা শুভমের উপরে খুব অত্যাচার করত। বার বার বলা সত্ত্বেও আমাকে হোম থেকে বাড়ি ফিরিয়ে আনছিল না।” এর পরে শিবুবাবু শুভমকে দেখতে আর জি করে যান।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy