Advertisement
২২ নভেম্বর ২০২৪
Rare Disease

Rare Diseases Treatment: সদিচ্ছা ও সমন্বয়ের অভাবেই রাজ্যের ভাবনায় ব্রাত্য বিরল রোগে আক্রান্তেরা

বিরল রোগ নিয়ে কেন্দ্র একটি কমিটি তৈরি করেছিল। পাশাপাশি, প্রতিটি রাজ্যকে এই রোগের জন্য কমিটি তৈরির কথাও বলেছিল।

ফাইল ছবি

প্রদীপ মিত্র
কলকাতা শেষ আপডেট: ২৭ অগস্ট ২০২২ ০৭:২৪
Share: Save:

তখন আমি রাজ্যের মেডিক্যাল এডুকেশনের ডিরেক্টর (ডিএমই)। রাজ্য সরকারের হয়ে বোঝানোর চেষ্টা করছিলাম, বিরল রোগের চিকিৎসার বিপুল খরচ কী ভাবে আমাদের সরকারের পক্ষে মেটানো সম্ভব! বেশ কিছু বাচ্চার প্রত্যেকের জন্য বছরে কম-বেশি কোটি টাকা করে দীর্ঘদিন ওই খরচ সরকার কোথা থেকে জোগাবে? যা শুনে বিরল রোগে আক্রান্ত এক শিশুর মায়ের জিজ্ঞাসা ছিল, ‘‘আমরা তো ১০০ শতাংশ দিলাম। দেশের এই ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য সরকার কত শতাংশ দেবে?’’ উত্তর দিতে পারিনি। কিন্তু তাঁর সেই প্রশ্ন প্রশাসনিক কর্তা হিসেবে বিরল রোগ নিয়ে ভাবনায় বদল এনেছিল। গর্ভস্থ শিশুর বিরল রোগ আছে কি না, তার স্ক্রিনিং এখনও প্রোটোকল শিডিউলে নেই। ফলে ভাবী সন্তান বিরল রোগী কি না, সেটা জানার উপায় তো নেই।

বিরল রোগ নিয়ে কেন্দ্র একটি কমিটি তৈরি করেছিল। পাশাপাশি, প্রতিটি রাজ্যকে এই রোগের জন্য কমিটি তৈরির কথাও বলেছিল। সম্ভবত বছর পাঁচেক আগে এ রাজ্যে বিরল রোগের কমিটি গঠিত হয়। আমি ডিএমই থাকাকালীন কমিটির বৈঠক হয় বার দুয়েক। বিভিন্ন ক্ষেত্রের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সঙ্গে বৈঠকে আলোচনা হয়েছিল, বিরল রোগীদের যে যে সাপোর্ট সিস্টেম দরকার, তা সরকারি স্তরে দেওয়ার ব্যবস্থা হোক। শহরের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে এক-একটি বিভাগে ওদের জন্য বরাদ্দ থাকুক নির্দিষ্ট দিন। মনে করা যাক, সপ্তাহের বা মাসের কোনও নির্দিষ্ট দিনে বিরল রোগীদের লিভার সংক্রান্ত সমস্যা দেখবে এসএসকেএম। কারণ, আর পাঁচটা রোগীর মতো দীর্ঘ প্রতীক্ষা করে ডাক্তার দেখানোর স্বাস্থ্য ওদের থাকে না। শারীরিক প্রতিবন্ধকতা ছাড়াও রোগ প্রতিরোধের ক্ষমতা ওদের খুব কম থাকে। যে হেতু প্রয়োজনীয় পরিকাঠামো আছে, তাই শহরের মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালগুলিতেই সেই ব্যবস্থা হোক। এমন প্রস্তাব বৈঠকে ওঠার পরে আর্থিক সহায়তার জন্য ফাইল পাঠানো হয় ‘ন্যাশনাল হেলথ মিশন’-এ। উৎসাহিত হয়ে রোগীদের অভিভাবকেরাও পরামর্শ দিয়েছিলেন তখন। আমি থাকতে ওই ফাইলের কোনও নড়াচড়া দেখিনি। শুনেছি, সেই কমিটি কার্যত শীতঘুমে গিয়েছে।

এই কমিটিগুলি থাকে ডিরেক্টর অব হেলথ সার্ভিসের (ডিএইচএস) অধীনে। প্রশাসনে থাকার অভিজ্ঞতা থেকে বুঝেছি, স্বাস্থ্য ক্ষেত্রের কাজে গতি আনতে ডিএইচএস এবং ডিএমই — এই দুই বিভাগের মধ্যে কাজে যতটা সমন্বয় জরুরি, তা মোটেও নেই। বিরল রোগ নিয়ে রাজ্যের যেটুকু করা সম্ভব ছিল, প্রশাসনিক সদিচ্ছার অভাবে সেটুকুও হয়নি।

এই শহরের একটি বেসরকারি হাসপাতালে বিরল রোগীদের স্ক্রিনিং করা এবং দেখার জন্য ক্লিনিক চলে। অথচ, যথেষ্ট পরিকাঠামো থাকা সত্ত্বেও রাজ্যের সরকারি হাসপাতাল এ ক্ষেত্রে ঠুঁটো। বিরল রোগ স্পাইনাল মাস্কুলার অ্যাট্রফির জন্য কিন্তু এ বছর থেকেই সরকারি ক্লিনিক চালু করেছে কেরল সরকার। সেখানে আমাদের নিষ্ক্রিয়তাই প্রমাণ করে পরিকাঠামোকে বিভিন্ন ভাবে কাজ লাগানোয় আমরা কতটা ব্যর্থ।

বিরল রোগের ওষুধের বিপুল খরচ বহন রাজ্য বা কেন্দ্র সরকারের পক্ষে অসম্ভব, এটা ঠিক। কিন্তু কেন্দ্রের মতামতে তৈরি ‘ক্রাউড ফান্ডিং’-এর অবস্থা কী? কেউ জানেনই না। কেন্দ্র ও রাজ্য সরকার, কেউই এ নিয়ে ভাবিত নয়। যদি ভাবা হত, তা হলে ‘ক্রাউড ফান্ডিং’-এর সঙ্গে সরকারের নাম জুড়ে প্রচার করা হত। তা হলে দেশ-বিদেশের বহু মানুষ নির্দ্বিধায় দান করতেন। বিভিন্ন বড় সংস্থার কর্পোরেট সোশ্যাল রেসপন্সিবিলিটি (সিএসআর) ফান্ড রয়েছে। সেখান থেকেও বিরল রোগের ক্রাউড ফান্ডিং-এ টাকা জমা করাতে সরকারের ভূমিকা বেশি জরুরি।

রক্তের ক্যানসারের অনেকগুলি ধরনের একটি হল ক্রনিক মাইলয়েড লিউকেমিয়া। দশ বছর আগেও ওই রোগে আক্রান্তের মৃত্যু প্রায় অবধারিত ছিল। অস্থিমজ্জা প্রতিস্থাপনেই সুস্থ হওয়ার একমাত্র সম্ভাবনা ছিল। এখন সেই রোগ ওষুধেই সারছে। বিরল রোগের গবেষণায় তাঁদের ভূমিকা পালন করছেন গবেষকেরা। কিন্তু কেন্দ্র-রাজ্য প্রশাসনের কী ভূমিকা? ছোট ছোট অসহায় মুখের দিকে তাকিয়েও ঠান্ডা ঘরে কমিটির বৈঠকেই কি সীমাবদ্ধ থেকে যাবে সেই ভূমিকা?

(প্রাক্তন স্বাস্থ্য-শিক্ষা অধিকর্তা)

অনুলিখন: জয়তী রাহা

অন্য বিষয়গুলি:

Rare Disease Hospital
সবচেয়ে আগে সব খবর, ঠিক খবর, প্রতি মুহূর্তে। ফলো করুন আমাদের মাধ্যমগুলি:
Advertisement

Share this article

CLOSE

Log In / Create Account

We will send you a One Time Password on this mobile number or email id

Or Continue with

By proceeding you agree with our Terms of service & Privacy Policy