ঘুরছে অতিকায় চাকা। ধুলোঝড়ের মধ্যে কংক্রিটের দেওয়াল ফুঁড়ে উপরে উঠছে ‘ঊর্বী’।
ঘড়ির কাঁটায় বিকেল ৪টে ১০ মিনিট। নির্মীয়মাণ শিয়ালদহ স্টেশনের কংক্রিটের দেওয়াল ফুঁড়ে বেরিয়ে আসতে দেখা গেল অতিকায় উর্বীকে। প্রায় ধুলোর ঝড় উড়িয়ে উর্বী যখন থামল, তখন চারপাশে যুদ্ধ জয়ের উল্লাস। কিছু পরে টানেল বোরিং মেশিনের (টি বি এম) ‘কাটার হেডের’ (সামনের অংশ) ফাঁক গলে একে একে বেরিয়ে এলেন সুড়ঙ্গ নির্মাণের কাজে যুক্ত কর্মীরা। এ ভাবেই শুক্রবার সুড়ঙ্গের শেষে আলো দেখিয়ে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোয় পরীক্ষা পাশের স্বস্তি আনল উর্বী।
গত বছর ফেব্রুয়ারি মাসে এসপ্লানেড থেকে যাত্রা শুরু করে নানা ঝড়ঝাপ্টা সামলে অবশেষে শুক্রবার বিকেলে ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর পূর্বমুখী সুড়ঙ্গের কাজ শেষ করল উর্বী। গত বছর ৩১ অগস্ট বৌবাজারের বিপত্তির কারণে পাশের পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গে টি বি এম চণ্ডীর গতি আটকে যায়। দুর্ঘটনায় একাধিক বাড়ি ভেঙে পড়ায় পুরো প্রকল্পের ভবিষ্যৎ নিয়েই সংশয় দেখা দিয়েছিল। সাময়িক ভাবে বন্ধ করে দিতে হয় দু’টি সুড়ঙ্গের খনন।
প্রায় ছ’মাস থমকে থাকার পরে উচ্চ আদালতের নজরদারিতে মাদ্রাজ আইআইটি-র তত্ত্বাবধানে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি থেকে ফের শুরু হয় পূর্বমুখী সুড়ঙ্গ খনন। অতি সতর্কতা নিয়ে কাজ শুরু করার মাঝেই এসে পড়ে দেশ জুড়ে লকডাউন। গত মে মাসের তৃতীয় সপ্তাহে ফের কাজ শুরু হওয়ার কিছু দিনের মধ্যেই কর্মী ও আধিকারিকদের একাংশ করোনায় সংক্রমিত হয়ে পড়েন। এর ফলে আবার বন্ধ করে দিতে হয় কাজ। এ সবের মধ্যেই পেরোতে হয়েছে বৌবাজারের বিপত্তিস্থল এবং একাধিক জীর্ণ বাড়ি। যে কারণে এসপ্লানেড থেকে পূর্বমুখী সুড়ঙ্গের শিয়ালদহে পৌঁছনো মেট্রো কর্তৃপক্ষের কাছে কার্যত সুড়ঙ্গের শেষে আলো দেখার মতোই স্বস্তি বয়ে এনেছে।
ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর পূর্বমুখী সুড়ঙ্গ খননের পরীক্ষায় ‘লেটার মার্কস’ নিয়ে পাশ করল ‘উর্বী’
যাত্রা শুরু করার পরে উত্তর-দক্ষিণ মেট্রোর সুড়ঙ্গের নীচ দিয়ে পেরোতে হয়েছে উর্বীকে। তার পরে ‘ইনফ্লুয়েন্স জো়নে’ ৬৭০টি বাড়ির নীচ দিয়ে শিয়ালদহে বিদ্যাপতি সেতু পেরোতে হয়েছে উর্বীকে। এ দিন পূর্বমুখী সুড়ঙ্গের কাজ সম্পূর্ণ হওয়ায় হাওড়া ময়দান থেকে সেক্টর ফাইভ পর্যন্ত ইস্ট-ওয়েস্ট মেট্রোর সম্পূর্ণ পথ এই প্রথম সংযুক্ত হল। নথি বলছে, একশো বছর আগেই শিয়ালদহের সঙ্গে হাওড়াকে পাতালপথে জোড়ার কথা ভাবা হয়েছিল। এত বছরে তা বাস্তবায়িত হল।
এ দিন বিকেল ৩টে বাজতেই মেট্রোর কর্মী, আধিকারিক, এবং সংবাদমাধ্যমের প্রতিনিধিরা শিয়ালদহ স্টেশনে ভিড় জমিয়েছিলেন উর্বীর লক্ষ্যে পৌঁছনোর সাক্ষী থাকতে। সেই সময়েই অবশিষ্ট পথ অতিক্রম করার লক্ষ্যে ছোটা শুরু করে টি বি এম। লক্ষ্য জয়ের পরে টি বি এম অপারেটর নিমাই সংগ্রাম কিংবা শিফট ইঞ্জিনিয়ার আবীর মিত্রের চোখে তখন সুড়ঙ্গের শেষে আলো দেখার উচ্ছ্বাস।
২০২১-এ প্রকল্পের কাজ শেষ করার সময়সীমা ঠিক হয়েছে। ৮,৫৭৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছে কেন্দ্র।
এ দিন সুড়ঙ্গ নির্মাণ সংস্থার আধিকারিক রূপক সরকার আশ্বাস দেন, “আগামী জানুয়ারিতে বৌবাজার অভিমুখে পশ্চিমমুখী সুড়ঙ্গ নির্মাণ শুরু করতে পারে উর্বী।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy