প্রার্থনা: সভ্যতা ও প্রকৃতির ভারসাম্য রক্ষার মাধ্যমে পৃথিবীকে বাঁচানোর আর্জি লালাবাগান সর্বজনীনের পুজোয়। নিজস্ব চিত্র
বাঁশের কাঠামোর উপরে ত্রিপল পড়েছে সবে। কমিটির সদস্যদের নিয়ে জরুরি বৈঠক ডাকলেন কুমোরটুলি সর্বজনীনের পুজোকর্তা কালাচাঁদ রায়। ঘর-ভর্তি লোকের সামনে বললেন, ‘‘মণ্ডপ যা হয়েছে, এই পর্যন্তই থাকবে। এর পরে আর কোনও কাজ হবে না। যেটুকু কাজ হয়েছে, সেটুকুরই টাকা দেব। পুজোর জন্য ওঠা বাকি সব টাকা পাঠানো হবে বন্যাত্রাণে।’’
১৯৭৮ সালে পুজোর মুখে বন্যার স্মৃতি মনে করতে গিয়ে কথাগুলো বললেন কুমোরটুলি সর্বজনীনের কর্তা দেবাশিস ভট্টাচার্য। সে বার বন্যায় জলের তলায় চলে যায় কলকাতা-সহ রাজ্যের প্রায় সব জেলা। বহু মানুষ এসে আশ্রয় নেন শহরের অপেক্ষাকৃত উঁচু জায়গাগুলিতে। টানা বৃষ্টিতে বন্ধ হয়ে যায় শহরের বেশ কিছু ছোট পুজো। প্রায় সমস্ত বড় পুজোই আয়োজন কমিয়ে বন্যাত্রাণে প্রচুর দান করে। এ বছরেও বন্যায় ঘর ভেসেছে লক্ষাধিক মানুষের। তাঁরা ত্রিপলের তলায় রাত কাটাচ্ছেন। কিন্তু তা নিয়ে কি আদৌ ভাবেন এখনকার পুজোকর্তারা? দেবাশিসবাবু বললেন, ‘‘মনে আছে কালাচাঁদবাবুর সেই কথা— পশ্চিমবঙ্গ ডুবছে, আর আমরা উৎসব করব! এখন আমরা সুন্দরবনের দুর্গতদের পাশে দাঁড়াতে সেখানে গিয়ে দুর্গাপুজো করি। কিন্তু সেই দায়বদ্ধতা কোথায়? পুজো বড় থেকে আরও বড় করার প্রতিযোগিতাই খবর।’’
সমাজসেবী সঙ্ঘের এক সময়ের পুজোকর্তা পরেশনাথ মুখোপাধ্যায় বললেন, ‘‘মনে আছে, সে বার চার দিকে জল। বহু পুজো কমিটি ষষ্ঠীর দিন পর্যন্ত শেষ মুহূর্তের কাজ করেছে। তার পরে পুজোর মধ্যেও টানা বৃষ্টি, ঝোড়ো হাওয়া। মণ্ডপই উড়ে যাচ্ছিল। আমরা কয়েক জন শক্ত করে বাঁশ ধরে বৃষ্টিতে দাঁড়িয়ে ছিলাম।’’ সত্তরোর্ধ্ব বললেন, ‘‘সে বার পুজোর খরচ কমিয়ে বন্যাত্রাণে প্রচুর সাহায্য পাঠানো হয়েছিল। সমাজের প্রতি সেই দায়িত্ব এখনও পালন করি আমরা।’’
একডালিয়া এভারগ্রিনের পুজোকর্তা তথা রাজ্যের মন্ত্রী সুব্রত মুখোপাধ্যায় আবার বললেন, ‘‘তখন আমাদের সরকার সবে যাচ্ছে। পুজোর আয়োজন একেবারে কমিয়ে দুর্গতদের জন্য ঝাঁপিয়ে পড়ি। তখন আমি বিবাহিত। সে বার পুজোর পোশাকও কেনা হয়নি। কিন্তু এ বারের বন্যার দায় প্রকৃতির নয়। এটা মানুষের তৈরি।’’
বাগবাজার সর্বজনীন দুর্গোৎসব ও প্রদর্শনীর বর্ষীয়ান পুজোকর্তা অভয় ভট্টাচার্য জানালেন, প্রবল বৃষ্টিতে রাতভর মণ্ডপ পাহারা দিয়ে ভোরের দিকে একটি বইয়ের স্টলের ত্রিপলের নীচে ঘুমিয়ে ছিলেন তাঁরা। মণ্ডপ বাঁচানো গেলেও মাঠ কাদায় ভরে ওঠে। বাগবাজার থেকে ওই বছর বন্যাত্রাণে যে জামাকাপড় দেওয়া হয়েছিল, তা এখনও চলছে দরিদ্রদের পোশাক বিতরণের মাধ্যমে।
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy