Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
ED

Enforcement Directorate: প্রবীণদের ১৯০০ কোটি টাকা লুটের তদন্তভার এ বার ইডি-কে

তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রবীণ নাগরিকদের কাছ থেকে প্রায় ১৯০০ কোটি টাকা তুলেছে ওই সংস্থা।

ফাইল চিত্র।

শুভাশিস ঘটক
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ ডিসেম্বর ২০২১ ০৬:৫০
Share: Save:

প্রবীণ নাগরিকদের মোটা অঙ্কের সুদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে প্রায় ১৯০০ কোটি টাকা লুটের অভিযোগে কলকাতার একটি বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে মামলার তদন্তভার নিল এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি)। সম্প্রতি ওই সংস্থার মালিকদের বাড়ি ও অফিসে তল্লাশি অভিযান চালিয়ে নথি সংগ্রহ করেছে তদন্তকারী সংস্থা। তবে সুরানা গ্রুপ নামে ওই সংস্থার মালিকেরা পলাতক বলে ইডি সূত্রের খবর। আমানতকারীদের টাকা বিদেশে পাচার করা হয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে অনুমান করা হচ্ছে।

একাধিক অভিযোগের ভিত্তিতে মাস আটেক আগে আলিপুর আদালতের নির্দেশে ওই অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে তদন্তভার দেওয়া হয় রাজ্য সরকারের আর্থিক অপরাধ দমন শাখাকে। কিন্তু মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও সেই তদন্তের কোনও অগ্রগতি হয়নি বলে অভিযোগ তুলেছেন আমানতকারীদের আইনজীবীরা। এর পরেই মাস তিনেক আগে দিল্লি সদর দফতরে মামলা দায়ের করে তদন্ত শুরু করেছে ইডি।

তদন্তকারী সংস্থা সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০০৮ থেকে ২০১৮ পর্যন্ত প্রবীণ নাগরিকদের কাছ থেকে প্রায় ১৯০০ কোটি টাকা তুলেছে ওই সংস্থা। কোনও আমানতকারীকেই সুদ সমেত টাকা ফেরত দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ। কলকাতা শহরের প্রায় দশটি থানায় ওই বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি অভিযোগ দায়ের হয়। এমনকি, আলিপুর আদালত-সহ বিচার ভবনে সিবিআইয়ের বিশেষ আদালতেও মামলা দায়ের করা হয়েছিল।

অভিযোগ, প্রবীণ নাগরিকদের টাকা পাঁচ বছরে দ্বিগুণ ফেরত দেওয়া হবে বলে প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছিল সংস্থার তরফে। প্রাথমিক পর্যায়ে কয়েক জনকে মাসিক হারে সুদ দেওয়া হয়। ওই সুদের টাকা বিনিয়োগ করলে আরও বেশি পরিমাণে সুদ দেওয়া হবে বলে ফের এজেন্ট মারফত বিনিয়োগ করানো হয় বলে অভিযোগ।

আমানতকারীদের আইনজীবী প্রশান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘অসহায় প্রবীণ নাগরিকেরা বিভিন্ন রাষ্ট্রায়ত্ত ও বেসরকারি ব্যাঙ্কের থেকে অনেক বেশি হারে সুদ পাবেন বলে ওই বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থায় টাকা বিনিয়োগ করেছিলেন। জীবনের শেষ লগ্নের সব সঞ্চয় বিনিয়োগ করেছিলেন প্রবীণ নাগরিকেরা। এখন তাঁরা সর্বস্বান্ত।’’ প্রশান্তবাবু কথায়, ‘‘কয়েক হাজার প্রবীণ নাগরিকের টাকা লুট করা হয়েছে। সে ক্ষেত্রে আদালতের নির্দেশ থাকা সত্ত্বেও রাজ্য আর্থিক অপরাধ দমন শাখা গুরুত্ব দিয়ে তদন্তই করেনি। সেই জন্যই কেন্দ্রে তদন্তকারী সংস্থা এনফোর্সমেন্ট ডিরেক্টরেট (ইডি) মামলার তদন্ত শুরু করেছে।’’

সম্প্রতি বালিগঞ্জ এলাকায় ওই বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার কর্তাদের বাড়িতে হানা দিয়েছিলেন ইডি-র তদন্তকারীরা। কিন্তু তাঁরা পলাতক। ওই সংস্থার কয়েক জন হিসাবরক্ষক ও আধিকারিককে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য নোটিস জারি করে দিল্লির সদর দফতরে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইডি-র এক শীর্ষকর্তা। কেন্দ্রীয় গোয়েন্দা সংস্থার কর্তাদের কথায়, ওই বেআইনি অর্থলগ্নি সংস্থার সঙ্গে রাজ্যের কয়েক জন প্রভাবশালী পুলিশকর্তার যোগ রয়েছে বলে প্রাথমিক তদন্তে উঠে এসেছে। বর্তমানে তদন্তের দ্রুত অগ্রগতি হচ্ছে বলে ইডি সূত্রের দাবি। সংস্থার হিসাবরক্ষক ও আধিকারিকদের জিজ্ঞাসাবাদের পরে প্রভাবশালী যোগ ও বিদেশে আমানতকারীদের টাকা কী ভাবে পাচার করা হয়েছে, তা স্পষ্ট হবে।

তদন্তকারীদের দাবি, আমানতকারীদের টাকা বিভিন্ন ব্যবসায় বিনিয়োগ করা হয়েছিল। তা ছাড়া, ওই টাকা দিয়ে সম্পত্তি কেনা হয়েছিল। পরে ওই সব সম্পত্তিও বিক্রি করে দেওয়া হয়েছে। সংস্থার মালিকদের কয়েক জন বিদেশে পালিয়ে গিয়ে থাকতে পারেন বলেও অনুমান করছেন তদন্তকারীরা।

আইনজীবী প্রশান্ত মজুমদার বলেন, ‘‘আদালতের নির্দেশ সত্ত্বেও রাজ্য আর্থিক অপরাধ দমন শাখার ঢিলেমিতেই অভিযুক্ত সংস্থার মালিকেরা পালিয়েছেন বলে মনে হচ্ছে।’’ তদন্তের ধীরগতির জন্য আদালতের তরফে একাধিক বার রাজ্য আর্থিক অপরাধ দমন শাখার তদন্তকারী অফিসারদের ভর্ৎসনাও করা হয়েছিল। কিন্তু তা সত্ত্বেও তদন্তের অগ্রগতি হয়নি বলে অভিযোগ। রাজ্য আর্থিক অপরাধ দমন শাখার তদন্তকারী অফিসারদের দাবি, থানায় এবং আদালতে অভিযোগ জমা পড়ার পরেই ওই সংস্থার মালিকেরা বেপাত্তা হয়ে গিয়েছিলেন। এখনও তাঁদের খোঁজ করা হচ্ছে।

অন্য বিষয়গুলি:

ED Old Man
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy