মুখ ঢেকেছে..: টানা বৃষ্টি থেকে বাঁচতে প্লাস্টিকা ঢাকা রয়েছে প্রতিমা। বৃহস্পতিবার কুমোরটুলিতে। ছবি: বিশ্বনাথ বণিক।
পুজোর বাকি আর মাসখানেক। তার আগে মেঘের ‘মেজাজ’ দেখে মাথাব্যথা শুরু হয়েছে কুমোরটুলির। বর্ষাসুরের তাণ্ডবে কার্যত সূর্যের দেখা মিলছে না। ফলে কয়েক দিন ধরে মেঘ-বৃষ্টির লুকোচুরিতে কুমোরটুলির চেনা ব্যস্ততা খানিক উধাও। পরিস্থিতি এমনই যে, আবহাওয়ার সঙ্গে লড়াই করে সময়ে প্রতিমা আদৌ মণ্ডপে পাঠানো যাবে কি না, সেই চিন্তাই এখন ঘুরপাক খাচ্ছে কুমোরটুলির অন্দরে।
ওড়িশা উপকূল সংলগ্ন বঙ্গোপসাগরে ঘূর্ণাবর্ত ও নিম্নচাপের জেরে কলকাতা-সহ দক্ষিণবঙ্গের একাধিক জেলায় বৃষ্টি শুরু হয়েছে। বৃহস্পতিবার সকাল থেকে বৃষ্টির দাপটও বেড়েছে কয়েক গুণ। আগামী কয়েক দিন আবহাওয়ার বড়সড় কোনও পরিবর্তনের আভাস দিতে পারেনি হাওয়া অফিস। তাই মহালয়ার মাসখানেক আগে আবহাওয়ার এই মতিগতি শিল্পীদের কপালে চিন্তার ভাঁজ ফেলেছে। দিন-রাত এক করে কাজ এগোনোর বদলে বৃষ্টির হাত থেকে সদ্য মাটির প্রলেপ দেওয়া প্রতিমা বাঁচাতে প্লাস্টিকের আড়াল দেওয়ার লড়াই করতে হচ্ছে। এ দিন কুমোরটুলিতে গিয়ে দেখা গেল, সারি সারি প্রতিমা সবই প্রায় প্লাস্টিকের আড়ালে। শিল্পীরা থাকলেও চেনা ব্যস্ততা উধাও। ঘরের উপরের ছাউনি দিয়ে বৃষ্টির জল পড়া আটকাতে আটকাতেই মৃৎশিল্পী বিপ্লব পাল বললেন, ‘‘এখন তো আমাদের নাওয়া-খাওয়ার সময় থাকারও কথা নয়। কিন্তু তা না-করে বৃষ্টি থেকে প্রতিমা বাঁচাতে দৌড়োদৌড়ি করছি। এমনিতে মহালয়ার আগে থেকেই প্রতিমার মণ্ডপে যাওয়া শুরু হয়ে যায়। কিন্তু আবহাওয়া এমন থাকলে কী করে প্রতিমা পাঠাব, জানি না।’’
কুমোরটুলির শিল্পীরা জানাচ্ছেন, একটি বড় প্রতিমায় মাটির প্রলেপ দেওয়ার পরে তা শুকোতেই লাগে ১০-১৫ দিন। এর পরে রং, সাজসজ্জার পালা। কিন্তু টানা বৃষ্টি হলে প্রতিমার গায়ের মাটি শুকোতেই আরও সপ্তাহখানেক বেশি সময় লাগে। চড়া রোদ না পেলে সব জায়গার মাটি শক্ত হয় না। কিন্তু গত কয়েক দিন ধরে বৃষ্টির কারণে কাজ এগোতেই হিমশিম খেতে হচ্ছে শিল্পীদের। মৃৎশিল্পী বাবুন পাল প্রতিমার গায়ে দেওয়া মাটির প্রলেপে হাত দিয়ে বলেন, ‘‘এই দেখুন, আঙুল ঢুকে যাচ্ছে। দিন পাঁচেক ধরে এ ভাবেই রয়েছে। ব্লু-ল্যাম্প দিয়েও কাজ হচ্ছে না। কাজ এগোব কী করে!’’ শিল্পী মন্টু পাল বলছেন, ‘‘আবহাওয়া দেখে মুর্শিদাবাদ থেকে কয়েক জন কর্মীকে তড়িঘড়ি আনানোর চেষ্টা করছি। এ যা অবস্থা, তাতে যে ক’দিন সময় পাব, তখন রাত-দিন এক করে কাজে নামতে হবে। না-হলে মহালয়ায় প্রতিমা মণ্ডপে পাঠানোর মতো অবস্থায় থাকব না।’’
আবহাওয়ার পাশাপাশি এ বছর বিশ্বকর্মা এবং গণেশ পুজো পর পর থাকায় কুমোরটুলির সমস্যা আরও কয়েক গুণ বেড়েছে। এই অবস্থায় নিম্নচাপের বৃষ্টি যেন ‘খাঁড়ার ঘা’! শিল্পী বিশ্বনাথ পাল বলেন, ‘‘এ যেন অসম লড়াই। শেষে ‘ফিনিশ’ দিতে পারলেই হল।’’
Or
By continuing, you agree to our terms of use
and acknowledge our privacy policy
We will send you a One Time Password on this mobile number or email id
Or Continue with
By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy